নাগরিক রিপোর্ট:
একুশে ফেব্রুয়ারী সহ তিন দিনের ছুটিতে কুয়াকাটায় দর্শনার্থীর ঢল নেমেছিল। চলতি মাসে ভীড় এতো বেশি যে গড়ে ৫০ হাজারের বেশি দর্শনার্থীর পদার্পন ঘটে এ পর্যটন কেন্দ্র। যা ধারন ক্ষমতার তিন গুন বলে সংশ্লিস্টরা মনে করেন। পদ্মা সেতু চালুর পর এতো দর্শনার্থী নিয়ন্ত্রনে পরিবেশগত সচেতনতা নিয়ে চিন্তিত বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, প্রবল দ্বীপ সেন্ট মার্টিনের মত কুয়াকাটা সী বিচের পরিবেশগত ক্ষতি হওয়ার আগেই এর ব্যবস্থাপনা জোরদার করা দরকার।
এদিকে পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সম্প্রতি কুয়াকাটা পরিদর্শনে গিয়ে কুয়াকাটা বীচের পরিবেশ রক্ষায় সতর্কী করছেন সংশ্লিস্টদের। প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন এখন প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা। অনিয়ন্ত্রিত পর্যটন, অসচেতনতা, পরিবেশ ও প্রতিবেশবিরোধী আচরনে সেন্টমার্টিনের বিরল জীববৈচিত্র ধ্বংসের মুখে। এ অবস্থায় সম্প্রতি পরিবেশ অধিদপ্তর সেন্টমার্টিনের পর্যটক নিয়ন্ত্রনে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছে।
শুক্রবার বরিশাল থেকে পরিবার সহ বেড়াতে কুয়াকাটা যান চাকুরেজীবী মাসুদ আহমেদ। তিনি বলেন, পর্যটকের এতো চাপ যে ভাড়া দ্বিগুন দিয়েও হে টেলে রুম পাওয়া দুস্কর। মানুষের ঢল নামলেও নিয়ন্ত্রনে কোন ব্যবস্থা নেই। শত শত গাড়ি আসছে আর যাচ্ছে। পিকনিক পার্টির ঢল নামছে। পর্যটক প্লাস্টিকের বোতল সহ নানা বর্জ্য নির্বিচারে ফেলছেন যত্রতত্র। এতে সৈকত ও সমুদ্র যেমন নোংরা হচ্ছে তেমন দূষিত হচ্ছে কুয়াকাটার পরিবেশের।
কুয়াকাটা বে অব বেঙ্গল মুক্ত স্কাউট গ্রুপ এর সভাপতি প্রভাষক মাহবুবুল শাহিন বলেন, কুয়াকাটায় সপ্তাহের বৃহস্পতি থেকে শনিবার গড়ে ৫০ হাজার মানুষ আসছে। কিন্তু ধারন ক্ষমতা ২০ হাজারের মত। ৫ বছর আগে এর অর্ধেকও ছিল না। এই মানুষগুলো কুয়াকাটার পরিবেশের উপর কঠিন চাপ ফেলছে।
জানতে চাইলে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কোস্টাল স্টাডিজ এন্ড ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. হাফিজ আশরাফুল হক বলেন, পর্যটন এলাকায় মানুষ বেশি গেলে জলজ প্রানী সরে যায়, পরিবেশ দুষন হয়। সমুদ্রের জীববৈচিত্র ক্ষতিগ্রস্থ হয়। পদ্মা সেতু চালুর পর কুয়াকাটায় যে হারে পর্যটক বাড়ছে সেই অনুযায়ী নিয়ন্ত্রনে রাখার কোন উদ্যোগ নেই। তিনি বলেন, কুয়াকাটায় যে ঝাউ বন ছিল তা হ্রাস পাচ্ছে। পিকনিক পার্টির লোকজন বর্জ্য তৈরি করছে। অথচ আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নেই। কুয়াকাটা বীচ এক কিলোমিটার দুরে ছিল। এখন বাধ এর কাছে চলে এসেছে। তিনি বলেন, সেন্টমার্টিন দ্বীপের মারাত্নক ক্ষতি হওয়ায় দর্শনার্থী নিয়ন্ত্রনে গনবিজ্ঞপ্তি দিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর। কুয়াকাটায় ধারন ক্ষমতার কয়েক গুন বেশি পর্যটক নিয়ন্ত্রনে এখন থেকেই আধুনিক ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা দরকার।
কুয়াকাটা হোটেল মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারন সম্পাদক এম এ মোতালেব শরিফ বলেন, পর্যটক বাড়ছে। কিন্তু কুয়াকাটা বীচ ম্যানেজমেন্ট কমিটি পরিবেশ রক্ষায় আমাদের নিয়ে মাসে একবারও সভা করছেন না। জাতীয় নির্বাচনের পর আর কোন সভা হয়নি। পদ্মা সেতু চালুর পর দ্বিগুন বেড়েছে পর্যটক। গড়ে ৩০-৪০ হাজার পর্যটকের শৃংখলা রক্ষা করা দরকার। তাদের সুযোগ সুবিধা দেয়া উচিত। কিন্তু সকাল-সন্ধ্যা একজন মানুষ কুয়াকাটায় থাকলেও। এর পর রাত নামলেও তাদের নিয়ন্ত্রন কতটা সম্ভব হচ্ছে তা দেখার সময় এসেছে।
কুয়াকাটা বিডি ক্লিনের সমন্বয়ক ও হোটেল সমুদ্র বিলাস এর স্বত্বাধীকারী ডা: ইসমাইল ইমন বলেন, গত ৩ দিনে পিকনিকের গাড়ি ভর্তি পর্যটক আসছে দৈনিক ৫০ হাজারের উপরে। তাদের পানির বোতল, প্লাস্টিক, পলিথিন সী বিচের দুষন ঘটাচ্ছে। দর্শনার্থীদের সচেতনতা ছাড়া কিছুই করার নেই।
কুয়াকাটা নেক্সট সিভিলাইজেশনের উদ্যোক্তা হাসানুল ইকবাল বলেন, এতো মানুষের খাবারের চাহিদা মেটাতে যে মাছ, গরু, ছাগল, মুরগী প্রতিদিন রান্না হচ্ছে সেগুলোর রক্ত, বর্জ্য কুয়াকাটা খালে পড়ে ওই খালটি দুষিত হয়ে গেছে। এর পাশ থেকে দুর্ঘন্ধে হাটা যায় না।
পরিবেশ অধিদপ্তরের পটুয়াখালীর সহকারী পরিচালক কাজী সাইফুদ্দিন বলেন, কুয়াকাটায় পর্যটকের চাপ বাড়ছে। পর্যটক বাড়লে সৈকতের ক্ষতি হবেই। সৈকতের পরিবেশ রক্ষায় তারা নজর রাখছেন। পৌরসভাকে গত মাসে ময়লা ফেলার বিষয়ে নোটিশ দিয়েছেন। হোটোল-মোটেল মালিকদের সঙ্গে সভা করে পরিবেশ রক্ষায় তাগিদ দিয়েছেন। গত ৯ ফেব্রুয়ারী অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. আব্দুল হামিদ বীচ পরিদর্শন করে যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা ও বর্জ্য ফেলা নিয়ন্ত্রনে সতর্ক হতে বলেছেন। কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে ডলফিন, কচ্ছপ মরে ভেসে উঠছে। জীববৈচিত্র রক্ষায় তারা নজরে রাখছেন।
এব্যপারে কুয়াকাটা বীচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য এবং কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: জাহাঙ্গীর হোসেনকে ফোন দিলেও তাকে পাওয়া যায়নি।