ইমামকে জুতার মালা পড়ানো চেয়ারম্যান লাপাত্তা, আটক-১

Spread the love

নাগরিক রিপোর্ট: বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জে শহিদুল ইসলাম আলাউদ্দিন নামে এক মসজিদের ইমামকে জুতার মালা গলায় ঝুলিয়ে নাজেহাল করেছেন ইউপি চেয়ারম্যানসহ শালিসদাররা। উপবৃত্তির টাকা আতœসাতের অভিযোগে বুধবার ইউনিয়ন পরিষদে এমন বর্র্বর বিচার করেন স্থানীয় চেয়ারম্যান মোস্তফা রাঢ়ী। আলাউদ্দিন ওই এলাকার একটি মাদ্রাসার অফিস সহকারী। বুধবার রাতে এ ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তোলপাড় ঘটে। অভিযোগ উঠেছে, চেয়ারম্যান মোস্তফাসহ শালিসদাররা ইমামকে নাজেহালের পাশাপাশি নির্যাতনও করেছেন। এসব ঘটনায় দায়ের করা মামলায় বৃহস্পতিবার মেহেন্দীগঞ্জের এক মাতব্বরকে আটক করেছে পুলিশ। তবে ঘটনার মুল হোতা দড়িরচর খাজুরিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তফা রাঢ়ী লাপাত্তা হয়ে গেছে। গুঞ্জন রয়েছে, চেয়ারম্যান প্রভাশালী এক জনপ্রতিনিধির আস্থাভাজন হওয়ায় আইনশৃংকলাবাহিনী শুরুতে তাকে আটকের চেস্টা করেনি।
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়- দড়িরচর খাজুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদে বিচারকালে ইমাম আলাউদ্দিনের গলায় জুতার মালা ঝুলিয়ে দিয়ে চেয়ারম্যান মোস্তফা রাঢ়ী শাসাচ্ছেন। এসময় চেয়ারম্যান ধুমপান করছিলেন। একই সময়ে অভিযোগকারী ইউপি সদস্য ছত্তার শিক্ষকের কাছে গিয়ে তার মাথার টুপি খুলে নিয়ে যান। ইউনিয়ন পরিষদের চারদিকে সাধারন মানুষের জটলা দেখা গেছে। এসময় নির্যাতনের শিকার ওই ইমামকে বিমর্ষ দেখা গেছে। এমনকি ইমাম আলাউদ্দিনকে জুতার মালা পড়িয়ে ঘুরানোও হয়েছে।
জানা গেছে, ইউনিয়ন পরিষদে বিচারকালে ইউপি চেয়ারম্যানসহ ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য (মেম্বর) শহিদুল ইসলাম, ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য (মেম্বর) মো. ফিরোজ, বজলু আকন, আবুল বয়াতী, মো. কামরুজ্জমান, রিন্টু দেওয়ান সহ বেশ কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন।
মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পিযুষ চন্দ্র দে এ তথ্যর সত্যতা স্বীকার করে বলেন, একজন কে ইমামকে উনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যানের এধরনের শাস্তি দেয়ার কোন অধিকার নেই। এটা অগ্রহনযোগ্য। ঘটনাটি তদন্তের জন্য উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহন চলমান রয়েছে।
জানতে চাইলে দড়ির চর খাজুরিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তফা রাঢ়ী জানান, আলাউদ্দিন দড়িরর চর খাজুরিয়া দাখিল মাদ্রাসার অফিস সহকারী। তিনি পার্শবর্তী শিকদার বাড়ি জামে মসজিদের ইমাম। আলাউদ্দিন সম্প্রতি ওই মাদ্রাসার ১ ছাত্রীর উপ বৃত্তির টাকা আতœসাত করেছেন। এ ঘটনায় ছাত্রীর খালু ছত্তার সিকদার ইউনিয়ন পরিষদে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। ওই অভিযোগের ভিত্তিতে তিনি (চেয়ারম্যান) সহ ২জন ইউপি সদস্য শহিদ ও ফিরোজ এবং স্থানীয় ৪জন গন্যমান্য ব্যক্তি বুধবার দুপুরে সালিশে বসেন। সেখানে সালিশদাররা বিচারে রায় দেন যে ইমাম আলাউদ্দিন উপ বৃত্তির ৪ হাজার ৮শ টাকা ফেরত দিবে নতুবা জুতার মালা পড়বে। এ অবস্থায় ওই ইমাম স্বেচ্ছায় জুতার মালা পড়তে রাজি হন। পরে সকলের উপস্থিতিতে ইউনিয়ন পরিষদে জুতার মালা পড়িয়ে ইমামকে ঘুরানো হয়।
তবে মসজিদের ইমাম শহিদুল ইসলাম আলাউদ্দিন সাংবাদিকদের জানান, তার মাদ্রাসার ওই শিক্ষার্থীর মোবাইল না থাকায় তার মোবাইলে উপ বৃত্তির টাকা আসে। ওই টাকা নিয়ে এর আগেও একবার অভিযোগকারী সাবেক ইউপি সদস্য ও সেচ্ছাসেবকলীগ নেতা আ: ছত্তার তাকে নাজেহাল করেছে। বুধবার প্রকাশ্যে তাকে ইউনিয়ন পরিষদে ডেকে নিয়ে জুতার মালা পড়িয়ে দেয়া হয়। এমন বর্বর আচারনের পর ঘর থেকে লজ্জায় বেড় হতে পাড়ছেন না। তিনি এ ঘটনার থানায় চেয়ারম্যানসহ অভিযুক্তদের আসামী করে মামলা করেছেন।
এব্যাপারে মেহেন্দীগঞ্জ থানার ওসি আবেদুর রহমান বলেন, লাঞ্চিত করার ঘটনায় ইমাম আলাউদ্দিন স্থানীয় চেয়ারম্যানসহ ৯জনকে আসামী করে বৃহস্পতিবার মামলা দায়ের করেছেন। ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে বজলু আকন নামে স্থানীয় এক মাতব্বরকে আটক করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে সার্কেল এসপি সুকুমার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *