আমরা হেরে গেলে, হেরে যাবে বাংলাদেশ- ইলিয়াস কাঞ্চন

Spread the love

চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন। রূপালি পর্দার বাইরেও এই মানুষটি দিয়েছেন নায়কের পরিচয়। নিরাপদ সড়কের দাবিতে নেমেছেন রাস্তায়। নতুন সড়ক পরিবহন আইন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ সংগঠনের হয়ে বিভিন্ন সড়কে প্রচারণা চালাচ্ছেন তিনি। সম্প্রতি পরিবহন শ্রমিকদের রোষানলে পড়েছেন এই অভিনেতা। সমসাময়িক বিষয় নিয়ে একটি গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়েছেন চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন। ডেইলি নাগরিক’র পাঠকদের জন্য এ সাক্ষ্যাৎকারটি হুবুহু উপস্থাপন করা হলো।

নিরাপদ সড়কের দাবিতে ২৬ বছর ধরে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। কতটুকু সফল হয়েছেন বলে আপনি মনে করেন?

এখনও সফল হইনি। আন্দোলন করে ‘নিরাপদ সড়ক দিবস’ কিংবা একুশে পদক পেলেও সড়কে নৈরাজ্য এখনো বন্ধ হয়নি। পুরোপুরি সফল তখনই বলবো, যখন দেশের সড়কে দুর্ঘটনার হার শূন্যের কোটায় নেমে আসবে। অকালে ঝড়বে না আর কোনো তাজা প্রাণ।

নতুন সড়ক পরিবহন আইনের ‘সংস্কার’ চায় পরিবহন শ্রমিকরা…

যখন জবাবদিহিতা বা আইনের প্রতি শ্রদ্ধা কম থাকবে, তখন তো নৈরাজ্য সৃষ্টি হবেই। পরিবহন শ্রমিকরা ঠিকমতো আইন মানলে কি আর আজকের এই পরিস্থিতি তৈরি হতো কিংবা আইন কঠোর করার প্রয়োজন ছিল? এখন যখন শাস্তি ও জরিমানার বিষয়টি বাড়িয়ে নতুন আইন করা হলো, তখন তো তাদের মেনে নিতে কষ্ট হবেই। কারণ তারা তো আগের আইনই মানেনি। সরকারের পক্ষ থেকেও এখন বলা হয়েছে ‘তাদের বিষয়টি দেখা হবে’। আইন পাস হওয়ার পর কারও চাপের মুখে, এটা পরিবর্তন করা হয় তাহলে তো মেনে নেওয়া যায় না। আইনটা হয়েছে, এটা প্রয়োগ করতে হবে। প্রয়োগ করতে গিয়ে যদি কোনো অসঙ্গতি দেখা দেয়, তাহলে সরকার তা দূর করার চেষ্টা করবে।

নতুন সড়ক পরিবহন আইন বাস্তবায়নে সরকার কতটুকু সফল হবে বলে আপনি মনে করেন?

সরকারের সদিচ্ছা থাকলে, এটা বাস্তবায়ন করা কষ্টের কিছুই না। সরকার চাইলেই সব সম্ভব। যেখানে দেশের প্রধানমন্ত্রী, দেশের নাগরিক চায় আইনটা বাস্তবায়ন হোক, সেখানে সমস্যাটা কোথায়? হাতেগোনা এই ক’জন মানুষের কাছে কি হেরে যাবে বাংলাদেশ। আমরা হেরে গেলে, হেরে যাবে বাংলাদেশ। বেপরোয়াভাবে প্রতিদিনই অসংখ্য মানুষ রাস্তায় প্রাণ হারচ্ছে। এখন হেরে গেলে এই মরণ খেলা বন্ধ করা যাবে না। যারা চায় না এই আইন কার্যকর হোক, তারাও শক্তিশালী হয়ে ওঠে। ভাবতে কষ্ট লাগে, তাদের কথা মতো আইন হয়। এভাবে চললে, আইনের প্রতি দেশের মানুষের শ্রদ্ধা চিরতরে উঠে যাবে।

পরিবহন শ্রমিকরা আপনাকে হেয় করে নানা ধরনের প্রচারণা চালাচ্ছে। শুনলাম, হুমকিও দিচ্ছে। বিষয়টি কী প্রশাসনকে জানিয়েছেন?

দেশের মানুষ দেখছে, সহকর্মীরা দেখছে, সরকার কি এসব দেখছে না। প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দেইনি। তারা যদি বিষয়টি আমলে না নেয়, তবে এখানে আমার বলার কিছুই নেই। আর এমন হুমকি শুরু থেকেই পেয়ে আসছি। দেশের বিভিন্ন স্থানে আমার ছবিসংবলিত ব্যানার কিংবা কুশপুত্তলিকা তৈরি করে সেখানে জুতার মালা দেওয়া হয়েছে। এগুলোর প্রতিবাদ দেশের মানুষই করছে।

সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে রূপালি পর্দা ছাড়লেন। নায়ক হয়ে এক শ্রেণীর মানুষের কাছে ভিলেন হয়েছেন…

দেশের মানুষের কাছে আমি এখনও সেই ইলিয়াস কাঞ্চনই আছি। আর কিছু অসাধু মানুষের কাছে ভিলেন হয়েছি। দেশটা স্বাধীন হয়েছে বলেই তো আমি নায়ক হতে পেরেছি। পাকিস্তান যদি থাকতো, তাহলে কি আমি হিরো হতে পারতাম? দেশের মানুষরা আমাকে ভালোবাসা দিয়েছে বলে আমি হিরো হয়েছি। দেশের মানুষের ভালোবাসা আর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান রক্ষা করার জন্য ক্যারিয়ার কেন, জীবন দিতেও আমি প্রস্তুত। দেশের লক্ষ-কোটি মানুষের জন্য কাজ করতে গিয়ে যদি ভিলেন হতে হয়, তাহলে হবো। জীবন দিতে হলেও পিছ পা হবো না।

‘নিরাপদ সড়ক চাই’ সংগঠনের খবর বলুন…

আগামী ৩০ তারিখ আমাদের একটা সংবাদ সম্মেলন আছে। আর আগামী ১ ডিসেম্বর হচ্ছে ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ সংগঠনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এবারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আমরা সিলেটে উদযাপন করবো। প্রতি বছরই আমরা দেশের বিভিন্ন জেলায় ও বিভাগে গিয়ে আমাদের কার্যক্রম চালিয়ে থাকি। আর জেলায় জেলায় স্থানীয় পর্যায়ে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন করা হয়। কিন্তু এবারই প্রথম আমরা আমাদের কেন্দ্রীয় অনুষ্ঠান সিলেটে করছি। বেশ বড় আয়োজনে দিনটি উদযাপন করা হবে। এবার আমরা ২৬ বছর শেষ করে ২৭-এ পা রাখছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *