করোনা রোগীর সেবায় নেই বরিশালের এক ডজন বেসরকারী হাসপাতাল

Spread the love

নাগরিক রিপোর্ট: বরিশালে ক্রমশই বাড়ছে প্রাণঘাতী করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। মঙ্গলবার পর্যন্ত জেলায় ৭০১জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। এদিকে সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে এ অঞ্চলের করোনা রোগীদের একমাত্র ভরসা স্থল বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল(শেবাচিম) কর্তৃপক্ষকে। কিন্তু সরকারী বাধ্যবাধকতা সত্তে¡ও বরিশালের এক ডজন বেসরকারী হাসপাতালে করোনা রোগীরা চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন না। অভিযোগ রয়েছে, বেসরকারী হাসপাতালগুলোতে রমরমা বানিজ্য চললেও উন্নতমানের চিকিৎসা ব্যবস্থা নেই। হাসপাতালগুলোর এমন বেহাল চিকিৎসা ব্যাবস্থার কারনেই আধুনিক হাসপাতাল হিসাবে পরিচিত বরিশাল রাহাত আনোয়ার হাসপাতালের স্বত্বাধিকারী ডা. আনোয়ার হোসেনকেও চিকিৎসার অভাবে প্রান দিতে হয়েছে। এ ঘটনায় ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে জনমনে।
শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক ডা: বাকির হোসেন বলেন, হাসপাতালের ৫৫জন চিকিৎসক, নার্স, স্টাফ করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। এ হাসপাতালে ২২৪ চিকিৎসকের বিপরীতে কর্মরত আছেন মাত্র ৯৬জন। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেনীর ৪২৬জন কর্মচারীর মধ্যে কর্মরত আছেন ৩০২জন। বর্তমানে যে জনবল আছে তা দিয়ে এই মুহুর্তে শত ভাগ সেবা প্রদানে সম্ভাব হচ্ছে না। যেকারনে হাসপাতালে পুর্বের চেয়ে ৩০-৪০ ভাগ পরীক্ষা কমিয়ে আনা হয়েছে। তিনি বলেন, করোনা পরীক্ষা সিভিল সার্জন এর আওতাসহ বেসরকারী উদ্যোগেও করা যেতে পারে। কিন্তু তা না হওয়ায় শেবাচিম হাসপাতালের উপর চাপ পাড়ছে।
খোজ নিয়ে জানা গেছে, বরিশাল নগরীতে এক ডজনেরও বেশি বেসরকারী হাসপাতাল রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য রাহাত আনোয়ার হাসপাতাল, আরিফ মেমোরিয়াল হাসাতাল, মমতা হাসপাতাল, ডায়াবেটিক হাসপাতাল, বেলভিউ হাসপাতাল, ইসলামিয়া হাসপাতাল, রয়েল সিটি হাসপাতাল, সেন্ট্রাল হাসপাতাল, নতুন স্থাপিত সাউথ এ্যপোলো মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতাল। অভিযোগ রয়েছে, ক্লিনিকের আদলে গড়ে ওঠা এধরনের অধিকাংশ হাসপাতাল রোগীদের জিম্মী করে বছরের পর বছর গলাকাটা ব্যবসা করলেও উন্নত চিকিৎসা দিতে ব্যার্থ। অধিকাংশ হাসপাতালেই নেই উন্নতমানের চিকিৎসা সরঞ্জামাদী। হাসপাতালগুলোতে অযাচিত পরীক্ষা-নিরিক্ষা ও অপারেশনের নামে রোগীদের নি:স্ব করার সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে এই নগরতে। একজন চিকিৎসক ও হাসপাতালের স্বত্তাধীকারী ডা: আনোয়ার হোসেনের মৃত্যুর পর এমন আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠেছে এখন বরিশালে।
জানতে চাইলে বরিশাল ক্লিনিক এন্ড ডায়গনস্টিক ওনার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি ও বেলভিউ হসপিটাল এন্ড মেডিকেল সার্ভিস এর চেয়ারম্যান কাজী মফিজুল ইসলাম কামাল বলেন, যেসব হাসপাতাল ৫০ শয্যার, সেগুলোতে করোনা রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেয়া বাধ্যতামুলক করেছে সরকার। বরিশাল নগরীতে ৫০ শয্যার হাসপাতাল রয়েছে রাহাত আনোয়ার, মমতা, আরিফ মেমোরিয়ালসহ কয়েকটিতে। কিন্তু করোনা রোগীর চিকিৎসা দেয়ার মত তেমন সক্ষমতা (আইসিইউ, ভেন্টিলশন ব্যবস্থা) নেই নগরীর বেসরকারী হাসপাতালগুলোতে।
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, তার সংগঠনের সাধারন সম্পাদক ডা: আনোয়ার হোসেন গরীবের চিকিৎসক ছিলেন। নগরীর আধুনিক হাসপাতাল রাহাত আনোয়ারের তিনি মালিক হলেও সেখানে চিকিৎসার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা ছিল না। যেকারনে রাজধানীতে নিয়ে গিয়েও পর্যাপ্ত চিকিৎসার অভাবে মারা যান আনোয়ার। তিনি বলেন, এখন সময় এসেছে বরিশালে বিশেষায়িত হাসপাতাল গড়ে তোলার।
বরিশাল সাউথ এ্যপোলো মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইকবাল হোসেন তাপস বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে তারা ২৫০ শয্যার হাসপাতাল সরকারীভাবে সিভিল সার্জনকে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু সিভিল সার্জন ডা: মনোয়ার হোসেন কোন আগ্রহ দেখাননি। পরে মেট্রোপলিটন পুলিশ চাইলে অসুস্থ পুলিশ সদস্যদের ব্যবহারের জন্য এটি দেয়া হয়েছে। যদিও নতুন এ হাসপাতালে এখন পর্যন্ত কোন রোগী আসেনি। তিনি বলেন, বরিশালের বেসরকারী হাসপাতালে করোনা রোগীদের চিকিৎসা দেয়ার দায়ভার অবশ্যই সংশ্লিস্টদের আছে। বেসরকারী হাসপাতালে ব্যবস্থা না থাকায় আজ ডাঃ আনোয়ারের মত জীবন্ত কিংবদন্তিকে প্রাণ দিতে হল। ডা: আনোয়ারকে নিয়ে রাজধানীর ৩টি হাসপাতাল ঘুরেও সিট পাওয়া যায়নি। এই ব্যার্থতা বেসরকারী হাসপাতালের সংগঠন এড়াতে পারে না। তিনি বলেন, সরকার কেন বেসরকারী হাসপাতাল গুলোকে চিকিৎসা দিতে বাধ্য করে না?
এব্যপারে সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন বরিশালে জেলা সদস্য সচিব কাজী এনায়েত হোসেন শিবলু বলেন, বেসরকারী হাসপাতালগুলো কেবল ব্যবসায়ীক চিন্তায় পরিচালিত হয়। এই করোনায়ও কোন বেসরকারী হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা দেয়ার মনভাব নেই। সিটিকরপোরেশন ও জেলা প্রশাসনের উচিৎ হবে করোনা রোগীর সেবায় এসব হাসপাতালকে বাধ্য করা। এব্যাপারে জানতে বরিশাল জেলা প্রশাসক এস এম অজিয়র রহমনকে মোবাইলে ফোন দেয়া হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *