সাংবাদিকদের বেতন দিতে না পারায় লজ্জিত নাঈমুল ইসলাম খান

Spread the love

নাগরিক রিপোর্ট : দেশের চলমান করোনা দুর্যোগের কারণে আমাদের নতুন সময়, আমাদের অর্থনীতি, ডেইলি আওয়ার টাইম এবং একটি অনলাইন- এই চারটি প্রতিষ্ঠানের কেউ এপ্রিল মাসের বেতন পায়নি। এ চারটি প্রতিষ্ঠানের এর মালিক নাঈমুল ইসলাম খান।। তিনি নিজেই এ বিষয়ে লেখা লিখেছেন তার পত্রিকায়। “লজ্জিত ও ভারাক্রান্ত” হৃদয়ে তিনি এ দুঃসংবাদও দিয়েছেন যে, পরবর্তী দুই মাস বেতন নাও হতে পারে।
এই বকেয়া বেতন পরবর্তী সময়ের কখনো পরিশোধ করা হবে কিনা, সে সম্পর্কেও ওনার ১৬ পয়েন্টের লেখায় কিছু বলা হয়নি। তবে উনি আশা করেছেন এতকিছুর পরও সবাই নিজ উদ্যোগে ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানকে টিকিয়ে রাখবেন এবং নিজেরা টিকে থাকবেন!

নাঈমুল ইসলাম খানের পুরো লেখাটা, তার প্রকাশরীতি অক্ষুন্ন রেখে, নিচে দেয়া হলো:

আমার জীবনে প্রথম, সংবাদপত্র কর্মীদের ১ মাসের বেতন দিতে পারলাম না।আগামী কিংবা তার পরের মাসেও বেতন দেওয়া সম্ভব হবে বলে মনে হচ্ছে না।১৯৮৮ সাল থেকে আজ ৩২ বছর হলো, সংবাদপত্র এবং সাংবাদিকতা বিষয়ক প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছি, সম্পূর্ণ আমার ব্যবস্থাপনায় ছিল এবং এক মাসের বেতন বকেয়া হয়েছে, এপ্রিল ২০২০ এর আগে এমনটি কখনও হয়নি।

আমি লজ্জিত, আমি ভারাক্রান্ত, আমি বিক্ষুদ্ধ।২৬ মার্চ থেকে সংবাদপত্রের ব্যবসা বলতে কিছু নেই, পত্রিকা বিক্রিব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে, সরকারের অধিকাংশ অফিস, আদালত, প্রতিষ্ঠান ছুটিতে।কোথাও কেউ নেই যে নগদ টাকা ধার দেবে, কোথাও কেউ নেই যে বছরের পর বছর বকেয়া পড়ে থাকা বিজ্ঞাপন বিল এই দুঃসময়ে পরিশোধ করবে ।বাংলাদেশ সরকার সংবাদপত্রের জন্য কী সাহায্য করবে, আদৌ করবে কি না এখন পর্যন্ত স্পষ্ট নয়।

সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের যারা বছরের পর বছর বিজ্ঞাপনের বিল বকেয়া রেখেছেন, এসময় টেলিফোনও ধরছেন না।আমরা লক্ষ্য করছি দেশে বিদেশে অনেক বড় বড় মিডিয়াপ্রতিষ্ঠান বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে, কর্মী ছাঁটাই করছে, কর্মীদের বেতন ভাতা কমাচ্ছে, কেবলই টিকে থাকার জন্য যা পারছে তাই করছে।

আমিও দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে সকলকে জানাতে চাই, এ সময় শুধু করোনা মহামারী পরিস্থিতিটায় ন্যূনতম অস্তিত্ব রক্ষা করে অতিবাহিত করতে পারাই আমাদের জন্য বিশাল চ্যালেঞ্জ। এ সময়ে আমাদেরকেও কিছু অনভিপ্রেত সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে, আরও এক বা দুই মাস বেতন পরিশোধ করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নাও হতে পারে । এ সময় সকল কর্মী ভাইদের নিজ নিজ উদ্যোগে ব্যবস্থা করে প্রাতিষ্ঠানকে টিকিয়ে রাখা এবং যে যেভাবে পারবেন নিজেদেরকেও টিকে থাকার জন্য কাজ করতে সনির্বন্ধ অনুরোধ জানাচ্ছি।তবে যত আর্থিক অনটনেই থাকি না কেন আমাদের যে কারও সত্যিকারের অনন্যোপায় অবস্থায়, যে কোনো চ্যালেঞ্জে আমরা সকলে নিজেদের সর্বোচ্চ সামর্থ নিয়ে একে অপরের পাশে থাকবো অবিচল, ইনশাআল্লাহ।

আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি ইনশাআল্লাহ এই মহামারী অনেক বেশি দিন থাকবে না এবং আমাদের দুঃসময়ও দীর্ঘদিন থাকবে না, আমরা আমাদের প্রতিষ্ঠানকে আবারও মার্চ ২০২০ এর অবস্থানেই কেবল ফিরিয়ে আনব না বরং সে অবস্থানকেও ছাড়িয়ে যাবো।অপ্রত্যাশিত, অস্বাভাবিক এবং আচমকা যে আঁধার আমাদের গ্রাস করেছে সেটা ভেদ করে অদূর ভবিষ্যতেই আলো আসবে।

আমাদের প্রতিষ্ঠান হবে এদেশের অন্যতম সেরা এবং আমাদের গৌরবের ও আমাদের সকলের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিরও।

প্রসঙ্গত, করোনা দুর্যোগের মধ্যে বিভিন্ন সংবাদপত্র ও টেলিভিশনের সাংবাদিক এবং গণমাধ্যমকর্মীদের ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদ জানিয়েছে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)।মঙ্গলবার (৫ মে) এক বিবৃতিতে ডিইউজের সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ ও সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু এই প্রতিবাদ জানান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *