ঝুঁকির ভিতরেই বাংলাদেশী ডাক্তারদের আনন্দ

Spread the love

সৈয়দ জুয়েল: আইরিশ ডাক্তারদের পাশাপাশি বাংলাদেশী ডাক্তাররাও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে করোনা মোকাবেলায় চিকিৎসা করছেন দ্বিধা, দ্বন্দ আর ভয়কে জয় করে। পৃথিবী ব্যাপী যে মরনব্যাধী করোনা প্রতিরোধের যে যুদ্ধ শুরু হয়েছে তার সম্মুখ ভাগের এ সব বীর যোদ্ধারা পুরো মানব জাতির ক্রান্তিলগ্নে যে ভূমিকা রাখছেন, তাতে সাধারন মানুষের শ্রদ্ধাবোধের নীল ধরনীতে আরেকটু বেশী উজ্বালতা পেল।
আয়ারল্যান্ডে বাংলাদেশী ডাক্তার আছেন প্রায় ৩৫ জনের মত,তাদের অনেকেই এ কঠিন সময়ে বিভিন্ন হাসপাতালে কাজ করছেন নির্ধারিত সময়ের চেয়েও অনেক বেশী সময়ে। কেউ কেউ ১২ ঘন্টার জায়গায় ২০ -২৪ ঘন্টাও ডিউটি করছেন। কাজ নিয়ে কতটা ঝুঁকিতে আছেন? এ বিষয়ে ডাবলিনে কর্মরত ডাঃ মুসাব্বির হোসেন (রুবেল) বলেন- ঝুঁকি নিয়ে কাজ করা আমাদের জীবনেরই একটা অংশ,তাছাড়া মানুষের সেবা করতে সবাই পারেনা,এটা অনেকের ভাগ্যেও থাকেনা।
আমি ভাগ্যবান আমার সে সুযোগ আছে। আর তাই ঝুঁকিতেই আনন্দ পাই। পৃথিবী ব্যাপী এ দূর্যোগে নিজেকে সম্পৃক্ত করতে পারছি-এটা তো সৌভাগ্যের। এ বিষয় বাংলাদেশী আরেক ডাক্তার সায়িদ মাহমুদ আলী রেজা,যিনি কেরি ইউনিভার্সিটি হাসপাতালের আই,সি,ইউ তে কর্মরত আছেন, তিনি বলেন-ঝুঁকিপূর্ন তো অবশ্যই, তবে আমাদের যথেস্ট পরিমান ট্রেনিং দিয়েই এ সেবায় সম্পৃক্ত করা হয়, তারপরও ভয় তো থেকেই যায়। তবে ডাক্তার হিসেবে যখন কোন রুগীকে সুস্থ হয়ে বাড়ী ফিরে যেতে দেখি, তখন নিজেকে গর্ববোধ করি,তখন ভয় না পেয়ে আরো আনন্দ পাই। দেশের কিছু অনিয়ম দেখে যেমন দুঃখবোধ হয়, আবার দেশ ও দেশের মানুষের সাফল্যে বুকটা ভরেও যায়। ইউরোপের যে কয়টি দেশ ঝুঁকির ভিতর আছে,আয়ারল্যান্ডও সেই তালিকায়। প্রতিদিন আয়ারল্যান্ডে আক্রান্ত আর মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে দ্রæত। এর মাঝে বাংলাদেশী ডাক্তারদের পথচলায় গর্বিত হচ্ছে দেশ ও দেশের মানুষ। সুখের স্পর্শ ক্ষনিকের, তবে সেই স্পর্শের-আবেগ,অনুভূতির যে তীর্যক আলো হ্রদয়ে প্রাপ্তির ক্ষত সৃস্টি করে,সে সুখের ক্ষতের দিকে তাকিয়ে একটি জীবন অতিবাহিত করা যায়। সময়টা খুব খারাপ যাচ্ছে পৃথিবীর মানুষগুলোর।
চারিদিকে শুধু লাশের সাঁড়ি,হাত দিয়ে স্পর্শও করা যায়না প্রিয় মুখগুলিকে। যে হাত দিয়ে একসময় সুখ, দুঃখের নির্ভরতার প্রতীক হয়ে রাজত্ব করতো,আজ সে হাত দু খানি ভিখারীর শূন্য থালার মত অসহায়ের মত জানান দেয় তার অক্ষমতার। জীবন মৃত্যুর সন্দিক্ষনে ভেজা চোখের বিস্ময় চাহনিতে তাড়িয়ে বেড়ায় মায়াময় দিনগুলো। যখন প্রিয়জনের মৃত্যুর পরেও ঘর থেকে কবরে রাখার অন্তিম যাত্রায় শেষবারের মত কফিনের কাপড়ের মুরি খুলে শেষবারের মত প্রিয় মুখটি দেখার। আজ পৃথিবীময় যে অনাকাঙ্ক্ষিত বিপর্যয় দেখা দিয়েছে, এর মাঝে কিছুটা হলেও ডাক্তার নামের বীর সৈনিকরা সে বিপর্যয়ের মাঝে সোনালী রৌদ্র হয়ে আশার আলো ছড়াচ্ছেন। সেই সব ত্যাগী, উজ্বল মানুষগুলোর জন্য ভালবাসার সাথে এক নক্ষত্র রাতের আলোঝরা স্যালুট।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *