প্রধামমন্ত্রী এখন উপ প্রধানমন্ত্রী ও আমাদের শিক্ষা

Spread the love

সৈয়দ জুয়েলঃ বিশ্বে যে কয়টি দেশ গনতন্ত্র চর্চা করেন ও তার সুফল ভোগ করেন,আয়ারল্যান্ড তার অন্যতম। নাগরিকের মৌলিক অধিকার আর একে অপরের প্রতি সন্মান এখানে হাত ধরাধরি করে। দু একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছারা শান্তিপ্রিয় এ দেশটি নিয়ে নেতিবাচকের আঙ্গুল কেউ উঠাতে পারবে বলে মনে হয়না। রাজনৈতিক আদর্শে ফিনেগাল ও ফিনেফলের গঠনতন্ত্রে বিস্তর ফারাক, তবে এ দুই বৃহত দল করোনার আর্থিক ক্ষতি থেকে শুরু করে দেশ গঠনে এগিয়ে এসেছে।
গনতন্ত্রের ভাষা কিন্তু এটাই। আরো একটি নিদর্শন দেখা গেল সাবেক ফিনেগালের প্রধানমন্ত্রী লিও ভরদকারের বর্তমান সরকারে উপপ্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেয়ায়। আমাদের দেশের রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে সর্ব স্তরে পদ নিয়ে যারা মামলা,হামলায় পর্যুদস্ত করে নিজেকে জাহির করে ত্যাগী নেতা দাবী করেন,এটা তাদের জন্য বড় এক শিক্ষা।
আমরা বৃটিশ শাসন আর পাকিস্তানি শাসন থেকে বের হয়ে এসেছি বহু বছর আগে,কিন্তু সেই তোষামোদীর রেষ রয়ে গেছে এখনও। একে অপরের প্রাপ্য সন্মানটুকু দিতেও অনেকে কার্পন্য করেন। ইউরোপের সবচেয়ে শক্তিশালী সেবা দেয়া এ দেশটির সংস্কৃতি থেকে ভাল অনেক কিছুই আমরা নিতে পারিনা। আমরা এখনও পরে থাকি একজনের কুৎসা রটানোর জন্য।

এখানেও অনেকে রাজনৈতিক নেতাদের নিয়ে ট্রল করেন,বিশেষ করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী লিও ভরদকার ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী মিহল মার্টিনকে নিয়ে।
কিন্তু এগুলো কখনো নগ্নভাবে হয়না।একজন নাগরিকের তার অধিকার আছে সরকারের সমালোচনা করার,এতে করে এদের হয়রানির স্বীকার হতে হয়না ক্ষমতাসীনদের দ্বারা। যতটা আমাদের দেশীয় রাজনীতিতে সব সরকারই করে থাকেন। ক্ষমতার বদল হয় কিন্তু আমাদের নৈতিকতার পরিবর্তন হয়না। তবে অনেক বাংলাদেশি এ নড়বড়ে জায়গা থেকে অনেকটাই বেরিয়ে এসে আইরিশ সংস্কৃতির ভাল দিকগুলো নিতে শুরু করেছেন। এটা আমাদের জন্য আশার কথা।
তবে এখানে এখনও অনেক দেশীয় ধারার রাজনীতিতে জড়িয়ে পরা রাজনীতিবিদরা দেশের রাজনৈতিক ক্ষমতার দাম্ভিকতা দেখানোর অপপ্রয়াস চালান। দেশে গেলে মামলা,হামলা গ্রেফতারের ভয়ও দেখিয়ে থাকেন। সত্যিই সেলুকাস বিচিত্র রাজনীতি। এত লম্বা সময় এ দেশটিতে থেকে এদের রাজনীতির আদর্শ দেখেও পরিবর্তন হতে পারলামনা আমরা। পরে আছি সেই রাজনীতি নিয়ে,যে রাজনীতি আমাদের ব্যাক্তিগত সম্পর্ককেও করেছে নড়বড়ে। পরিস্থিতি এমন এক দূর্বল জায়গায় যে আওয়ামিলীগ সমর্থক কারো সাথে বি,এন,পির সমর্থকের একটু ভাল সম্পর্ক থাকলেও দলীয় শৃংখলা ভঙ্গের তর্জনী তুলেন। যদিও দলীয় নীতিমালায় এরকম কোন তথ্য নেই।
বাংলাদেশের রাজনীতি এ দেশে প্রতিস্ঠিত হওয়ার কোন সুযোগ নেই,বা বাংলাদেশে ক্ষমতায় থাকা যে কোন সরকার সমর্থিত কর্মীরা এখানে দাপট দেখানোর কোন যৌক্তিকতাও নেই। আইরিশ বাংলাদেশী যারা এখানে আছেন,তাদের নাগরিকত্ব দেয়ার সময় তাদের নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্ব আইরিশ সরকারের অঙ্গীকার নামায় গুরত্বের সাথেই রয়েছে। তাই বাংলাদেশের সরকারে কে বিরোধী দলে আর কে সরকারী দলে তার কুফল কোন আইরিশ বাংলাদেশীদের মাঝে পরবেনা।

এটাই চরম সত্য। তাই বাংলাদেশের রাজনীতির গরম হাওয়া এখানে আসার কোন সুযোগ নেই। বাংলাদেশে কোন পূর্ন মন্ত্রী প্রতিমন্ত্রী হওয়াকে লজ্জার মনে করেন। রাজনীতি যদি জনগনের জন্য করা হয়,তাহলে এ লজ্জা দূর করতে হবে। সাবেক আইরিশ প্রধানমন্ত্রী লিও ভরদকার উপ-প্রধানমন্ত্রী হয়ে যে শিক্ষাটা দিলেন বিশ্ববাসীকে, সেই পথেই রাজনীতি হাঁটার কথা।
দূর্ভাগ্য হলেও সত্য যে- আমাদের রাজনীতি এখনও হাঁটছে উল্টোপথে। যার ক্ষতির সন্মুখীন হচ্ছে আম জনতা। রাজনীতিতে সুবাতাস নিয়ে আসতে হলে রাজনীতিবিদদের নৈতিক পরিবর্তন জরুরী। সুস্থ রাজনীতির ধারা একটি দেশের উন্নতিতে আলোকিত মানুষ তৈরীতেও সহায়ক ভূমিকা পালন করে। অসুস্থ রাজনৈতিক চর্চা থেকে আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলো বের হয়ে সুস্থ ধারায় মিশে আলো ছড়াবে, এটাই প্রত্যাশা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *