সব দলেরই স্বাদ নিয়েছে পাষান্ড চেয়ারম্যান মোস্তফা

Spread the love

নাগরিক রিপোর্ট: কখনই রাজনীতিক ছিলেন মোস্তফা রাঢ়ী। পেশায় কাপড় ব্যবসায়ী। ব্যবসায় অর্থ বিত্তেরও মালিক হয়েছেন। অক্ষর জ্ঞান সম্পন্ন এ ব্যক্তি সমাজে নিজের স্থান করে নিতে ২০১১ সালে বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার দড়িচর-খাজুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সদস্য প্রতিদ্ব›িদ্বতা করে জয়ী হন। ২০১৬ সালে নির্বাচিতহ হন ইউপি চেয়ারম্যান। আওয়ামলীগের স্বর্ণযুগে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে হারান তিনি। এসময়ের মধ্যে বিএনপি ও আওয়ামীলীগ দুটি দলেরই স্বাদ গ্রহন করেছেন তিনি। উভয় দলেরই স্থানীয় নেতাদের পছন্দের সেই চেয়ারম্যান অনেকটা উড়ে এসে জুড়ে বসে হঠাৎ এলাকায় দাপুটে হয়ে উঠেন। মেঘনাবেষ্টিত মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগে স্থানীয় কোন্দলের সুযোগে সংসদ সদস্য ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাধারন সম্পাদক পংকজ নাথের প্রত্যক্ষ সমর্থনে মোস্তাফা রাঢ়ী স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে হারান বলে একাধিক সুত্র নিশ্চিত করেছে।
গত বুধবার নিজ ইউনিয়নের এক মসজিদের ইমামকে জুতার মালা পড়িয়ে ঘোরানোর ঘটনায় দেশব্যাপী আলোচিত হন চেয়ারম্যান মোস্তফা রাঢ়ী। চেয়ারম্যান হওয়ার পর থেকে নানান কর্মকান্ডের জন্যও এলাকায় বিতর্কিত ছিলেন তিনি।
বুধবারের ঘটনায় মোস্তাফা রাঢ়ীকে সহযোগী আব্দুস সাত্তারসহ বৃহস্পতিবার রাতে গোয়েন্দা পুলিশ পাশের উপজেলা মুলাদী থেকে গ্রেফতার করেছে। মেহেন্দিগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ আবিদুর রহমান শুক্রবার জানান, চেয়ারম্যান মোস্তাফা রাঢ়ী ও তার সহযোগীকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তাদের রিমান্ড আবেদন চাওয়া হবে বলে ওসি জানিয়েছেন।
মোস্তফা রাঢ়ীর উত্থান সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে নানা তথ্য। স্থানীয় সুত্রগুলো জানিয়েছে, মেঘনার শাখা গজারিয়া নদীর তীরে দড়িচর-খাজুরিয়া ইউনিয়ন নদীভাঙ্গন কবলিত হওয়ায় এ এলাকায় শিক্ষিত ও স্বচ্ছল পরিবার খুবই কম। নি¤œমধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান মোস্তফা রাঢ়ী জীবিকার টানে ৯০ দশকে ঢাকায় চলে যান। তারা দুই ভাই নানান অপরাধমুলক কর্মকান্ডে জড়িয়ে ৯৫ সালে ভাই হানিফ রাঢ়ী ঢাকায় খুন হন। মোস্তফা রাঢ়ী দীর্ঘদিন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ছিলেন। কারামুক্ত হয়ে গ্রামের জমিজমা বিক্রি করে নরসিংদি জেলার মাধবপুরে কাপরের ব্যবসা শুরু করলে বেশ অর্থবিত্তের মালিক হন। ২০১১ সালে এলাকায় ফিরে মেম্বর পদে নির্বাচিত হন। তার দুই ছেলে মাধবপুরে কাপরের ব্যবসা দেখভাল করেন।
দড়িচর-খাজুরিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ন সম্পাদক মাসুম খান জানান, ২০১৩ সালের নভেম্বরে তৎকালীন বিএনপি দলীয় এমপি মেজবাহউদ্দিন ফরহাদের বাসায় গিয়ে মোস্তফা রাঢ়ী বিএনপিতে যোগদেন। এর একমাস পর মেজবাহউদ্দিন ফরাহাদ এলাকায় একটি অনুষ্ঠানে গেলে মোস্তফা রাঢ়ী তার বাড়িতে ভুরিভোজের আয়োজন করেন। মাসুম খান বলেন, তৎকালীন এমপি ফরহাদের সঙ্গে তিনিও মোস্তফা রাঢ়ীর বাড়িতে দুপুরে খেয়েছিলেন। তৎকালীন সময়ে আওয়ামীলীগ দলীয় ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের বয়াতি জানান, তখনকার বিএনপি দলীয় এমপির আগমন উপলক্ষে মোস্তফা রাঢ়ী তিনটি তোরন করার অনুমতি চাইলে তাকে একটি তোরন করার অনুমতি দেয়া হয়েছিল।
এ ঘটনার দুই বছর পরই নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আব্দুল কাদের বয়তির বিরুদ্ধে চশমা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন মোস্তফা রাঢ়ী। এ সম্পর্কে জানতে চাইলে আব্দুল কাদের বয়তি বলেন, তার পেছনে অদৃশ রাজনৈতিক শক্তি রয়েছে। যে কারনে ভোটের আগে রাতে পুলিশ প্রশাসন আমার কর্মীদের গ্রেফতার করে এলাকা ছাড়া করেছে, পরদিন মোস্তফা রাঢ়ীকে কেন্দ্র দখলে সহযোগীতা করেছে।
মোস্তফা রাঢ়ী আওয়ামীলীগের একাংশের সমর্থনে চেয়ারম্যান হয়েছেন কি-না জানতে চাইলে দড়িচর-খাজুরিয়া ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি সালাম দেওয়ান বলেন, ‘তিনি স্বতন্ত্র নির্বাচন করে জয়ী হন, পরে আমরা তাকে মেনে নিয়েছি’। সালাম দেওয়ান দাবী করেন, মোস্তফা রাঢ়ী চেয়ারম্যান হওয়ার পর আওয়ামীলীগ করছেন। তবে দলে এখন পর্যন্ত তার কোন পদ নেই।
এলাকার এক প্রবীন স্কুল শিক্ষক জানান, শিক্ষা-দিক্ষা না থাকায় মোস্তফা রাঢ়ীর আচরন ছিল উদ্ভট। যে কারনে সামাজিক অনুষ্ঠানে তাকে দাওয়াত করা হত না। মাদক পান করে এলাকায় অসামাজিক আচরন এবং নারী সংক্রান্ত একাধিক অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে।
স্থানীয় সুত্রে জানা, ২০১৮ সালে চেয়ারম্যান মোস্তফা রাঢ়ীর বাড়ি থেকে ৬২ বস্তা চাল উদ্ধার করেছিলেন জেলা প্রশাসনের এক নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট। অদৃশ্য কারনে ওই ঘটনার তদন্ত না হওয়ায় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেয়া যায়নি।
প্রসঙ্গত, এক ছাত্রীর উপবৃত্তির ১৬০০ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ তুলে দড়িচর-খাজুরিয়া দাখিল মাদরাসার অফিস সহকারী ও স্থানীয় একটি মসজিদের ইমাম শহিদুল ইসলাম আলউদ্দিনকে বুধবার ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে জুতামালা পড়িয়ে বাজারে ঘোরান চেয়ারম্যান মোস্তফা রাঢ়ী ও তার সহযোগীরা। ওই রাতেই এ দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। ফলে তোলপাড়া ঘোটে সর্বত্র। এ ঘটনায় আলউদ্দিন চেয়ারম্যান সহ ১০ জনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *