দেশের কিশোরী-তরুনীদের দুবাই ডান্সবারে পাঠাতো আজম

Spread the love

নাগরিক ডেস্ক : তাদের টার্গেট কিশোরী ও কমবয়সী তরুণী, বিশেষ করে গার্মেন্টসকর্মীসহ নিম্নআয়ের নারী। টার্গেটকে ভালো বেতনে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে প্রথমে বিদেশে যাওয়ার জন্য রাজি করানো হয়; অগ্রিম বেতন হিসেবে ২০-৩০ হাজার টাকাও পরিশোধ করা হয়। তার পর দুটি বিদেশি এয়ারলাইনসের সহযোগিতায় ট্যুরিস্ট ভিসার মাধ্যমে দুবাইয়ে পাচার করা হয়। সেখানে নিয়ে তাদের বিভিন্ন চারতারকা ও তিনতারকা হোটেলে রেখে যৌনকর্মে বাধ্য করা হয়। কোনো বেতনও পরিশোধ করা হয় না। এভাবে আট বছর ধরে সহস্রাধিক কিশোরী ও তরুণীকে প্রলোভন দেখিয়ে দুবাইয়ে পাচার করেছে একটি সিন্ডিকেট। এ সিন্ডিকেটের পালের গোদা আজম খানকে

সম্প্রতি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) তার দুই সহযোগীসহ গ্রেপ্তার করেছে। তাদের নাম আল আমিন হোসেন ওরফে ডায়মন্ড ও আনোয়ার হোসেন ওরফে ময়না। আজম খানের কাছ থেকে জব্দকৃত মোবাইল ফোনে শত শত কিশোরী-তরুণীর করুণ আর্তনাদের ভয়েস রেকর্ডও পাওয়া গেছে। এ সিন্ডিকেটে দুবাইয়ে বসবাস করা আজম খানের দুই ভাইসহ ভারত ও পাকিস্তানের একাধিক নাগরিক রয়েছে; রয়েছে এ দেশের অন্তত অর্ধশত দালাল। সিআইডির ধারণা, আজম খান বাংলাদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থও পাচার করেছেন। এ বিষয়ে চলছে অনুসন্ধান।

গতকাল রবিবার সিআইডি সদর দপ্তরের সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির সংঘবদ্ধ অপরাধ দমন বিভাগের ডিআইজি ইমতিয়াজ আহমেদ জানান, দুবাইয়ে তিনটি চারতারকা এবং একটি তিনতারকা হোটেলের মালিক এ আজম খান। হোটেলগুলো হলোÑ ফরচুন পার্ল হোটেল অ্যান্ড ড্যান্স ক্লাব, হোটেল রয়েল ফরচুন, হোটেল ফরচুন গ্র্যান্ড ও হোটেল সিটি টাওয়ার। এসব হোটেলের ওয়েটার হিসেবে বা ড্যান্সবারে কাজ দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে অল্পবয়সী নারীদের সে দেশে পাচার করা হতো। বলা হতো প্রতি মাসে ৫০ হাজার টাকা করে তাদের বেতন দেওয়া হবে। অথচ পাচারের পর যৌনকর্মে বাধ্য করা হতো; কোনো টাকা পরিশোধ করা হতো না।

আজম খানকে গডফাদার হিসেবে উল্লেখ করেন ইমতিয়াজ আহমেদ। বলেন, তাকে গডফাদার বলার কারণ হচ্ছেÑ সংঘবদ্ধ অপরাধের যতগুলো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে, সব বিষয়ে এই ব্যক্তির নেতৃত্ব রয়েছে। এই বছরের প্রথম দিকে দুবাই পুলিশ আজম খানের ব্যাপারে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বাংলাদেশ দূতাবাসকে অবহিত করে। দেশটি তার পাসপোর্ট পর্যন্ত বাতিল করে দেয়। একটি এক্সিট পাস নিয়ে আজম বাংলাদেশে চলে আসেন। তার পর থেকে আত্মগোপনে যান।

তিনি আরও বলেন, আজম খানের বিষয়ে সিআইডি কাজ করছিল। কিন্তু ঘন ঘন অবস্থান পরিবর্তন করছিলেন তিনি। এমনকি নতুন পাসপোর্ট তৈরি করে সীমান্ত হয়ে অন্য দেশে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন তিনি। তবে দেশত্যাগের আগেই আমরা তাকে গ্রেপ্তার করেছি। এরই মধ্যে এই সিন্ডিকেটের সবাইকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তিনজন ছাড়া অন্যদেরও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। আজম খানের বিরুদ্ধে দেশে ছয়টি হত্যাসহ ১৫টি মামলা রয়েছে।

আজম খানের সিন্ডিকেটে তার দুই ভাই রয়েছে জানিয়ে এ সিআইডি কর্মকর্তা বলেন, তার দুই ভাই দুবাইতে অবস্থান করে এই সিন্ডিকেট দেখাশোনা করছে। এ ছাড়া ভারতীয় দুজন নাগরিকের বিষয়ে তথ্য পাওয়া গেছে, যারা এই সিন্ডিকেটের সদস্য। পাকিস্তানি কিছু নাগরিকও এর সঙ্গে যুক্ত। তদন্তের স্বার্থে তাদের নাম প্রকাশ করছি না।

তিনি জানান, আজম খানের গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামে। তার বাবা ছিলেন দুবাই প্রবাসী। আজম খান ও তার দুই ভাই ১৯৯৬ সালে দুবাই যান। আজম খানের মোবাইল ফোনে শত শত ভুক্তভোগীর ভয়েস রেকর্ড আছে। তারা আর্তনাদ করছে। এগুলো রোমহর্ষক; শুনলে ঠিক থাকা যায় না। তাদের অনুরোধও শোনা গেছে। বলছেন, ‘আমাদের দেশে পাঠিয়ে দিন।’ তার এসব অবৈধ কাজের বিষয়ে দুবাই সরকার বাংলাদেশ দূতাবাসকে জানায়। তার দুই ভাইসহ যারা এই সিন্ডিকেটের সদস্য, আমরা দুবাই সরকারকে অনুরোধ করব তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য।

দুবাইতে বিপুল পরিমাণ অর্থপাচারের সঙ্গে আজম খান জড়িত থাকতে পারে জানিয়ে সিআইডির এ কর্মকর্তা বলেন, দুবাইয়ের মতো জায়গায় তারকাসমৃদ্ধ চারটি হোটেলের মালিক আজম খান। আমরা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছি। ধারণা করছিÑ দেশ থেকে প্রচুর পরিমাণে অর্থ সেখানে তিনি পাচার করে থাকতে পারেন। আমরা মানিলন্ডারিংয়ের বিষয়টি গুরুত্বসহকারে নিয়ে অনুসন্ধানের প্রস্তুতি নিচ্ছি।

দুটি বিদেশি এয়ালাইনসের সহযোগিতায় আজম খান দীর্ঘদিন ধরে এহেন অপকর্ম করছিলেন জানিয়ে ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, অধিকাংশ ভুক্তভোগীর বয়স ১৫-২০ বছরের মধ্যে। বিভিন্ন এয়ারলাইনসের এজেন্টদের মাধ্যমে তাদের ট্যুরিস্ট ভিসায় নিয়ে যাওয়া হয়। আমরা এরই মধ্যে দুটি বিদেশি এয়ারলাইনসের সম্পৃক্ততা পেয়েছি। আমরা এগুলো খতিয়ে দেখছি। যাচাই-বাছাই করতে আরও একটু সময় লাগবে।

এদিকে মানবপাচারের অভিযোগে গত ২ জুলাই ঢাকা মহানগর পুলিশের লালবাগ থানায় মামলা করেছে সিআইডি। এরই মধ্যে এই মামলায় দুই ভুক্তভোগী আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। অনেক ভুক্তভোগী সিআইডির সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন বলে জানান ডিআইজি ইমতিয়াজ আহমেদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *