এক সময়ে সরব ব্যারিষ্টার রফিকুল ভাল নেই

Spread the love

রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ড, প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর নেতা-নেত্রীদের নেতিবাচক কাজ, অদায়িত্বশীল কথাবার্তা দেখলে-শুনলে সরব হতেন তিনি। জাতীয় বিবেক হয়ে দ্বিধাহীন সমালোচনা করতেন। বাতলে দিতেন উত্তরণের পথ। দেশের যেকোনো সংকটে এগিয়ে আসতেন। এ জন্য তাঁকে কখনো কখনো বিরূপ মন্তব্যও শুনতে হয়েছে; কিন্তু তিনি পিছপা হননি। শুধু কথায় সীমাবদ্ধ না থেকে আইনি প্রতিকার পাওয়ার পথও বাতলে দিয়েছেন। ওয়ান-ইলেভেনের সময় দেশের প্রধান দুই দলের প্রধান নেত্রীদ্বয়কে রাজনীতি থেকে মাইনাস করার দুরভিসন্ধি বলতে গেলে তিনি একাই রুখে দিয়েছেন। এই মানুষটি আর কেউ নন, দেশের প্রখ্যাত আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল হক।

সেই রফিক-উল হক বর্তমানে বড্ড একা। ৮৫ বছর বয়সে এসে শারীরিক নানা জটিলতা, সঙ্গে করোনা মহামারি পরিস্থিতি তাঁর একাকিত্বকে আরো কঠিন করে তুলেছে। মাঝখানে রীতিমতো জীবন সংকটে পড়ে গিয়েছিলেন তিনি। একদিকে পায়ের সমস্যার কারণে বিছানা থেকে নামতে না পারা, অন্যদিকে একমাত্র সন্তান ব্যারিস্টার ফাহিম উল হক করোনার প্রকোপে কানাডায় লকডাউনে আটকে পড়ায় গত জুনে রফিক-উল হকের ডায়াবেটিস বাড়তে বাড়তে ১৯-এ পৌঁছায়।

বারডেম, আদ্দ্বীন, আহ্ছানিয়া মিশন ক্যান্সার হাসপাতাল, ঢাকা শিশু হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতাল প্রতিষ্ঠায় এ মানুষটির ভূমিকা অনন্য। বর্তমান পরিস্থিতিতে সেই মানুষটিকে মূলত স্বাস্থ্যসেবা নিতে হচ্ছিল টেলিফোনে। কানাডায় আটকে পড়া ব্যারিস্টার ফাহিম উল হক বিষয়টি জানলে আদদ্বীন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এতে আদদ্বীন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দ্রুত পদক্ষেপ নেয়। একটি মেডিক্যাল টিম চিকিৎসা সরঞ্জাম নিয়ে হাজির হয় রফিক-উল হকের বাড়িতে। মেডিক্যাল টিমের নিবিড় পরিচর্যায় এই যাত্রায় সুস্থ হয়ে ওঠেন তিনি। বর্তমানে তাঁর ডায়াবেটিসের মাত্রা ৪.৯।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পল্টনের ছায়াশীতল বাড়িতে নীরবেই কাটছে তাঁর সময়। একসময় এই বাড়িটি আইনজীবী, বিচারপ্রার্থী, রাজনীতিক, আত্মীয়-স্বজনসহ বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষের পদচারণে মুখর থাকত। সেই বাড়িটি এখন নিঝুম। আইনাঙ্গনের এই দিকপালের সারাক্ষণের সঙ্গী গাড়িচালক আবু বকর সিদ্দিকসহ রয়েছেন চার কর্মচারী। বাড়িতে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার কারণে এ চারজন ছাড়া আর কেউ যেতে পারে না তাঁর কাছে। অবশ্য টেলিফোনে নিকটজনদের কারো কারো সঙ্গে মাঝেমধ্যে সামান্য কথা হয়। আর মাঝেমধ্যে টেলিভিশনে খবর দেখেন।

২০১৭ সালে বাঁ পায়ের হাঁটুতে অস্ত্রোপচারের পর তাঁর চলাফেরা সীমিত হয়ে যায়। দিন যত গড়াচ্ছে, তাঁর চলাফেরা তত সংকুচিত হচ্ছে। গত দুই বছর সুপ্রিম কোর্টে যাওয়াও ছেড়ে দিয়েছেন। অথচ ১৯৭২ সালে সুপ্রিম কোর্ট প্রতিষ্ঠার পর দেশের এ সর্বোচ্চ আদালতই ছিল তাঁর ধ্যান-জ্ঞান। ১৯৩৫ সালে জন্ম নেওয়া খ্যাতিমান এই মানুষটি পায়ে ব্যথার কারণে একা চলাফেরা করতে পারেন না। বিছানায় শুয়ে কাটে দিনের বেশির ভাগ সময়। সামান্য চলাফেরায় কর্মচারীদের সহায়তায় ব্যবহার করেন হুইলচেয়ার। স্বল্পাহারী মানুষটি বর্তমানে খাওয়া প্রায় ছেড়েই দিয়েছেন। বর্তমানে সামান্য তরল খাবার নিচ্ছেন তিনি। করোনাভাইরাস সংক্রমণের আগে একাকিত্ব ঘোচাতে মাঝেমধ্যে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হতো বিভিন্ন রিসোর্টে। মহামারির কারণে এখন সেটাও বন্ধ।

ব্যারিস্টার রফিক-উল হকের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট শাহ মঞ্জুরুল হক বলেন, ‘স্যার একাই আছেন। তাঁর পায়ের সমস্যার কারণে হুইলচেয়ারে চলাফেরা করতে হয়। অন্যের সাহায্য নিয়ে চলাফেরা করতে হয় বলে বেশির ভাগ সময় তিনি বিছানায় শুয়েই কাটান। আর করোনার কারণে কেউ বাসায় যেতে পারছেন না। এ কারণে টেলিফোনে খোঁজখবর নিতে হচ্ছে।’

গাড়িচালক আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ‘পায়ের সমস্যার কারণে চলাফেরায় সমস্যা হওয়ায় মাঝেমধ্যে স্যারকে বিভিন্ন রিসোর্টে নিয়ে যেতাম। করোনার কারণে এখন সেটাও বন্ধ। এখন বাসায়ই আছেন তিনি।’

সংগৃহীত- কালের কন্ঠ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *