নাগরিক রিপোর্ট:
ঘূর্নিঝড় রিমাল আতংকে চিন্তিত উপকূলের মানুষ। দুর্বল বেরিবাধের কারনে গ্রামবাসী উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। বিশেষ করে বরগুনার পাথরঘাটায় পদ্মা-রুইতা গ্রামের দুর্বল বাঁধ ধ্বসের আশংকা করেছেন মানুষ। একই অবস্থা পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার চম্পাপুর ইউনিয়নের দেবপুর বেরীবাঁধের। এদিকে ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় বরিশাল বিভাগের ৬ জেলায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি ব্যাপক উদ্যোগ নিয়েছে। জেলায় জেলায় সভা করে ঘূর্ণিঝড় রিমাল মোকাবিলায় করণীয় চিহিৃত করেছে। ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি সুত্রে জানা গেছে, বিভাগের ৬ জেলায় প্রায় ৪ হাজার আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ঝড় মোকাবেলায় কাজ করবে ৩২ হাজারের বেশি স্বেচ্ছাসেবক। স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, ৪৭২টি মতো মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে গোটা দক্ষিনাঞ্চলে।
খোজ নিয়ে জানা গেছে, ঘূর্নিঝড় রিমাল আসার খবরে আতংকে রয়েছে উপকূলের মানুষ। বিশেষ করে যেসব এলাকায় দুর্বল বেরিবাঁধ সেখানকার গ্রামবাসী উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। উপকূলীয় এলাকা বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার পদ্মা-রুইতা গ্রামের কোল ঘেষে বলেশ্বর ও বিষখালী নদী বঙ্গোপসাগারে মিলেছে। দুটি নদীর মোহনা হওয়ায় আবহাওয়া একটু অস্বাভাবিক হলেই সাগর ফুসে ওঠে। এমন বিপদজনক এলাকায় জান-মালের নিরপত্তায় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) দেড় কিলোমিটার মাটির বাঁধ নির্মান করেছে। নামে মাটির বাঁধা হলেও বেশীরভাগ অংশ বালু। গ্রামবাসী জানিয়েছেন, ৫ ফুটের বেশী জলোচ্ছ্বাস হলেই স্রোতে ভেসে যাবে বাঁধ। ফলে হুমকির মুখে আছে পদ্মা ও রুইতা গ্রামের ৬ হাজার পরিবার। ২০০৭ সালে প্রলংয়কারী ঝড় সিডরে বাঁধের ওই এলাকাটিতে ৬৮ জন নিহত হয়েছিল বলে জানিয়েছেন গ্রামাবাসী।
পাথরঘাটা সদর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আলমগীর হোসাইন জানান, পুরো পাথরঘাটা উপজেলায় রক্ষায় যে বাঁধ রয়েছে তার পদ্মা গ্রাম এলাকায় প্রায় দেড় কিলোমিটার অংশ ২০০৭ সালের সিডরে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। গতবছর ওই অংশটুকুতে মাটি ভর্তি বস্তা ফেলে বাঁধ দেওয় হয়েছে। বড় ধরনের জলোচ্ছ্বাস হলে ওই বাঁধ কোনভাবেই টিকবেনা।
বরগুনায় পাউবোর সহকারী প্রকৌশলী মো: খলিলুর রহমান পাথরঘাটায় কর্মরত থাকাকালীন দেড় কিলোমিটার মাটির বাঁধ নির্মিত হয়। তিনি বলেন, পাথরঘাটা রক্ষায় ২২ কিলোমিটার বাঁধের পদ্মা-রুইতা গ্রাম এলাকায় দেড় কিলোমিটার সিডরে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। গতবছর সেখানে মাটির বাধ দিয়ে সংস্কার করা হয়। সাগর মোহনায় এ বাঁধ টেকসই নয়।
অপরদিকে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার চম্পাপুর ইউনিয়নের দেবপুর বেরীবাঁধের ৩০০ ফুট ঝুকিপূর্ন বলে জানা গেছে। রামনাবাদ নদীর ছোবল থেকে রক্ষায় বাঁধটি নির্মিত হয়। ঝড় আসার খবরে বাধটি নিয়ে সেখানকার উপকূলীয় মানুষ উদ্বিগ্ন। চম্পাপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মাহবুব আলম জানান, রামনাবাদ নদীর তীরে মোট প্রায় দুই কিলোমিটার মাটির বেরীবাঁধের ৫৪ নম্বর ফোল্ডার অংশ ভেঙ্গে ৬০০ মিটার ঝুকিপূর্ন হয়ে পড়েছে। গতবছর সেখানে বালুর বস্তা ফেলা হয়েছে। কিন্ত নদীর স্রোত সরাসরি বাঁধের ওপর আঘাত এর টেকসই নিয়ে তারা শংকিত।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি (সিপিপি) বরিশাল আঞ্চলিক কার্যালয়ের তথ্যমতে, বরিশাল বিভাগে ৩ হাজার ৯৭৪টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে। এর মধ্যে ভোলায় ৭৪৬টি, পটুয়াখালীতে ৭০৩টি, বরগুনায় ৬৪২টি, বরিশালে ৫৪১টি, ঝালকাঠিতে ৪৮৮টি ও পিরোজপুরে সর্বোচ্চ ৮৫৪টি আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে। এছাড়া ৬ হাজার ২৪৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ১ হাজার ৬৬টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় আশ্রয়ের জন্য খোলা রাখার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে বরিশাল বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় সুত্রে জানা গেছে।
জানা গেছে, বিভাগে ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) ৩২ হাজার ৫০০ স্বেচ্ছাসেবকও প্রস্তুত রয়েছে। যার মধ্যে বরিশাল সদরে ৬০, ভোলায় ১৩৬০০, পটুয়াখালীতে ৮৭০০, বরগুনায় ৮৪৪০ ও পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় ১৭০০ জন সিপিপি’র স্বেচ্ছাসেবক রয়েছে।
অপরদিকে বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মন্ডল বলেন, সম্ভাব্য দুর্যোগ মোকাবিলায় এরই মধ্যে ৪৭০-৪৭২ টির মতো মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। যারা দুর্যোগকালীন ও পরবর্তী সময়ে সাধারণ মানুষকে চিকিৎসা সেবা প্রদান করবেন। বিভাগের হাসপাতালগুলোয় পর্যাপ্ত প্রয়োজনীয় ওষুধ রয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় রিমাল মোকাবিলায় বরিশাল জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার জেলা প্রশাসক শহিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড় রেমালে রূপ নিলে সেটি মোকাবিলায় জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির বিভিন্ন উদ্যোগের বিষয়ে আলোচনা হয়।
সভায় সকল ধরনের সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রাখার পাশাপাশি সেখানে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা রাখার জন্য সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এছাড়া পর্যাপ্ত শুকনো খাবারের পাশাপাশি পানি বিশুদ্ধকরন ওষুধ রাখা, জেলায় ৫৪১টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
Thanks for sharing. I read many of your blog posts, cool, your blog is very good.