সন্তানকে নিয়েই বাকি জীবনের স্বপ্ন তাদের

Spread the love

নাগরিক ডেক্স : বিয়ে হলে ক্যারিয়ার শেষ-এটি যেন একজন অভিনেত্রীর জীবনের অলিখিত সত্য। আর এমন ধ্যান-ধারণা নিয়েই চলেন আমাদের দেশের বেশিরভাগ অভিনেত্রী। তাই বিয়ের খবরটি তারা সুনিপুণভাবে লুকিয়ে রাখেন ভক্ত-দর্শকের কাছ থেকে। অথচ এই লুকোচুরির অনেক গল্প প্রায় সবার জানা। অনেকে অবশ্য বিয়ের পরও কাজ করছেন।

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক তাজুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, ‘বেশিরভাগ তারকা আত্মপ্রেমে ভোগেন। অনেক তারকার ধারণা, শুধু বিয়ের কারণে তাদের প্রতি ভক্ত কিংবা সাধারণ দর্শকের আকর্ষণ ও আগ্রহ কমে যাবে। এ কারণে বিয়ের খবর প্রকাশ করে ঝুঁকি নিতে চান না। তবে আমি বলব, বিয়ের কারণে তারকার জনপ্রিয়তা মোটেই হারায় না। তাই গোপনে বিয়ে নয়, সবাইকে জানিয়ে বিয়ে করা উচিত।’

আবার দেখা যায় সন্তান হওয়ার পর টিকছে না অভিনেত্রীর সংসার! তবু সন্তান নিয়ে স্বপ্ন দেখছেন তারা। যার সবচেয়ে বড় উদাহরণ জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা শাবনূর ও অপু বিশ্বাস।

অভিনেত্রীদের জীবন

শাবনূর

২০১২ সালের ২৮ ডিসেম্বর ভালোবেসে দুই পরিবারের সম্মতিতে বিয়ে করেন শাবনূর ও অনীক মাহমুদ। বিয়ের পরের বছরই ২৯ ডিসেম্বর এই দম্পতির ঘর আলোকিত করে আসে ছেলেসন্তান। নাম আইজান নিহান। শাবনূরের পারিবারিক সূত্র জানায়, গত ২৬ জানুয়ারি স্বামী অনীককে তালাক দিয়েছেন শাবনূর। নিজের সই করা নোটিশটি আইনজীবীর মাধ্যমে অনীক মাহমুদের কাছে পাঠান তিনি।

‘সন্তান জন্মের পর থেকেই আমাদের মধ্যে একটা দূরত্ব তৈরি হয়। অনেকগুলো বিষয়ে মতের অমিল হচ্ছিল। এর পর আমরা আলাদা থাকা শুরু করি। সন্তান জন্মের পর অনীক কোনো দায়িত্বশীল আচরণ করত না। অনেকবার বলার পরও তার দায়িত্ব আর আচরণগত পরিবর্তন আসেনি, তাই ভাবলাম এভাবে থাকার চেয়ে না থাকাটাই ভালো। যদিও শুরুতে ভেবেছিলাম একটা সময় উপলব্ধিতে পরিবর্তন আসবে।

কিন্তু তা আর হলো না। এর পর অনীকের বাবা-মায়ের সঙ্গেও কথা বলেছি। অনেক চেষ্টার পরও বনিবনা হচ্ছিল না। আইনজীবীর মাধ্যমে ২৬ জানুয়ারি তালাক নোটিশ অনীকের বাসায় পাঠানো হয়।’ কথাগুলো বলেছেন চিত্রনায়িকা শাবনূর। তিনি আরও বলেন, ‘এখন আমার সব স্বপ্ন ছেলেকে ঘিরে। তাকে মানুষের মতো মানুষ করাই আমার একমাত্র দায়িত্ব। সন্তানের জন্যই আর বিয়ে করব না।’

আজমেরী হক বাঁধন

‘আমি স্বতঃস্ফূর্ত, স্বতন্ত্র একজন নারী, একজন সিঙ্গেল মাদার, একটা সুন্দরী কন্যার মা এবং বাংলাদেশের একজন দায়িত্বশীল নাগরিক। আর হ্যাঁ, আমি গর্ব করে বলতে পারি, আমি তালাকপ্রাপ্ত একজন মেয়ে।’ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এই স্ট্যাটাসটি লিখেছিলেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন। ২০১০ সালে বিয়ে করেছিলেন এই লাক্স সুন্দরী। বিয়ের চার বছরের মাথায় সংসারের ইতি টানেন তিনি নিজেই।

এর পর মেয়ে মিশেল আমানী সায়রাকে নিয়েই তার পৃথিবী। বিবাহবিচ্ছেদের কথা দীর্ঘদিন গোপন রেখেছিলেন বাঁধন। বিচ্ছেদের পরও সন্তান যাতে বাবা না হারায়, সেজন্য সম্ভব সবকিছুই করেছেন।

বাঁধনের ভাষায়, ‘বিচ্ছেদের পরও আমরা সন্তান নিয়ে মালয়েশিয়া গিয়েছি। ২০১৭ সালের জুলাই মাসের ঘটনা। সেখানে গিয়ে সায়েরার দিকে তাকিয়ে আমি সিদ্ধান্ত নিই, ওর বাবাকেই আবার বিয়ে করব। সেও রাজি। সব ঠিক। ফিরে কিছুদিন পর (আগস্টের প্রথম সপ্তাহে) শুনলাম, ওই লোক (সায়েরার বাবা) আরেকটা বিয়ে করেছে। অথচ আমাকে বা আমার মেয়েকে কিছু জানায়নি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমিই ওর বাবা আর আমিই ওর মা। আমার পরিচয়েই ও বড় হবে। ও অনেকটা বড় হয়েছে এখন। ওকে একটু কম সময় দিলেও হয়। আর আমার মা-বাবাই ওর দেখভাল করে। আমার শুটিং না থাকলে পুরো সময়টা ওকেই দিই। আমাদের মা-মেয়ের ভীষণ বন্ধুত্ব। ও আমার গার্ডিয়ান।’

অপু বিশ্বাস

ভালোবাসার মানুষ শাকিব খানকে গোপনে বিয়ে করেছিলেন অপু বিশ্বাস। কিন্তু বেশিদিন এক ছাদের নিচে বসবাস হলো না তাদের। পরিণতি বিচ্ছেদ। অপু বলেন, ‘শাকিব খান আগেই আমাকে বলেছিল, আমাদের সন্তান হলেই সে আমাকে ডিভোর্স দিয়ে দেবে। তখন আমি বিষয়টিকে গুরুত্ব দেইনি। কথার কথা মনে করেছিলাম। কিন্তু আজ বুঝতে পারছি বিষয়টা কতটা সত্যি।

শাকিব খান যে কাজগুলো করেছেন দর্শক তাদের বিবেক দিয়ে নিশ্চয়ই তা বিবেচনা করবেন। আমি তাকে ভালোবেসে ঘর ছেড়েছি, পরিবার ছেড়েছি, ক্যারিয়ার ছেড়েছি। বিনিময়ে পেয়েছি অবহেলা আর অসম্মান।’ তিনি আরও বলেন, ‘এখন আব্রাম খান জয়ের বাবা-মা দুটোই আমি। তাকে ঘিরে আমার পথচলা। জয়ের মুখে মা শব্দটি আমাকে নতুন করে বাঁচতে শিখিয়েছে।’

সারিকা

২০১৪ সালের আগস্টে ব্যবসায়ী মাহিম করিমের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল মডেল-অভিনেত্রী সারিকার। বিয়ের এক বছরের মাথায় সারিকার কোলে আসে কন্যাসন্তান শাহরিশ আন্নাহ। ২০১৬-এর নভেম্বরে স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয় তার। ডিভোর্সের পর সন্তানকে নিয়েই পৃথিবী সাজিয়েছেন সারিকা। করছেন অভিনয়। মেয়েকে যথেষ্ট সময়ও দিচ্ছেন। মাঝে মেয়ের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে মিডিয়া থেকে ছিলেন দূরেও। তবে মেয়ে এখন বড়, তাই আবার সরব হয়েছেন নাটক-টেলিছবিতে।

শ্রাবস্তী দত্ত তিন্নি

২০০৬ সালে প্রেম করে বিয়ে করেছিলেন অভিনেতা হিল্লোলকে। তাদের স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক ছিল মাত্র পাঁচ বছর। সংসার ভেঙে যায় ২০১১ সালে। হিল্লোল-তিন্নির ঘর আলোকিত করে এসেছিল কন্যাসন্তান ওয়ারিশা। এখন মেয়ে ওয়ারিশাকে নিয়েই জীবন তিন্নির। তিনি এখন মেয়েকে নিয়ে প্রবাসী হয়েছেন। তারা বর্তমানে কানাডার মন্ট্রিলে বসবাস করছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *