কন্যা সন্তান এক রাজকন্যা

Spread the love

সৈয়দ জুয়েল: অভাবের সংসারেই হোক আর রাজপ্রসাদেই হোক, প্রায় প্রতিটি বাবার কাছেই তার কন্যা পৃথিবীর সেরা সুন্দরীর ঈর্ষনীয় এক রাজকন্যা। কৃষ্ণ অথবা শ্যাম বর্ন যাই হোক না কেন বাবার কাছে সে তো শ্বেত পাথরের ঘাট বাধানো পুকুরের সদ্য ফোঁটা শ্বেত পদ্ম। দেখেই মন ভরে যায়, ছুঁয়ে দেখেনা নজর লাগার ভয়ে। পদ্ম ফুলের পাতায় যেমন জল আটকে থাকতে পারেনা, তেমনি কন্যাদের চোখেও বাবারা জল আটকাতে দেয় না। জন্মের পরে কন্যা সন্তানটিকে যে বাবা আগলে রাখলো বুকের একদম সুরক্ষিত চৌকাঠে, স্কুল পেড়িয়ে কলেজে যাওয়ার সাথে সাথে নিরাপত্তাহীনতা যেন বেঁকে বশে বাবাদের নিঁখাদ ভালবাসার আঙ্গিনায়। বখাটেদের লোলুপ দৃস্টি বাবাদের অন্তরে রক্তক্ষরন হয়, অনেক বাবা প্রানও দিয়েছেন প্রতিবাদে।
যে বাবা তার রাজকন্যাকে অনুভবের রাজপ্রসাদে নিরাপত্তা দিয়েছিলো ১৮টি বছর। কলেজ, বিশ্ব বিদ্যালয়ের ৭-৮ বছর সমাজ ও রাস্ট্র তার নিরাপত্তা দিতে ব্যার্থ। অনেক মেয়ে আতœাহুতিও দিয়েছে,যার সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়। একেকটি মৃত্যু যেন পুরো সমাজ ব্যাবস্থার উপর উপহাসের বিদ্রæপ হাসির পেরেক ঠুকে দিয়ে আমাদের অক্ষমতার জানান দেয়। শুধু শিক্ষাঙ্গনেই নয়, মেয়েকে বিয়ে দেয়ার পরও বাবাদের চোখ ছলছল করে আদরের কন্যার শশুড় বাড়ী কর্তৃক পৈশাচিকের ক্ষত দেখে। যে শরীরটাকে ছোটবেলায় সূর্যের খরতাপ লেগে কালো হয়ে যাওয়ার ভয়ে বাবারা নিজের গায়ের জামাটা খুলে কন্যাকে ঢেকে রাখতো, আজ সেখানে সাঁড়ি সাঁড়ি কালোর আঁচড়ে বাবাদের বুকের পাঁজরের হারগুলো যেন নিরব অভিশাপের এক একটি লৌহ পিন্ড হয়ে আছড়ে পরে নৈতিকতা আর মানবতা বোধের শ্রদ্ধাহীন, লাগামহীন সমাজ ধ্বংসের দরজায়।
অনেকে আবার এ নির্যাতনে মৃত্যু হয়েও যেন স্বস্তি পায়না, আতœহত্যা বলে অপবাদ দিতে গিয়ে গলায় রশি পেঁচিয়েও ঝুলিয়ে রাখতে হাত কাঁপেনা এতটুকু। বাবা যখন তার মেয়ের মুখটি দেখে- চোখ তার উপরে, জিহ্বাও বাঁকিয়ে যেন বাবাকে তার জীবনে ঘটে যওয়া অব্যাক্ত কথাগুলো না বলতে পারার গল্পটা জমিয়ে বেশ কস্টই পেয়েছিলো, এ জনমে বাবাকে কস্ট না দিয়ে পরজনমে ভালবাসার কোন শীতল ছাঁয়ায় বসে বাবার কাঁধে মাথা রেখে বাকী গল্পটা বলবে, এ হয়তো মেয়ের একান্তই চাওয়া। যে বাবা শিশুকালে হিজল ফুলের গোলাপী, সাদার কারুকাজে আমার ছোটবেলা রাঙ্গিয়ে রাখতো, মরনে লাল রংয়ের আল্পনা বড়ই বেমানান।
প্রতিটি বাবাই তাদের কন্যাদের কাছে এক একজন রাজা। আর রাজকন্যারা তাদের রাজপ্রাসাদের চারিধারে নুপুর পায়ে চঞ্চলা হয়ে ঘুরে বেড়াবে অসঙ্কোচের আঁধার কেটে। খুব বেশী চাওয়া নয় সমাজ ও রাস্ট্রের কাছে। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা এ মৌলিক অধিকারগুলো না পেয়ে জাতি অভ্যস্ত হয়ে গেছে হয়তো, কিন্তু নিরাপত্তা দিতে রাস্ট্র ব্যার্থ হলে জাতিকে খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলতে হবে। যেটা গনতন্ত্রের জন্য অশনি সংকেত। আমাদের কন্যারা আমাদের ভবিষ্যৎ দেশ গড়ার কারিগর। কারন তারাই একদিন মা হবে, সেই সন্তানরাই নেতৃত্ব দিবে। তাই কন্যা সন্তানদের নিরাপত্তা দিয়ে সুস্থ সমাজ গঠনের এখনই সময়। ভাল থাকুক পৃথিবীর সকল রাজকন্যারা। তোমাদের হাত ধরেই শুরু হবে আমাদের মুক্ত হাওয়ার বিশুদ্ধ ভালবাসার পথচলা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *