নাগরিক রিপোর্ট:
বরিশাল জেলা জাতীয় পার্টির আহবায়ক ও সিটি কাউন্সিলর এ.কে.এম মর্তুজা আবেদীনের ওপর হামলা করে আবারও আলোচনায় এসেছেন মহানগর শ্রমিক লীগের সাধারন সম্পাদক রইজ আহমেদ মান্না। তিনি বিদায়ী সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর ঘনিস্ঠ সহচর। নগরীতে নানা কারনে সমালোচিত ছিলেন মান্না। রোববার বেলা ১২টার দিকে নগরীর পোর্ট রোডে মর্তুজা আবেদীনকে মারধর করে তার লাইসেন্স করা রিভলবার ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন মান্না। ঘটনা ভিন্নখাতে নিতে তাকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ তোলা হলেও সত্যতা পাওয়া যায়নি। এ ঘটনা সামাজিক যোগাযাগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে গোটা নগরীতে হৈচৈ পড়ে যায়। এদিকে কোতয়ালী পুলিশ মতুর্জাকে উদ্ধার করে তার রিভলবারটি জব্দ করলেও প্রকাশ্যে হামলার ঘটনায় মান্নার বিরুদ্ধে কেন আইনী পদক্ষেপ নেয়নি বলে জানা গেছে।
গত ১২ জুনের নির্বাচনে ২ নম্বর ওয়ার্ডে টানা ৫ বার নিবাচিত কাউন্সিলর মতুর্জার বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়েছিলেন তখনকার মহানগর ছাত্রলীগ আহ্বায়ক মান্না। নৌকার বিরোধীতা ও কর্মীদের মারধর করার অভিযোগে মনোনয়নপত্র দাখিলের আগে তিনি গ্রেপ্তার হন। তার মনোনয়পত্র বাতিল হলে ভাই মুন্না প্রার্থী হয়ে জাপা নেতা মর্তুজাকে পরাজিত করেন। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মান্না ও মর্তুজার বিরোধ প্রকাশ্যে আসে।
কাউন্সিলর মর্তুজা আবেদীন জানান, পারিবারিক জমিজমা সংক্রান্ত বিষয়ে তিনি রোববার পোর্ট রোড ভূমি অফিসে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে বের হয়ে প্রধান ফটকে যাওয়ার সময় আগে থেকে অপেক্ষামান মান্না ও তার সহযোগীরা আকস্মিক তার উপর হামলা করে। এসময় পকেটে থাকা রিভলভার ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। তিনি দৌড়ে একটি ইজিবাইকে ওঠলে মান্না ও তার সহযোগীরা তাকে জাপটে ধরে মারধর ও রিভলভার ছিনিয়ে নেয়ার চেস্টা করে। এক পযায়ে ঘটনাস্থলে থাকা ট্রাফিক পুলিশ এসে তাকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।
তবে রইজ আহম্মেদ মান্না বলেন, তিনিও ব্যক্তিগত কাজে ভূমি অফিসে গিয়েছিলেন। মতুর্জার সঙ্গে তার দেখা হলে পেছন থেকে তাকে অশ্রব্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয়। রিভলভার বের করে হত্যাচেষ্টা চালায় মর্তুজা। তখন জনতা মর্তুজাকে আটক করে।
কি হয়েছিল ভুমি অফিসেঃ
মান্না ও মর্তুজার ঘটনার একাধিক ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এতে দেখা যায় মান্না ভূমি অফিসের প্রধান ফটকে সড়কে কয়েকজন সহযোগীসহ অপেক্ষায় ছিলেন। কাউন্সিলর মর্তুজা বের হওয়ার পরই তার পথরোধ করে নির্বাচনকালীন বিভিন্ন ঘটনা তুলে গালাগাল শুরু করেন মান্না। একপর্যায়ে মর্তুজাকে মারধর শুরু হয়। মর্তুজা দৌড়ে একটি ইজিবাইকে ওঠে সরে যাওয়ার চেষ্টা করেন। মান্না ও তার এক সহযোগী ইজিবাইকের মধ্যে ঢুকে মর্তুজাকে জাপটে ধরে রিভলভার ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। তখন মান্নাকে বার বার বলতে শোনা যায়, ‘রিভলবার দিয়ে তাকে গুলি করার চেষ্টা করেছিল’।
কোতোয়ালী মডেল থানার ওসি আনোয়ার হোসেন বলেন, কাউন্সিলর মুর্তজাকে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে থানায় নিরাপত্তা হেফাজতে রাখা হয়েছিল। বিকালে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে অস্ত্রটি জব্দ করা হয়েছে। কোন পক্ষ থানায় অভিযোগ দেয়নি। ঘটনাস্থলের ভিডিও ফুটেজ দেখে প্রকৃত ঘটনা যাচাইবাছাই চলছে।
এ প্রসঙ্গে নবনিবাচিত মেয়র আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবত বলেন, সাধারন মানুষ আমাকে ভোট দিয়েছে শান্তময় নগর সৃস্টিতে । এই নগরে কেন গুন্ডামি কমকান্ড হতে দেয়া যাবে না। যে অপরাধী তাকে শাস্তি পেতেই হবে। তিনি পুলিশ প্রশাসনের প্রতি্ আহবান জানিয়ে বলেছেন, বরিশাল নগরের শান্তিশৃংখলা রক্ষায় প্রশাসন কঠোর ব্যবস্থা নিবে বলে আশা রাখি।
কে এই মান্নাঃ
জানা গেছে, ২০১৪ সালের দিকে সাদিকবিরোধীদের ওপর হামলায় সম্মুখভাবে থাকতেন মান্না। এসব কর্মের পুরস্কার হিসাবে মান্নাকে বরিশাল বাস মালিক সমিতির নির্বাহী সদস্য পদ দিয়ে নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের নিয়ন্ত্রক এবং গতবছর ২২ জুলাই মহানগর ছাত্রলীগের আহ্বায়ক পদ দেওয়া হয়। গত জুনে অনুষ্ঠিত সিটি নির্বাচনে নৌকার বিরোধীতা করার অভিযোগে মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত হয়। আবুল খায়ের আবদুল্লাহ মেয়র নির্বাচিত হলে বাস টার্মিনাল থেকে উৎখাত হন মান্না। গত ১৮ জুলাই মহানগর শ্রমিক লীগের নতুন কমিটিতে মান্নাকে সাধারন সম্পাদক করা হয়েছে।