মেঘনায় মা ইলিশ নিধন ঠেকাতে অসহায় প্রশাসন

Spread the love

নাগরিক রিপোর্ট: বরিশালে ঠেকানো যাচ্ছে না মা ইলিশ নিধন। অভিযানের শুরুতেই মেঘনায় একের পর এক হামলার শিকার হচ্ছে মৎস্য কর্মকর্তা ও আইনশৃংখলাবাহিনী। জেলেরা একজোট হয়ে ইতোমধ্যে মেঘনার ৩টি স্পটে অভিযানকারীদের উপর হামলা চলিয়েছে। ফলে নিষেধাজ্ঞার শুরুতেই মা ইলিশ শিকার রোধে অসহায় হয়ে পড়েছে প্রশাসন। বিশেষ করে হিজলা, মেহেন্দীগঞ্জ সংলগ্ন মেঘনায় ইলিশ নিধনে কৌশলে শিশুদের ব্যবহার করা হচ্ছে। মৎস্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে বাড়তি পুলিশ ফোর্স এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোতায়েন করা হচ্ছে। বিভাগে গত ৫ দিনে ১৮৫ জেলেকে কারাদন্ড দেয়া হয়েছে।


বরিশাল বিভাগীয় মৎস্য অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মো: আনিচুর রহমান সোমবার বিকেলে বলেন, এবার মা ইলিশ রক্ষায় সবাই তৎপর। যেকারনে হিজলা, মেহেন্দীগঞ্জের মেঘনায় হামলার শিকার হচ্ছে। মেহেন্দীগঞ্জে রোবিবার আক্তার মেম্বার ও বাহাউদ্দিন মেম্বার তাদের দুটি টিমের উপর হামলা চালিয়েছে। এর আগে হিজলায় হামলায় পুলিশের ২ সদস্য আহত হয়েছে। তিনি বলেন, আইনশৃংখলা বাহিনী কঠোর হচ্ছেন। তারা গোপনে দুস্কৃতিকারীদের খুজছে। বিভাগীয় কমিশনার ও বরিশাল জেলা প্রশাসককে সার্বিক বিষয়ে অবহিত করা হয়েছে। দুই উপজেলায়ই ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনায় বাড়তি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং পুলিশ দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, জেলেদের নামাচ্ছে দাদন দেয়া প্রভাবশালী ব্যবসায়ীরা। পুলিশ তাদের ধরতে ২/১দিনেই মাঠে নামছে।


খোজ নিয়ে জানা গেছে, মেঘনা ঘেরা মেহেন্দীগঞ্জে মা ইলিশ ধরার উৎসব চলছে। জেলেরা পিছনে থেকে শিশুদের নদীতে নামিয়ে দিয়েছে। মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ভিক্টর বাইন বলেন, গত ৫ দিনে তার উপজেলায় ৩৫ জেলেকে কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। রোবিবার মেহেন্দীগঞ্জ সদর এবং জাঙ্গালিয়ার রুকুন্দিতে দুটি টিমের উপর হামলা করেছে দুর্বিত্তরা। তিনি নিজেও ধাওয়ার শিকার হয়েছেন। অপর টিমে থাকা পুলিশের উপর জেলেরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেছে। মৎস্য কর্মকর্তা ভিক্টর বাইন বলেন, নদীতে ব্যাপক মা ইলিশ। মেঘনায় শিশুদের নামিয়ে মা ইলিশ শিকার করানো হচ্ছে। শিশুদের দন্ড দিতে না পাড়ায় তারা বিপাকে পড়েছেন।


এদিকে হিজলা উপজেলার মেঘনায় মা ইলিশ নিধনের হিড়িক পড়েছে। উপজেলার মেঘনা নদীর হরিনাথপুর, শাওরা সৈয়দ খালী, চরকিল্লা, অর্ন্তবাম, দেবুয়া, কাইতমা, ধুলখোলা, আবুপুর, গঙ্গাপুর, নাছোকাঠীতে দেদাড়ছে মা ইলিশ নিধন চলছে। হিজলা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আব্দুল হালিম সোমবার বিকেলে জানান, তিনি মা ইলিশ রক্ষায় মেঘনায় অবস্থান করছেন।
হিজলা-মেহেন্দিগঞ্জ সংলগ্ন মেঘনায় ইলিশ নিধনে নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতীয় মৎস্যজীবী সমিতির যুগ্ন মহাসচিব ও হিজলার বাসিন্দা ইকবাল হোসেন মাতুব্বর। তিনি বলেন, কতিপয় প্রভাবশালীর ছত্রছায়ায় মেঘনায় ইলিশ নিধন হচ্ছে। তাদের ইঙ্গিতেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর হামলা করেছে জেলেরা।


নৌ পুলিশের হিজলা থানার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বেল্লাল হোসেন বলেন, তাদের সীমিত সংখ্যক পুলিশ দিয়ে বিশাল মেঘনা নিয়ন্ত্রন করতে পারছেন না। এমন অবস্থায় আরও ৩৪ জন পুলিশ সদস্য এ অঞ্চলের নৌ পুলিশে যুক্ত হচ্ছেন। তাদেরকে দুটি এলাকায় ভাগ করে ২৪ ঘন্টা হিজল ও মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার আওতাধীন মেঘনা পাহাড়ায় নিযুক্ত করা হবে।


ওসি বেল্লাল হোসেন জানান, জনবল সংকটে গত ১৪ অক্টোবর ইলিশ নিধনের নিষেধাজ্ঞা শুরুর পর আইনটি মেঘনায় পুরোপুরি কার্যকর করতে পারেননি। ইলিশ নিধনে বাঁধা দিতে গিয়ে পুলিশ বাহিনী জেলেদের হামলারও শিকার হয়েছে। পরিস্থিতি পুলিশের উর্ধ্বতন দপ্তরে জানানো হলে বরিশাল থেকে ১৪ জন এবং ঢাকা থেকে ২০ জন পুলিশ সদস্য সোমবারই হিজলা নৌ পুলিশে যুক্ত হয়েছে।


বরিশাল বিভাগীয় মৎস্য অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রন কক্ষে থাকা সহকারী পরিচালক আব্দুল মান্নান বলেন, গত ১৩ অক্টোবর মধ্যরাত থেকে মা ইলিশ ধরার উপর নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়। গত ৫দিনে বিভাগে অভিযান করা হয়েছে ৫২৯টি। এর মধ্যে মা ইলশ উদ্ধার হয়েছে ২ টন, কারেন্ট জাল উদ্ধার ১৯ লাখ মিটার, মামলা হয়েছে ২২৭টি, জরিমানা করা হয়েছে ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং কারাদন্ড দেয়া হয়েছে ১৮৫জন জেলেকে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ভোলা জেলায় ৮২জন এবং দ্বিতীয় অবস্থানে বরিশাল জেলায় ৭১জনকে কারাদন্ড দেয়া হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *