বানারীপাড়ায় ১৪ জন হতদরিদ্রদের চাল ৪ বছর ভোগ করছেন তিন ইউপি সদস্য

Spread the love

নাগরিক রিপোর্ট : বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার ইলুহার ইউনিয়নের ১৪ জন হতদরিদ্র চলমান করোনা সংকটে সরকারি অর্থ সহায়তা পেতে ইউনিয়ন পরিষদে যোগাযোগ করেন। সেখানে গিয়ে তারা জানতে পারেন ২০১৬ সাল থেকে তারা খাদ্যবান্ধব কর্মসুচীর আওতায় ১০ টাকা কেজি দরে চাল সুবিধাভোগী। এজন্য নগদ অর্থ সহায়তা সুবিধা পাবেন না। অথচ এ ১৪ জন হতদরিদ্র গত সাড়ে ৪ বছরে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীর এক মুঠো চালও পাননি।
তারা অভিযোগ করেছেন ইলুহার ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) তিন সদস্য তাদের নামে কার্ড করে খাদ্যবান্ধন কর্মসূচীর চাল তুলে আত্মসাত করেছেন। প্রতারিত এ ১৪ জন হতদরিদ্র এ অভিযোগ জানিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং দূর্ণীতি দমন কমিশনে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
অভিযুক্তরা হলেন- ইলুহার ইউপির ৭ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য (মেম্বর) ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম, ৯ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম মন্টু এবং ১ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য আবুল কালাম।
তাদের প্রতারনার শিকার ভূক্তভোগীরা হলেন- ভুক্তোভোগীরা হলেন, ইলুহার ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মলুহার গ্রামের আব্দুল মজিদ (কার্ড নম্বর ৮১২), মো. সুলতান (কার্ড নম্বর ৮৫২ ), জাকির হোসেন (কার্ড নম্বর ৮১৭), আব্দুছ ছালাম (কার্ড নম্বর ৮৬৩), মেজবাউদ্দিন (কার্ড নম্বর ৮৬৭, মো. মাসুম (কার্ড নম্বর ৮৭২), মো. ফজলু (কার্ড নম্বর ৮৬৬), জহিরুল, ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মলুহার গ্রামের দিনমজুর আনোয়ার হোসেন (কার্ড নম্বর ১০৬৭), মো. তারিক (কার্ড নম্বর ১১১৩), ইসরাত জাহান (কার্ড নম্বর ১০৪৪), ১ নম্বর ওয়ার্ডের ইলুহার গ্রামের মো. মনিরুল (কার্ড নম্বর ৫৭), সাহাদাত হোসেন (কার্ড নম্বর ৬১) এবং মো. মজিবর (কার্ড নম্বর ৫৩) ।

ভুক্তোভোগীরা লিখিত অভিযোগে বলেন, ১০ টাকা কেজি দরে চাল দেয়ার কথা বলে উল্লেখিত তিন ইউপি সদস্য ২০১৬ সালে তাদের কাছ থেকে জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি নেন। এ পর্যন্ত তারা এক মুঠো চাল পাননি। কার্ডটিও চোখে দেখেননি। করোনা পরিস্থিতির কারনে সরকার দরিদ্রদের নগদ সহায়তা দিবে- এমন খবর জানতে পেরে ঈদের আগে তারা ইউপিতে যোগাযোগ করেন। সেখানে তারা জানতে পারেন, তাদের নামে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির কার্ড রয়েছে। নিয়মিত চালও তোলা হচ্ছে। এজন্য নগদ অর্থ সহায়তা পাবেন না তারা।
ভুক্তোভোগীরা লিখিত অভিযোগে আরও বলেন, ১ নম্বর ওয়ার্ডের ডিলার মো. ইয়াছিনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান মেম্বর আবুল কালাম অভিযোগকারীদের মধ্যে ওই ওয়ার্ডের ৩ জনসহ ১২ জনের চাল উঠিয়ে নিয়েছেন। কার্ডগুলো মেম্বর আবুল কালামের কাছে আছে।
বিষয়টি জানাজানি হলে মেম্বর আবুল কালাম অভিযোগকারী ওই ওয়ার্ডের ৩ জনের কার্ড ফেরৎ দেন। কার্ডগুলোতে দেখা যায়, তাদের স্বাক্ষর জাল করে ২০১৬ সাল থেকে ১৭ বার প্রতি কার্ডের মাধ্যমে ৩০ কেজি করে মোট ৫১০ কেজি চাল তুলে আত্মসাৎ করা হয়েছে। একইভাবে ৭ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বর আব্দুস সালাম ৮ জনের ও ৯ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য সিরাজুল ইসলাম মন্টু ৩ জনের চাল আত্মসাৎ করেছেন।
অনিয়মের বিষয়ে ডিলার মো. ইয়াছিন বলেন, যিনি কার্ড নিয়ে এসেছেন তাকে চাল দেওয়া হয়েছে। যাদের কার্ড হারিয়েছে তাদের চাল অন্য কেউ তুলে নিয়ে গেছেন। একবার ১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক মো. শহীদ ও স্থানীয় রব আমীন ১২ জনের কার্ডের চাল তুলেছেন। দরিদ্রদের চাল আওয়ামীলীগ নেতা কিভাবে নিলেন জানতে চাইলে ডিলার কোনো উত্তর দিতে পারেননি।
চাল আত্মসাতের অভিযোগ প্রসঙ্গে ৭ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বর আব্দুস সালাম বলেন, ‘অভিযোগকারীদের বগত সময়ে কার্ডের মাধ্যমে চাল নিতে বলা হয়েছিল ।তারা চাল তোলেননি’
৯ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বর সিরাজুল ইসলাম মন্টু বলেন, ‘তালিকা তৈরীর পর ডিলার বা উপকারভোগীর কাছে কার্ড থাকার কথা। শুনেছি অনেকে সেই কার্ড রক্ষনাবেক্ষন করেননি। এসব কারনে হয়তো দু’একজন সময়মত চাল পাননি’।
১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য (মেম্বর) আবুল কালাম বলেন, তার ওয়ার্ডের ৩টি কার্ড ডিলার ইয়াছিন হারিয়ে ফেলেছিল। এ কারনে তাদের চাল উত্তোলনে সমস্যা দেখা দেয়।
ইলুহার ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. শহিদুল ইসলাম জানান, করোনা পরিস্থিতির কারনে চালের চাহিদা বেড়েছে। চালের দাম যখন কমছিল অনেকে বিষয়টি গুরুত্ব দেয়নি। কার্ড থাকা সত্ত্বেও তারা চাল নেননি। এখন তারাই এ ধরনের অভিযোগ তুলছেন।
বানরীপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শেখ আব্দুল্লাহ সাদীদ সাংবাদিকদের জানান, চাল আত্মসাতের একটি অভিযোগ তিনি পেয়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।## (রিপোর্ট- সুমন চৌধুরী)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *