জেনে নিন খারাপ দাত রাখলে কি কি সমস্যায় পড়বেন

Spread the love

নাগরিক ডেস্ক : দাঁতের ক্ষয়জনিত কারণ, গোড়া ফোলা এবং পেকে যাওয়া ইত্যাদির ফলে খাদ্যদ্রব্যাদির সঙ্গে নানা ধরনের মারাত্মক রোগের জীবাণু পাকস্থলীতে প্রবেশের সুযোগ পায় এবং এই জীবাণুই পরবর্তীতে দেহের অভ্যন্তরে কঠিন ও সংক্রামক রোগের সৃষ্টি করে। দাঁতের স্বাস্থ্য ভালো থাকলে দেহকে সুস্থ রাখা যায় এ কথা নিঃসন্দেহে প্রমাণিত হয়েছে। পোকা লাগা দাঁতের রোগের নাম ‘ডেন্টাল ক্যারিজ’। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরিপে দেখা গেছে যে, বর্তমানে উন্নয়নশীল দেশে অর্থাৎ আমাদের মতো দেশে এই রোগ ক্রমাগত বাড়ছে, অপর দিকে উন্নত দেশে এই রোগ ক্রামগত কমে যাচ্ছে। কারণ, সেখানে মানুষ দাঁতের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন হচ্ছে এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা আরও জোরদার হচ্ছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে মাড়ির রোগ বেড়েই চলেছে, তবে শহর এলাকার লোকের মধ্যে এর তীব্রতা কিছুটা কম হলেও গ্রামাঞ্চলে প্রচুর লোকের মধ্যে এই রোগ রয়েছে। যেহেতু হঠাৎ মারাত্মক কোনো অসুবিধা দেখা দেয় না, তাই মাড়ির রোগের অভিযোগও কম। যেহেতু রোগটি ধীরগতির ধ্বংসকারী, তাই প্রদাহের গতি দিনের পর দিন বাড়তে থাকে এবং একপর্যায়ে এসে মূল্যবান দাঁতটিকে হারাতে হয়। তবে যাদের মুখে জিনজিভাইটিস বা মাড়ির রোগ থাকা অবস্থায়ই অন্যান্য সাধারণ রোগ যেমন বাতজনিত সন্ধি প্রদাহ (জযবঁসধঃড়রফ অৎঃযৎরঃরং), হৃদরোগ (ঐবধৎঃ উরংবধংব), বহুমূত্র (উরধনবঃবং) ইত্যাদি থাকে তাদের ওই সময় মুখের খুব নগণ্য পরিচর্যা এবং দেহের স্বাভাবিক রক্ত চলাচল বা অন্যান্য কার্যক্রমে ব্যাঘাত হওয়ার কারণে এর প্রভাব মুখের ওপর পড়ে। তাই তখন মাড়ির রোগটি ওই সময় বাড়তে থাকে। বহুমূত্র রোগীদের দেহের রক্তের শর্করার পরিমাণ বেড়ে গেলে মাড়ির রোগের ওপর প্রভাব পড়তে পারে। যেমনটি দেখা দিতে পারে গর্ভবতী মায়েদের হরমোন পরিবর্তনে মাড়ির রোগ, যাকে বলা হয় প্রেগনেন্সি জিনজিভাইটিস বা ‘গর্ভাবস্থায় মাড়ির প্রদাহ’।

দন্তরোগজনিত জটিলতা

মাড়ির রোগ দীর্ঘদিন পুষে রাখলে যেমন মাড়িতে প্রদাহ বা ইনফেকশন হয় তেমনি দন্তীয় বা ডেন্টাল ক্যারিজ রোগ দীর্ঘদিন বিনা চিকিৎসায় থাকলে দাঁতের গোড়ায় পুঁজ জমা হয়। মুখের এই ধরনের রোগের কারণে যেমন মুখে স্থানীয়ভাবে অসুবিধার সৃষ্টি হতে পারে তেমনি দেহের জন্য বিপদ নিয়ে আসতে পারে। যেহেতু দাঁত ও মাড়ির সঙ্গে দেহের রক্ত চলাচলের সম্পর্ক আছে, তাই ইনফেকশন রক্তের সঙ্গে গিয়ে হৃৎপিণ্ড (ঐবধৎঃ), মস্তিষ্ক (ইৎধরহ), হাড় (ইড়হব) সন্ধি (ঔড়রহঃ), বৃক্ক (করফহবু),, যকৃৎ(খরাবৎ) ও চর্মের ওপরও প্রভাব ফেলতে পারে। মুখের সংক্রমণ জাতীয় এই ধরনের রোগের কারণে যেসব রোগ সৃষ্টি হতে পারে বা রোগটিকে আরও ত্বরান্বিত ও দির্ঘায়ীত করতে পারে, সেগুলো হলো-

১. হৃদরোগ ( (Sub-Acute Bacterial Endocarditis)

২. বাতরোগের সন্ধি প্রদাহ (Rheumatoid Arthritis)

৩. কিডনি রোগ (Kidney Disease)

৪. চর্মরোগ (Skin Disease)

৫. মস্তিষ্কের রোগ (Brain Disease)

৬. নাক, কান, কলার রোগ (E.N.T Disease)

৭. উচ্চ রক্তচাপ (Hypertension)

৮. বৃক্ক প্রদাহ (Nephritis)

মুখের রোগের কারণে দেহে এসব জটিলতা দেখা দিতে পারে বলেই মুখের ও দাঁতের যতœ নেওয়া অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

প্রতিরোধ ব্যবস্থা

(১) নিয়মিত দুই বেলা সকালে ও রাতে আহারের পর দাঁত ও মাড়ি পরিষ্কার করা প্রয়োজন, তবে যাদের নিজের করতে অসুবিধা হয় তাদের অন্যের সাহায্য নিয়ে তা করানো প্রয়োজন।

(২) দাঁতের অথবা মাড়ির প্রদাহ থাকলে তা চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ করা প্রয়োজন। কারণ প্রদাহ দেহে ছড়িয়ে পড়তে পারে।

(৩) নিয়মিত একটি জীবণুনাশক ওষুধ দিয়ে মুখ কুলিকুচি করা প্রয়োজন (বিশেষত রাতের আহারের পর, ঘুমানোর আগে)

(৪) কোনো অনুপস্থিত দাঁত থাকলে তা কৃত্রিম দাঁতের মাধ্যমে স্থান পূরণ করা প্রয়োজন।

(৫) দন্ত চিকিৎসকের কাছে মুখ ও দাঁতের রোগের চিকিৎসার পূর্বে দেহের অন্যান্য রোগের উপস্থিতি অবহিত করা প্রয়োজন, কারণ দন্ত শল্যচিকিৎসার আগে এন্টিবায়োটিক জাতীয় ওষুধ যেমন জরুরি তেমনি দেহের স্বাভাবিক অবস্থা পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত করাটাও অত্যাবশ্যক।

(৬) বছরে অন্তত দুইবার (ছয় মাস অন্তর) একজন দন্তরোগ বিশেষজ্ঞের সাহায্যে মুখগহ্বরের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো প্রয়োজন।

(৭) চিকিৎসার আগে জীবাণুমুক্ত যন্ত্রপাতি, একবার ব্যবহারযোগ্য সূঁচ (ইনজেকশনের প্রয়োজন), ইত্যাদির ব্যবস্থা সম্পর্কে সচেতন থাকা প্রয়োজন।

(৮) বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও দন্তরোগ বিশেষজ্ঞের পারস্পরিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে চিকিৎসার ব্যবস্থাপত্র কার্যকর করাটাই নিরাপদ।

লেখক-

অধ্যাপক ড. অরূপরতন চৌধুরী

১৫/এ, গ্রিন স্কয়ার, গ্রিন রোড, ঢাকা।

সংগৃহীত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *