নাগরিক রিপোর্ট:
বিভাগের সবচেয়ে মর্যাদার আসন বরিশাল-৫( মহানগর ও সদর) এ হেভিওয়েট প্রার্থীর মধ্যে সাবেক মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ শিক্ষাদিক্ষায় একেবারেই পিছিয়ে। তিনি হলফনামায় নিজেকে স্বশিক্ষিত দেখিয়েছেন। অপরদিকে তার প্রতিদ্বন্দ্বী নৌকার জাহিদ ফারুক এবং জাপার ইকবাল হোসেন নিজেদের উচ্চ শিক্ষিত উল্লেখ করেছেন।
এদিকে সাদিক তার আয়ের উৎসের অন্যতম হিসেবে সিটি করপোরেশনের মেয়র থাকাকালীন ১০ লাখ ২০ হাজার টাকা সম্মানী বাবদ দেখিয়েছেন। যদিও মেয়র হওয়ার পরপরই বিগত ৫ বছর নগরভবন থেকে কোন বেতন কিংবা সম্মানী নিবেন না বলে ঘোষনা দিয়েছেন। সংশ্লিষ্টরা একে নগরবাসীকে ধোকা দেয়অ হিসেবে অবহিত করেছেন। এদিকে সাদিক সহ এমপি জাহিদ ফারুক এবং জাপার ইকবাল হোসেনের হলফনামা ঘেটে দেখা গেছে, তারা ৩ জন এমপি প্রার্থীই নানা খাতে বিপুল পরিমান সম্পদের মালিক।
বরিশাল রিটার্নিং কর্মকর্তার তথ্যমতে, এ আসনের এমপি প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ তার হলফনামায় নিজেকে স্বশিক্ষিত উল্লেখ করেছেন। দুটি ফৌজধারী মামলাও ছিল তার বিরুদ্ধে। পেশায় তিনি একজন মৎস্য চাষী এবং রাখী মালামালের ব্যবসায়ী। আয়ের উৎস হিসেবে বাড়ি-অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া ২ লাখ ৭০ হাজার, ব্যবসা সাড়ে ৭ লাখ, মেয়র পদে দায়িত্ব পালনকালে সম্মানী বাবদ ১০ লাখ ২০ হাজার টাকা। অস্থাবর সম্পত্তির ক্ষেত্রে ২ কোটি ২২ লাখ, ১০ ভরি স্বর্ন, অকৃষি জমি ৮৫ লাখ টাকা, গুলসানের নিকিতনে ফ্লাট প্রায় ১১ লাখ টাকা দেখিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে মেয়র সাদিকের ঘনিষ্ঠ অনুসারী কাউন্সিলর গাজী নইমুল হোসেন লিটু বলেন, কোভিড তহবিলে যে দান করছেন তার পর অবশিস্ট সম্মানী তিনি হলফনামায় উল্লেখ করেছেন। তিনি যে ঘোষনা দিয়েছিলেন তা ঠিকই আছে।
এদিকে বরিশাল-৫ আসনের হেভিওয়েট প্রার্থী এবং বর্তমান এমপি জাহিদ ফারুক নিজেকে গ্রাজুয়েশন পাশ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। হলফনামায় তার বিরুদ্ধে কোন মামলা নেই। একজন অবসরপ্রাপ্ত চাকরিজীবী হিসেবে তার আয়ের উৎস পেনশন ও সংসদ সদস্য ভাতা ৫৩ লাখ টাকা, ব্যাংক মুনাফা ও ফ্লাট বিক্রি বাবদ ১ কোটি ১৪ লাখ টাকা দেখিয়েছেন। জাহিদ ফারুক অস্থাবর সম্পত্তি হিসেবে নিজের নগদ ৫৮ লাখ টাকা এবং স্ত্রীর ৯২ লাখ টাকা রয়েছে। ব্যাংকে নিজের জমাকৃত অর্থের পরিমান ১ কোটি টাকার বেশি। স্ত্রীর রয়েছে ব্যাংকে ৫৬ লাখ টাকা। স্ত্রীর সঞ্চয়পত্র বা স্থায়ী আমানত বিনিয়োগ রয়েছে ৭০ লাখ টাকা। জাহিদ ফারুকের একটি এরিয়ন ব্রান্ডের গাড়ি এবং নিজের ও স্ত্রীর ৩০ তোলা সোনা রয়েছে।
এমপি জাহিদ ফারুকের ঘনিষ্ঠজন যুবলীগ নেতা মাহমুদুল হক খান মামুন বলেন, সাদিক সম্মানী নিয়ে প্রতারনা করেছেন জনগনের সঙ্গে। মেয়র থাকাকালীন যিনি কথা রাখেননি তিনি তো পরবর্তীতেও কথা রাখবেন না। তিনি মনে করেন, জাহিদ ফারুক হলফনামায় তার আয় তুলে ধরেছেন। এর বাহিরে কোন সম্পদ নেই।
এ আসনের অপর হেভিয়েট প্রার্থী মো: ইকবাল হোসেন নিজেকে শিক্ষাগত যোগ্যতা হিসেবে বিএসসি দেখিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে বর্তমানে দুটি সিআর মামলা সুপ্রিম কোর্টে স্থগিত রয়েছে। সম্পদে তিনি বেশ রিস্টপুস্ট। একজন ব্যবসায়ী হিসেবে তার বাৎসরিক আয় ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা। তিনটি খাতে বেতনভাতা হিসেবে দেখিয়েছেন প্রায় ৭৯ লাখ টাকা, ৯ লাখ এবং ২১ লাখ টাকা। ইকবালের অস্থাবর সম্পত্তি হিসেবে রয়েছে নগদ ২ কোটি ৭১ লাখ টাকা, ব্যাংকে জমা রয়েছে তার এবং স্ত্রীর ২৫ লাখ টাকা, শেয়ার হিসেবে প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকা, ৩৮ লাখ টাকার মটরগাড়ি, ৬০ তোলা স্বর্ন রয়েছে ইকবাল হোসেনের। ইকবাল হোসেন বলেন, সাদিক বলেছিলেন সম্মানী নিবেন না। এখন লোভে পড়েছেন। তিনি রাখি ব্যবসা করে এতো টাকা কোথা থেকে পেলেন। এমপি জাহিদ ফারুক প্রসঙ্গে বলেন, তিনি সেনা কর্মকর্তা হয়ে এতো টাকা পেলেন কোথায়। তার আয় তো অনেক বেড়েছে।
এব্যপারে সুশাষনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর বরিশাল মহানগর সাধারন সম্পাদক রফিকুল আলম বলেন, সাদিক বিধান অনুযায়ী সম্মানী নিতে পারেন। কিন্তু সম্মানী না নেয়ার ঘোষনা দিয়ে হলফনামায় সম্মানী নেয়ার তথ্য দেয়ার অর্থ হচ্ছে সাদিক নগরবাসীর সাথে কথা রাখেননি। এটা জনগনের সঙ্গে এক ধরনের ধোকা দেয়া। রফিকুল বলেন, মৎস্য চাষ ও রাখি মালামালের ব্যবসার তথ্যও একধরনের ভুয়ামী। তার মতে, হেভিওয়েট ৩ প্রার্থী যে সম্পদের হিসেবে দেখিয়েছেন তা কতটা সত্য এবং এতো টাকা তারা কোথায় পেল- নির্বাচন কমিশনের উচিত তা যাচাই বাছাই করা।