দৃ‌স্টিভ‌ঙ্গির দুর্ভিক্ষ !

Spread the love

সৈয়দ জুয়েলঃ

ক’দিন আগে শেষ হলো অল বাংলাদেশি এসোসিয়েশন অফ আয়ারল্যান্ড,আবাইয়ের অভিষেক অনুস্ঠান। যে কোন আয়োজনের পেছনে পরিশ্রমের অনেক গল্প থাকে। সে পরিশ্রমের গুণকীর্তন আমরা খুব কম মানুষই করে থাকি। কোন সংগঠনই ইচ্ছে করে ভুল করতে চায়না। ভুল হয়ে যায়।

এমন কি কোন আয়োজন হয়, যেটিতে ভুল হয়নি! প্রবাদের কথা যদি ধরি- “যারে দেখতে নারি,তার চলন বাঁকা”! এই কিসিমেরও কিছু মানুষ আছে,যারা অনুষ্ঠানস্থলে আসেন কোন দোষ ত্রুটি
খুঁজে বের করতে। আবার অনেকে না এসেও শকুন দৃষ্টি দিয়ে দোষ খোঁজায় ব্যাস্ত! তবে এই শকুন দৃষ্টির লোকরা আবার যে কোন আয়োজনে যোগ্যতা শূন্যের কোঠায়। সমালোচনা হতে হবে গঠনমূলক,আক্রমণাত্মক নয়।

আজ আপনি এক আয়োজন দেখে দু’চার খিস্তি খেউর করতেই পারেন! আবার আপনার আয়োজনে কিছু লোক চুপ করে বসে থাকবে,সেটি ভাবা বোকামি বৈ অন্য কিছু নয়। এসব খিস্তি খেউর করে দিন শেষে কি লাভ নিয়ে ঘরে ফিরবেন! কিছুইনা। বরং ছোট এ কমিউনিটিতে বিভেদ,বিভক্তি বেড়েই চলবে। যেহেতু আমরা একটি শক্তিশালী গনতান্ত্রিক রাষ্ট্রে বসবাস করি, সেহেতু একে অপরকে পেশিশক্তি, হুমকি, অপমানের কোন সুযোগ এখানে নেই।

আপনি চাইলেও কাউকে অপমানিত করে নিজে সাদা তাওয়েল গায়ে দিয়ে বসার সুযোগ নেই। এখানের কোন বাংলাদেশি একে অপরের ওপর নির্ভর নয় কোন কিছুতেই। স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় যেহেতু কারো সাথে নেই,তাই একে অপরকে সন্মান দিয়েই নিজে সন্মান আদায় করে নিতে হবে।

এখানের অল বাংলাদেশি এসোসিয়েশন বলি অথবা আঞ্চলিক সংগঠন,কোন সংগঠন বা সংগঠনের সদস্যদের নির্বাহী কোন ক্ষমতা নেই। তারা নিজ অর্থ, সময় ব্যায় করে কমিউনিটির কাজ করে। অনেকে পরিবারকে সময় না দিয়ে কমিউনিটির কাজে সময় দেয়। তাদের এই ত্যাগকে সন্মান যদি কেউ না করতে পারে, অন্ততঃ আক্রমনাত্মক ভাষা ব্যাবহার থেকে দূরে থাকা ভদ্রতার পরিচয়।

আমাদের কমিউনিটিতে বিভক্তি আছে সত্য, এটি থেকে উত্তরন সহজও নয়। এমন একটি দেশ দেখাতে পারবেননা,যেখানে আমাদের বাংলাদেশিদের মাঝে বিভেদ নেই। তারপরও অন্যান্য দেশের চেয়ে আয়ারল্যান্ডে বিভক্তি অনেক কম।

নিজের ঘরকে সুন্দর করতে হলে ঘরের প্রতিটি সদস্যের একে অপরের মাঝে মমত্ববোধ থাকতে হয়, এমনকি ঘরের আসবাবপত্রেরও যত্ন নিতে হয়। না হয় মানুষও পঁচে যায়,আসবাবপত্রও ঘুনে ধরে যায়। সিদ্ধান্ত আপনার আপনি ও আপনার সমাজকে কোথায় দেখতে চান! বর্তমানে যে কোন আয়োজনে একে অপরের মাঝে যে তীর্যক আঙ্গুল উঠাচ্ছেন,তাতে করে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হচ্ছে এখানের বেড়ে ওঠা ছেলেমেয়েদের।

সমাজের সিনিয়র সিটিজেনরা যদি নোংরামিতে জড়িয়ে যান,তাহলে পরবর্তী প্রজন্মও নোংরামি করতে উৎসাহ পাবে। তাছাড়া এসব আয়োজনে যেতে আমাদের ছেলেমেয়েরা আগ্রহও হারিয়ে ফেলবে।

বিদেশের মাটিতে জন্মভূমি বাংলাদেশের পতাকা সমুন্নত রাখতে হলে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মদের নির্ভেজাল এক পরিবেশ উপহার দিতে হবে। না হয় আপনি,আমি মৃত্যু পর্যন্তই শেষ! এরপরে লাল সবুজের পতাকা নিয়ে আর কেউ কথা বলবেনা।

এখানে বিভিন্ন কমিউনিটি রয়েছে,আগামীতে হয়তো আরো হবে। এটি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। আপনার আমার কারো সাধ্য নেই এগুলো আটকানো। আইনতই আপনি বাঁধা দিতে পারবেননা। আপনার,আমার কোন তির্যক মন্তব্যে যখন কিছুই বন্ধ হবেনা,তখন একে অপরের মাঝে দূরত্ব বাড়িয়ে লাভ কি!

আমরা যে কোন বৈষম্য দেখলে,তা সন্মানের সাথে আলোচনা করে সমাধান করবো। অবশ্যই কাউকে হেয় করে নয়। আমাদের কমিউনিটি থেকে যারা হারিয়ে গেছে,তাদের আমরা অনেকেই চিনি, অনেকেই চিনিনা।

যাদেরকে আমরা চিনিনা,তাদের মৃত্যু সংবাদ শুনেও একজন বাংলাদেশি হিসেবে আমাদের বুকটা কিন্তু কেঁপে উঠেছে। কাজ ফেলে,ব্যাবসার ক্ষতি করে শত শত মাইল গাড়ী চালিয়ে শেষ যাত্রায় অংশ নিয়ে দাফন করে এসেছি। কবরে রেখে আসার পর আবার শত শত মাইল ফিরতে ফিরতে ভেবে থাকি- আহা!

মানুষটা চলে গেলো। অদ্ভুত এক মায়ায় বুকটা কিন্তু আমাদেরই ভারী হয়। একটু চোখ বুঝে হিসেব করে দেখেন পৃথিবীতে আমরা কিন্তু আর খুব বেশিদিন নাই।

কত-দশ, বিশ, পঞ্চাশ! এরপর! এই কয়টি বছরের জন্য কেন আপনি আমায় দেখে মুখটি বাঁকা করে থাকবেন! আমিও বা কেন!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *