সন্তান এসএসসি পরীক্ষার্থী, মিলেমিশে নকলের হাট

Spread the love

নাগরিক রিপোর্ট: এসএসসি পরীক্ষায় সন্তান পরীক্ষার্থী। তাই শিক্ষকরা ওই কেন্দ্রেরই কক্ষ পরিদর্শক। তারাই কেন্দ্র থেকে প্রশ্ন বের করে দেন। বাহিরে থাকা ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা তা নিয়ে প্রশ্নপত্র তৈরি করে সরবরাহ করেন। ঘটনাটি বরিশাল বিভাগের ঝালকাঠী জেলার নলছিটি বি.জি ইউনিয়ন একাডেমি বাহাদুরপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের। ওই কেন্দ্রের ৬/৭ জন শিক্ষক এবং ম্যানেজিং কমিটির সদস্যের সন্তান পরীক্ষা দেয়ায় সেখানে নকলের হাট বসছে। একই ঘটনা ঘটছে পার্শবর্তী দুটি পরীক্ষা কেন্দ্রে। তবে সোমবার পদার্থ বিজ্ঞান পরীক্ষায় পাল্টে যায় এই চিত্র।
জানতে চাইলে নলছিটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুম্পা সিকদার বলেন, ওই কেন্দ্রটি বাতিল হয়ে যাবে। জেলা প্রশাসক এমনটাই মত দিয়েছেন। শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের কাছেও এধরনের অভিযোগ রয়েছে। ২জন শিক্ষককে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। অভিযুক্তদের পরীক্ষার দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে।
জানা গেছে, নলছিটি বি.জি ইউনিয়ন একাডেমি বাহাদুরপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে এবছর মোট পরীক্ষার্থী ৯৬৭জন। আসপাশের ১০টি স্কুলের শিক্ষার্থীরা এ কেন্দ্রে পরীক্ষা দিচ্ছে। পরীক্ষার শুরু থেকেই এ কেন্দ্রে শিক্ষকদের সহায়তায় নকল করার অভিযোগ উঠেছে।
পরীক্ষা কেন্দ্রের তথ্যমতে, বিদ্যালয়টির সহকারী শিক্ষক জোহরা পরীর পুত্র মো: রাহাত ওই কেন্দ্রেই পরীক্ষা দিচ্ছে। কিন্তু এরপরও তিনি কেন্দ্রটিতে পরিদর্শক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার স্বামী গোলাম কিবরিয়া পারভেজ প্রশ্ন উত্তর তৈরি করে ছেলেকে সরবরাহ করছেন। একই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা শুরাইয়া পারভিন শিউলির কন্যা শশি এসএসসি পরীক্ষার্থী। গত ৯ ফেব্রæয়ারী গনিত পরীক্ষা চলাকালীন শিক্ষিকা শিউলি ওই কেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করেছেন। এমনকি ওই দিন শিক্ষিকা শিউলির বাড়িতে অভিযান পরিচালনা করে এসিল্যান্ড প্রশ্নপত্র উদ্ধার করেন।
নকল সরবরাহের অন্যতম হোতা ম্যানেজিং কমিটির সদস্য সাইদুর রহমান বাচ্চুর পুত্র সিয়াম এসএসসি পরীক্ষার্থী। তিনি ওই কেন্দ্রের মধ্যের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকও। ম্যানেজিং কমিটির সদস্য বাচ্চুর আপন ভাই পার্শবর্তী সরমহল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী আল আমিন কেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করেন। কারন হিসেবে জানা গেছে, তার পুত্র আবির পরীক্ষার্থী। যেকারনে পুত্র ও ভাতিজাকে নকল সরবরাহে প্রত্যক্ষ ভুমিকা রাখছেন আল আমিন। এমনকি বাচ্চুর চাচা সরমহল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শারিরক শিক্ষক নান্না মিয়া নাতি আবির, সিয়ামকে নকলে সহায়তা করার জন্য ওই কেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করছেন।
একইভাবে ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ইউনুস আলী হাওলাদারের কন্যা তানজিলা ও সদস্য আ: জলিলের কন্যা বিথি এবং সদস্য আ: সালাম সিকদারের পুত্র স¤্রাট এবার ওই কেন্দ্রের পরীক্ষার্থী।
অভিযোগ উঠেছে ওই কেন্দ্রের প্রশ্ন বাহিরে নিতে সহযোগিতা করছেন সহকারী প্রধান শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন, শিক্ষক রেজাউল করিম ও শিক্ষক আজমল হোসেন। তবে বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন বলেন, তাকে সচিব বললে দায়িত্ব পালন করেন মাত্র। নকল সরবরাহের সাথে তিনি জড়িত নন।
এদিকে সোমবার পদার্থ বিজ্ঞান বিষয়ের পরীক্ষায় নিয়ম বর্হিভূতভাবে বিজ্ঞান বিষয়ের দুই শিক্ষক ওই কেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করেন। এর হচ্ছেন বিএসসি শিক্ষক রেজাউল করিম ও আ: সালাম। পরীক্ষার শুরুতেই কেন্দ্র পরিদর্শনে এসিল্যান্ড হাজির হলে নকল সরবরাহে বিপাকে পরেন তারা।
জানতে চাইলে নলছিটি উপজেলার বি.জি ইউনিয়ন একাডেমি বাহাদুরপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের সচিব এবং প্রধান শিক্ষক আলী হায়দার সিকদার স্বীকার করেন যে তার বিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্য এর সন্তান এ কেন্দ্রে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন। তিনি বলেন পরিদর্শকের ঘাটতি থাকায় সন্তান পরীক্ষা দিলেও সংশ্লিস্ট ২ শিক্ষককে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। এক শিক্ষিকার বাসায় পরীক্ষা চলাকালীন এসিল্যান্ড অভিযান পরিচালনা করে উত্তরপত্র পেলেও তা যে তার কন্যার সেটি প্রমান করা যায়নি। জানা গেছে, ওই কেন্দ্রের পার্শবর্তী জেড এ ভুট্টো মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে এবং হদুয়া আলিম মাদ্রাসা কেন্দ্রেও পরীক্ষায় অবাধে নকল সরবরাহ করা হচ্ছে।
এব্যপারে বরিশাল শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অরুন গাইন বলেন, ওই কেন্দ্রের পরীক্ষা সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন করতে সেখানকার ইউএনও এবং এডিসিকে অবহিত করা হয়েছে। তাদের টিমও কেন্দ্রটি নজরদারীতে রেখেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *