প্রতিবন্ধীদের হাসি ও আমাদের ভালবাসা

Spread the love

সৈয়দ জুয়েল: একটি পরিবারে যদি তিনটি সন্তান থাকে,তার ভিতর একটি শিশু শারীরিক অথবা মানসিক প্রতিবন্ধী হলে- সেই সন্তানটিকেই বাবা,মা ভালবাসেন সবচেয়ে বেশি। এসব সন্তানের জন্য বাবা,মার এই অতিরিক্ত ভালবাসাটুকুই প্রমান করে- নিঃস্বার্থ ভালবাসায় জড়িয়ে শুধু তারাই রাখেন। সমাজের কতিপয় প্রতিবেশীরা যখন বিদ্রুপ মাখা বাঁকা চোখে প্রতিবন্ধী শিশুদের দিকে তাকায়- বাবা, মার অন্তরে তখন রক্তক্ষরন হয়। সন্তানের এই ত্রুটিতে কোন বাবা মারই প্রতক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে কোন অবদান নেই।

কোন কোন সুস্থ মানসিক প্রতিবন্ধী নামের অতি উৎসাহীরা এসব বাবা মার দিকেও তর্জনী তুলেন। ভাবটা এরকম যেন এই শিশুদের এ অবস্থার জন্য তারাই দায়ী। অবাক করার বিষয় উন্নত রাস্ট্রে থেকেও উন্নত মনের পরিচয় দিতে ব্যার্থ হচ্ছে সমাজের বড় একটি অংশ। আয়ারল্যান্ডে প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে সেরা সেবাটা দিয়ে থাকেন। চাকুরী ক্ষেত্রেও এদের অগ্রাধিকার,মুখে নয়- বাস্তবেই। ঘর তৈরী থেকে আর্থিক সহায়তা, বাবা মা অক্ষম থাকলে সরকারী লোকজন দিয়ে পূর্ন সেবা,কি নেই এ দেশটিতে! আইরিশ সমাজে এরা এতটুকু অবহেলিত নয়।

কিন্তু অবহেলার নিম্ন মানসিকতা অনেক বাঙ্গালী পরিবারের ভেতরই। অনেক পরিবার এদের সাথে স্বাভাবিক ভাবে মেশেননা। আবার অনেক পরিবার প্রতিবন্ধী শিশুদের নিজের সন্তান পরিচয়েও লজ্জাবোধ করেন। আইরিশ পাসপোর্ট হাতে পেলেই আইরিশ হওয়া যায়না,এদের ভাল কিছু নেয়ার মানসিকতা যখন তৈরী হবে,তখন দাবী আমরা করতে পারি- আইরিশ নাগরিকত্বের। লাল পাসপোর্টের অন্তরালে কালো মনের ভেলকি থাকলে লাল পাসপোর্টের অবমূল্যায়ন হয়। সহজ কথা,কিন্তু বুঝে ওঠা কঠিন। একটি প্রতিবন্ধী শিশু যখন তার এক বাংলাদেশি সুস্থ খেলার সাথীকে প্রতিদিন দেখবে- হয়তো সে বলতে পারেনা,বা তার দিকে তাকিয়ে সুন্দর করে হাসতে পারেনা,কিন্তু তার ছোট পবিত্র মনে ভালবাসার অনুভবের সৃস্টিতে তৃপ্ত হয়।
হয়তো আপনার আমার মত জড়িয়ে ধরে বলতে পারেনা- বন্ধু তোমার সাথে খেলতে পেরে আমি খুশী, ভালবেসে তার মন কিন্ত ঠিকই প্রতিটি সকালে খুঁজে তার খেলার সাথীকে। আমরা হয়তো তা বুঝিনা।সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির একটু পরিবর্তন হলে আমাদের এই সন্তানদের আমরা অনেকটাই ভাল রাখতে পারি। একটু স্নেহ,মায়া,মমতার স্পর্শ, এর একটিতেও টাকা পয়সার খরচের বালাই নেই। দরকার উন্নত মননশীলতার। উন্নত মননশীলতা অনেকটাই স্বদিচ্ছার উপর নির্ভর হয়ে থাকে। একজন সুস্থ মানুষ যে কোন দূর্ঘটনায় যদি তার পায়ে পচন ধরে,বা বেঁচে থাকার প্রয়োজনে পা কেটে ফেলে দিতে হয়,সে কিন্তু বাঁচার জন্য পা কেটে ফেলতে দেরি করবেনা।

আজ আপনি আমি আমাদের সন্তানরা যে সুস্থ আছেন,আগামীকাল আমাদের কারো জীবনে ত্রুটি জীবন নিয়ে আসবেনা,তার কি গ্যারান্টি আছে? আজ যে হুইল চেয়ারটির পরিবারকে দূরে সরিয়ে রাখছি,কাল সেই চেয়ারটা আমার ঘরেও আসতে পারে। জীবন চলার গন্তব্য যদি আমরা না-ই যানি,তাহলে অজানা এই পথ নিয়ে সমাজে কেন এই বৈষম্য? আজ যদি মমতায় ভরা একটি হাত এই প্রতিবন্ধীদের মাথায় রাখি, একটু বুকের উষ্ণতায় জড়িয়ে ধরি- ভালবাসার উষ্ণতায় কেঁপে উঠবে তখন সৃস্টির সেরা জীবের তকমা। জীবন তো অন্য আরো অনেক প্রানীরও আছে,বন্য হিংস্র প্রানীরাও তো জীবন কাটায়। আবার নীরিহ হরিনও কাটায়।
আমাদের সমাজে দরকার কিছু মানবতার গহনায় জড়ানো কিছু মানুষ। তাহলেই ফিরে আসবে আলো ঝরা সকাল। যে সকালে প্রতিবন্ধী আর স্বাভাবিক মানুষ এক হয়ে হাত ধরা ধরি করে চলবে। নিশূতি রাতে পূর্ন জোছনা দেখে তৃপ্তির হাসিতে একে অপরকে জড়িয়ে ধরবে। আমরা সেরকম এক আলো ঝরা সকাল আর নিশূতি রাত দেখার অপেক্ষায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *