মাশরাফি যেভাবে অধিনায়কত্ব ছাড়ার ঘোষণা দিলেন

Spread the love

নাগরিক ডেস্ক : সিলেটের কাঠফাটা রোদে দুপুর দেড়টা থেকে অনুশীলন শুরু করে বাংলাদেশ। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের শেষ ম্যাচকে কেন্দ্র করে আজ বৃহস্পতিবারের এই অনুশীলন। সবকিছুই ছিল ঠিকঠাক। সোয়া একঘণ্টা পর চিত্রটা পাল্টে যায় হঠাৎ করে। অধিনায়ক মাশরাফিকে সংবাদ সম্মেলনে আসতে দেখে সাংবাদিকদের হুড়োহুড়ি, এই নিয়ে সিলেটে তৃতীয়বার কথা বলবেন, এবার কী বলবেন এটাই ছিল প্রেস কনফারেন্স রুমে যেতে যেতে সাংবাদিকদের ভাবনা।

মাশরাফি এসে যা বললেন তা শুনে উপস্থিত ক্রীড়া সাংবাদিকদের হজম করতে খুব কষ্ট হলো। পিন-পতন নীরবতা থেকে হুট করে শুরু হয় কোলাহল। নড়েচড়ে বসেন সবাই। ডিজিটাল মাধ্যমের কল্যাণে সেই খবর ছড়িয়ে গেল সবজায়গায়। আগের যত সংবাদ সম্মেলন ছিল, মাশরাফি এসেই হাসি মুখে বসতেন, অপেক্ষা করতেন প্রশ্নের!

আজ আর তা হলো না। অনুশীলনের জার্সি, মাথায় ক্যাপ পরিহিত মাশরাফি বসেই ধন্যবাদ দিয়ে বলেন, ‘আমি কিছু বলতে চাই। ’ এরপর টুকে নিয়ে আসা নোট দেখে দেখে দিয়ে দিলেন অধিনায়কত্ব ছাড়ার ঘোষণা। বারবার মাথার ক্যাপ ঠিক করছেন, আগে অনেক অনেক কথা বললেও কখনো নোট টুকে নিয়ে আসেননি। আজ নিজের জীবনের অংশ হয়ে যাওয়া ক্রিকেটের একটি অধ্যায় থেকে সরে যাচ্ছেন; যাতে কোনো গড়বড় না হয় তাই হয়তো নোট নিয়ে এসেছেন। গলাটা যেন ধরে আসছিল তার, নিয়ন্ত্রণ করেছেন দক্ষ নেতার মতো। মাঝে মাঝে চোখ ছলছল করছিল, নিয়ন্ত্রণ করেছেন নিজেকে।

সকালে ঘুম থেকে উঠেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, কথা বলেছেন পরিবারের সঙ্গে। জানিয়েছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনকে। প্রধানমন্ত্রীকে না জানালেও যে কোনো মাধ্যমে তিনি জেনে গেছেন বলেও জানিয়েছেন মাশরাফি।

অধিনায়কত্ব ছাড়ার ঘোষণা দিয়ে মাশরাফি বলেন, ‘কালকে(শুক্রবার) আমার শেষ ম্যাচ। আমার প্রতি দীর্ঘদিন ধরে আস্থা রাখার জন্য ক্রিকেট বোর্ডকে ধন্যবাদ জানাই। ধন্যবাদ জানাই, আমার নেতৃত্বে যত প্লেয়ার খেলেছে, তাদের।’

তিনি বলেন, ‘এ প্রক্রিয়াটা সহজ ছিল না, শেষ পাঁচ-ছয় বছরের যে জার্নি ছিল। আমি ধন্যবাদ জানাই, যাদের অধীনে আমি খেলেছি বা আমি যাদের ওপর ক্যাপ্টেন্সি করেছি। তারা সবাই আমাকে ক্লোজলি খুবই সহযোগিতা করেছেন।’’

অধিনায়কত্বের শুরু-শেষ নিয়ে বলতে গিয়ে মাশরাফি বলেন, ‘আমার ক্যাপ্টেন্সি শুরু হয় হাথুরুসিংহের সময়। তার আগে দুই একবার সুযোগ পেয়েছি কিন্তু ইনজুরির কারণে করতে পারিনি। হাথুরুসিংহে, খালেদ মাহমুদ সুজন, স্টিভ রোডস এবং আমার মনে হয় ডমিঙ্গো দিয়ে শেষ হচ্ছে।’

নির্বাচক ও বোর্ডের কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘নির্বাচক কর্মকর্তারা যারা আছেন তারা শুরু করে প্রত্যেকটা বোর্ড স্টাফ, যারা ক্রিকেট বোর্ডে আছেন সবাইকে ধন্যবাদ সহযোগিতা করার জন্য।’

সাংবাদিকদের ধন্যবাদ জানিয়ে মাশরাফি বলেন, ‘আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই আপনাদের, আপনারা যারা আছেন মিডিয়ার, সবাই অত্যন্ত সহযোগিতা করেছেন।’

সমর্থকদের ধন্যবাদ জানিয়ে এ সময় তিনি বলেন, ‘সবশেষে অবশ্যই সমর্থক, যারা বাংলাদেশের ক্রিকেটের প্রাণ, আপনাদের সহযোগিতা ছাড়া এটা অবশ্যই সম্ভব হতো না। আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ।’

পুনরায় অবসরের ঘোষণা দিয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেটকে অনন্য মর্যাদায় নিয়ে যাওয়া এই অধিনায়ক বলেন, ‘আজকে আমি আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় দলের অধিনায়ক থেকে সরে যাচ্ছি। অবসরে যাচ্ছি। আর আগামীকাল জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে থার্ড ওডিআই অবশ্যই অধিনায়ক হিসেবে আমার শেষ ম্যাচ। খেলোয়াড় হিসেবে আমি অবশ্যই সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করব।’

এরপর সাংবাদিকদের প্রশ্নবাণ ছুটে যায় মাশরাফির দিকে। কেউ তার উত্তরে সন্তুষ্ট হয়েছেন, কেউ হতে পারেননি। তবুও মাশরাফি সবগুলো প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন মনখুলে। জানিয়েছেন সিদ্ধান্ত নেওয়া তার জন্য কঠিন ছিল, কিন্তু বেশি ভাবাভাবি করেননি।

শেষ হতেই সাংবাদিকদের হুড়োহুড়ি, অধিনায়ক মাশরাফির সঙ্গে একটি সেলফি তোলার আকুতি। মাশরাফিও কাউকে হতাশ করেননি। নিরাপত্তা রক্ষীদের বাধা সত্ত্বেও সবার সঙ্গেই ছবি তুলেছেন। অনুশীলনের জন্য মাঠে যাওয়ার পর সতীর্থরাও ছবি তোলেন তার সঙ্গে।

অধিনায়ক হিসেবে মাশারাফি ৮৭ ম্যাচ খেলে ১০১ উইকেট নিয়েছেন। ওভার প্রতি দিয়েছেন ৫ দশমিক ১২ রান। সেরা বোলিং ফিগার ২৯ রানে চার উইকেট।

অধিনায়ক না থাকা অবস্থায় ১৩২ ওয়ানডেতে নিয়েছেন ১৬৮ উইকেট। সেরা বোলিং ফিগার ২৬ রান দিয়ে ছয় উইকেট। ওভার প্রতি দিয়েছেন ৪ দশমিক ৭১ রান করে।

তার নেতৃত্বেই এক দিনের ক্রিকেটে বাংলাদেশ সাফল্য দেখেছিল। ২০১৫ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালের পর ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালে খেলে বাংলাদেশ। আইসিসির কোনো আসরে এটাই বাংলাদেশের সেরা অর্জন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *