প্রথা ভেঙ্গে যৌনকর্মীর জানাযা শেষে দাফন

Spread the love

বাংলাদেশে যৌনকর্মীদের জন্য গত ৬ই ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার ছিল এক মোড় ঘোরানো অধ্যায়।

রাজবাড়ির দৌলতদিয়ায় বহু পুরনো যৌন-পল্লীতে প্রথমবারের মত একজন যৌনকর্মীর পুরোপুরি ইসলামি প্রথা মেনে জানাজা পড়িয়ে দাফন হয়েছে। পরে চেহলামেরও আয়োজন করা হয়।

প্রয়াত যৌনকর্মী হামিদা বেগমের জানাজায় হাজির ছিলেন প্রায় দুশ মানুষ। আর চেহলামের দাওয়াতে সাড়া দিয়েছিলেন চারশোরও বেশি লোক।

যদিও যৌন ব্যবসা বাংলাদেশে বৈধ, কিন্তু যৌনকর্মীরা কার্যত অচ্ছুত। মৃত্যুর পর ধর্ম-মতে তাদের দাফন-কাফনের নজির একেবারেই বিরল।

যৌনকর্মীদের মৃত্যু হলে তাদের জানাজা পড়াতে মৌলভিরা রাজী হননা। সাধারণত মৃত যৌনকর্মীদের গোপনে কবর দেয়া হয়, অথবা মৃতদেহ নদীতে ভাসিয়ে দেওযা হয়।

কিন্তু গত সপ্তাহে দৌলতদিয়া ঘাটে হামিদা বেগমের ক্ষেত্রে যা ঘটেছে, তা সত্যিকার অর্থেই ব্যতিক্রম।

পদ্মাপারের এই যৌন-পল্লীটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এবং শত বছরের পুরনো । এখানকার বাসিন্দাদের মতে, কোনো যৌনকর্মীর জানাজা করে দাফন বা তারপর চেহলামের ঘটনা আগে কখনও হয়নি।

হামিদা বেগমের জানাজা পড়াতে ইমামকে রাজী করাতে ভূমিকা রেখেছিলেন স্থানীয় পুলিশ প্রধান আশিকুর রহমান।

তাকে উদ্ধৃত করে বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, “ইমাম প্রথমে জানাজা পড়াতে রাজী হচ্ছিলেন না। আমি তাকে বললাম, ইসলামে কি কোথাও নির্দেশ আছে যে যৌনকর্মীর জানাজা পড়ানো নিষেধ। আমার এই প্রশ্নের কোনো উত্তর ইমাম সাহেবের ছিলনা।”
পরে ঐ ইমাম জানাজা পড়াতে রাজী হন।

মি রহমান বলেন, “অভূতপূর্ব দৃশ্যের অবতারণা হয়েছিল সেদিন।

জানাজায় অংশ দিতে অনেক মানুষ অনেক রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করেছিলেন। যৌনকর্মীদের চোখে পানি টলটল করছিল।”

ঝুমুর বেগম নামে স্থানীয় যৌনকর্মীদের একজন নেত্রী হামিদা বেগমের জানাজা পড়ানোর দাবিতে সোচ্চার হয়েছিলেন।

মৃত্যুর পর যৌনকর্মীদের করুণ পরিণতি সম্পর্কে তিনি বলেন, “আমরা যদি কাউকে দাফন করতে যেতাম, গ্রামবাসীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে আমাদের তাড়া করতো।”

প্রয়াত হামিদা বেগমের মেয়ে লক্ষ্মী, যিনি নিজেও একজন যৌনকর্মী, এএফপিকে বলেন, “আমি স্বপ্নেও ভাবিনি যে এত সম্মানের সাথে আমার মায়ের শেষ বিদায় হবে।।”

“আমাকে মাকে মানুষ হিসাবে বিবেচনা করা হয়েছে” – বলেন তিনি।

সূত্র- বিবিসি বাংলা 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *