সাংসদ শিখরের উদ্দেশ্যে খোলা চিঠি

Spread the love

নাগরিক ডেস্ক: পক্ষকাল ম্যাগাজিনের সম্পাদক সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজল গত মঙ্গলবার থেকে নিখোঁজ রয়েছেন। সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজলের নিখোঁজ বিষয়টি তুলে ধরে বিশিষ্ট সাংবাদিক পুলক ঘটক মাগুরা-১ আসনের সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শিখরের উদ্দেশ্যে খোলা চিঠি লিখেছেন। পুলক ঘটকের ফেইসবুক খেকে চিঠিটি ডেইলি নাগরিকের পাঠকের জন্য নিম্নে তুলে ধরা হলো :

মাননীয় সংসদ সদস্য,

আপনার দায়েরকৃত মামলায় অভিযুক্ত হওয়ার পর সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজল নিরুদ্দেশ হয়েছেন। তার এই নিখোঁজ হওয়াকে স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবে আমরা নিতে পারছিনা। কারণ অতীতে এরকম কিছু নিখোঁজের নজির আছে যা সমাজকে আতংকিত করে।

আপনি বর্তমানে একজন আইন প্রণেতা। এর আগে দেশের প্রধানমন্ত্রীর এপিএস হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। আপনি অনেক ক্ষমতাসম্পন্ন মানুষ তাতে সন্দেহ নেই। একজন ক্ষমতাধর মানুষ যখন দেশের একজন সাধারণ বা অপেক্ষাকৃত দুর্বল মানুষের প্রতি বিরাগভাজন হন, তখন শঙ্কার জন্ম দেয়। ক্ষমতার অপব্যবহার হওয়ার ভয় থাকে। আপনি বা সরকার রাষ্ট্রক্ষমতার অপব্যবহার করবেন, তা বিশ্বাস করতে চাইনা।

শফিকুল ইসলাম কাজলের স্ত্রী ক্যানসারে আক্রান্ত। অনেকদিন থেকে তিনি দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই করে টিকে আছেন। গণতন্ত্রের লড়াইয়ে তার অনেক অবদান সত্ত্বেও তিনি সরকারের সুবিধাভোগী হতে পারেননি। সাংবাদিকতায় তার অনেক সাহসী কাজ আছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় গণহত্যার অনেক তথ্য তার ক্যামেরায় উঠে এসেছে। একাত্তরের গণহত্যার সাক্ষী শেরপুরের নলিতাবাড়ি উপজেলায় সোহাগপুর বিধবাপল্লীর সচিত্র সংবাদ তিনিই প্রথম তুলে এনেছেন। সাংবাদিকতা করতে গিয়ে তিনি অনেকবার আহত হয়েছেন। বিচার পাননি। আজ তার উপর রাষ্ট্রীয়ভাবে অবিচার করা হলে নিন্দা জানানোর ভাষা থাকবে না।

মাননীয় সংসদ সদস্য, তার বিরুদ্ধে আপনি মামলা করেছেন। এরকম অবস্থায় তিনি মিসিং হয়ে গেলে গোটা বিশ্ববাসী আপনাকে এবং সরকারকে দায়ী করবে। একজন সংবাদকর্মী হিসেবে এবং সাধারণ নাগরিক হিসেবে আপনার প্রতি বিনীতভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি, শফিকুল ইসলাম কাজলকে উদ্ধার করার ব্যাপারে আপনি দায়িত্ব নিয়ে অগ্রণীভূমিকা পালন করুন।

একজন রাজনীতিবিদ এবং সংসদ সদস্য হয়ে আপনি বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দেশের একজন প্রবীণ সাংবাদিক দৈনিক মানবজমিনের সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীসহ ৩২ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। আপনার এই মামলা অনুমান নির্ভর। কারণ যে পত্রিকার সম্পাদকের বিরুদ্ধে আপনি মামলা করেছেন সেই পত্রিকায় আপনার নামটাও লেখা হয়নি। এরকম মামলা অনভিপ্রেত। একজন রাজনৈতিক নেতার কাছে দায়িত্বহীন অরাজনৈতিক আচরণ প্রত্যাশা করা যায়না। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে আপনি আপনার অনুমান নির্ভর মামলা প্রত্যাহার করে নেবেন বলে প্রত্যাশা করি। রাজনৈতিক নেতার কার্যক্রমে সাংবাদিকতায় ভয়ের পরিবেশ তৈরি হলে গণতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আপনার সর্বাঙ্গিন কল্যাণ কামনা করি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *