নাগরিক রিপোর্ট : রাক্ষুসী মেঘনার প্রতি মুহুর্তের ঢেউ এসে আছরে পড়ছে বিদ্যালয় ভবনের দেয়ালে। যেকোন মুহুর্তে ভূমিধসে (নদীভাঙ্গন) ভবনটি মেঘনার গর্ভে হারিয়ে যাবে। এর সঙ্গে সমাপ্তি হবে ১০২ বছরের ইতিহাসের স্বাক্ষী একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের। প্রতিষ্ঠানটি রক্ষার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে ১৬০০ মিটার বাঁধ দেয়ার উদ্যেগ নিলেও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের গাফেলতিতে শেষ রক্ষা হচ্ছেনা বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
অস্তিত্ব বিলীনের এমন এক হুমকির মুখে দাঁড়িয়ে আছে বরিশালের হিজলা উপজেলার ধুলখোলা ইউনিয়নে শতবর্ষী ‘পিএন মাধ্যমিক বিদ্যালয়’। এটি ধুলখোলা ও পাশ্ববর্তী হিজলা-গৌরবদী, এ দুটি ইউনিয়নের একমাত্র মাধ্যমিক বিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠানটি মুলভুখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন মেঘনাবেষ্টিত জনপদে ‘চরের বাতিঘর’ হিসাবে পরিচিত। ৫শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে প্রতিষ্ঠানটিতে।
হিজলা উপজেলা শিক্ষা অফিসার কাজী শফিউল আলম বলেন, বিদ্যালয়ের বর্তমান অবস্থা উর্ধ্বতন মহলে জানানো হয়েছে। পাউবোর স্থায়ী বাঁধ নির্মান দ্রুত সম্পন্ন করা হলে প্রতিষ্ঠানটি রক্ষা পাবে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জসিম উদ্দিন জানান, বিদ্যালয়ের মুলভবন থেকে মেঘনা এখন মাত্র ২০ ফুট দুরে। প্রতিমূহুর্তে মেঘনার ঢেউ আছরে পড়ঝে একমাত্র পাকাভবনটির পূর্বদিকের দেয়ালে। চলমান নদীভাঙ্গনে এ ভবনটি বিলীন হলে প্রতিষ্ঠানটিই বন্ধ হয়ে যাবে।
তিনি জানান, গতবছর বর্ষায় ভাঙ্গনে বিলীন হয়েছে বিজ্ঞান ভবন, বৈদিশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রাণালয়ের অর্থায়নে নির্মিত শ্রেণীকক্ষ ভবন, লাইব্রেরী ভবন এবং সংলগ্ন আশিকর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন শেল্টার ভবন। এখন আছে মেঘনার ভাঙ্গনখাদে দাড়িয়ে থাকা দ্বিতল পাকা ভবনটি। এটি বিলীন হলেই বিদ্যালয়ের অস্তিত্বও বিলীন হবে আশংকা প্রধান শিক্ষকের।
তিনি এর কারন ব্যাখা করে বলেন, বিদ্যালয়টি অবস্থান হিজলার শেষ সীমনায়। এরপরে হচ্ছে মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা। প্রতিষ্ঠানটি স্থানান্তরে ক্রয়ের জন্য প্রয়োজনীয় জমি হিজলার ধুলখোলা ইউনিয়নে পাওয়া যাচ্ছেনা। কারন এখানকার প্রায় সব খাসজমি। যা বিদ্যালয়ের নামে দলিল করে নেয়া সম্ভব নয়। প্রতিষ্ঠানের নামে দলিল না থাকলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেরও স্বীকৃতি মেলেনো। আবার নীতিমালা অনুযায়ী বিদ্যালয়টি মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার সীমানার মধ্যেও নেয়া যাবেনা। এমন জটিলতায় অস্তিত্ব সংকটে শতবর্ষী পিএন মাধ্যমিক বিদ্যালয়।
ধুলখোলা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি ইকবাল হোসেন মাতুব্বর বলেন, ১৯১৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর মেঘনার ভাঙ্গনে এ পর্যন্ত তিনবার বিদ্যালয়টি স্থানান্তরিত করা হয়। বর্তমান অবস্থায় থাকা বিদ্যালয়টি রক্ষার জন্য গতবছর পাউবো’র উদ্যেগে ব্লকের বাঁধ দেয়া শুরু হয়। এ কাজের প্রথম প্রক্রিয়ায় জিও ব্যাগ ফেলা হয়। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান যথাযথভাবে জিওব্যগ না ফেলেনি। যে কারনে গত সপ্তাহের পূর্ণিমায় প্রবল জোয়ারে জিও ব্যাগ তলিয়ে গিয়ে যায়।
এ অভিযোগ প্রসঙ্গে ঠিকাদার মো. মনির দাবী করেন, দরপত্র অনুযায়ী বিদ্যালয় সংলগ্ন ভাঙ্গনস্থানে ৪৮ হাজার জিও ব্যাগ ফেলা হবে। এরই মধ্যে ৪৭ হাজার ব্যাগ ফেলা হয়েছে। অবশিষ্ঠ ১ হাজার ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। এতে চলমান ভাঙ্গন ঠেকানো সম্ভব নয় বলে জানান ঠিকাদার। তিনি বলেন, ব্লক তৈরীর কাজ চলছে। ব্লকের বাঁধ দেয়ার পর বিদ্যালয়টি রক্ষা হতে পারে। তবে ব্লকের বাঁধ হবে তা সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারেননি তিনি।##