নাগরিক রিপোর্ট: দুর্গাসাগর দীঘির মাঝ বরাবর ঝুলান্ত ব্রিজ নির্মানের পরিকল্পনার খবরে বরিশালে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। দীঘির মাঝে এভাবে ঝুলান্ত ব্রিজ করার পরিকল্পনায় প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র ধ্বংসের আশংকা করছেন পরিবেশবাদীরা। রোববার দুর্গাসাগর দীঘি পরিদর্শন করে বিভিন্ন শ্রেনীপেশার মানুষ এ ঘটনায় বিস্ময় ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এধরনের বানিজ্যক স্থাপনা বন্ধে পরিবেশবাদীরা প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দিবেন বলে জানা গেছে।
দুপুরে দুর্গাসাগর দীঘি পরিদর্শন করে এর প্রাকৃতিক পরিবেশ ক্ষতির দাবী করেছেন বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবন্দ। এসময় তারা বিশাল দীঘির চারপাশ ঘুরে নানা পাকা স্থাপনা দেখেও ক্ষুব্ধ হন। দুর্গাসাগর ও পাখি অভয়ারন্য প্রকল্পের কেয়ারটেকার তপন লস্কর বলেন, পরিবেশবাদী নেতৃবৃন্দ রোববার দুপুরে দুর্গাসাগর পরিদর্শন করেছেন। তারা দীঘি ঘুরে দেখেছেন। তবে নেতৃবৃন্দ তাদের সাথে কথা বলেননি।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এর জেলা সভাপতি রনজিৎ দত্ত বলেন, দুর্গাসাগরে উন্নয়নের নামে প্রাকৃতিক সৌন্দয্য নস্ট হচ্ছে। ব্রিজ হলে এটি বানিজ্যিক কেন্দ্র হবে। এরকম কর্মকান্ড যাতে না হয় এজন্য যা করার দরকার তাই করার চেস্টা করবে বাপা।
পরিবেশবাদী সংগঠন গ্রীন মুভমেন্টের জেলা সমন্বয়ক কাজী মিজানুর রহমান ফিরোজ বলেন, দুর্গাসাগরের প্রাকৃতিক পরিবেশকে গলা কেটে হত্যার চেস্টা চলছে। গাছ বাচাঁনোর জন্য যতœ নেই, শিকর বেড়িয়ে গেছে। ইটের স্থাপনায় প্রাকৃতিক পরিবেশ বিনস্ট হচ্ছে। দীঘির মাঝখানে টিলার গাছ, বনজঙ্গল সাফ করে জীববৈচিত্র ধ্বংস করা হয়েছে। সেখানে কেন গোলঘর করতে হবে? এর ফলে অতিথি পাখি আর আসবে না, দীঘির মাছের বিচরন বাধাগ্রস্থ হবে। তিনি বলেন, দুর্গাসাগরে ব্রিজ করলে এর সৌন্দর্য্য বিনস্ট হবে। এটি বন্ধে তারা একটি বিবৃতি দিবেন।
নদী খাল বাঁচাও আন্দোলন কমিটির সদস্য সচিব কাজী এনায়েত হোসেন শিবলু বলেন, রোববার দুপুরে দীঘি ঘিরে অনেকগুলো পাকা স্থাপনা দেখে বিস্মিত হয়েছেন। চারদিকে এতো সোলার লাইট, পিকনিক পার্টি, ইভেন্ট। তাতে আর অতিথি পাখি থাকবে না। তিনি বলেন, যে স্থান থেকে ব্রিজ করার পরিকল্পনা নিয়েছে সেটা বাস্তবায়ন হলে দুর্গাসাগরের প্রাকৃতিক পরিবেশের সর্বনাশ হবে। দীঘির মধ্যে ব্রিজ করার এমন পরিকল্পনাবিদদের থামাতে হবে। তিনি বলেন, দুর্গাসাগরকে রক্ষায় চলতি সপ্তাহেই তারা প্রধানমন্ত্রী বরারবর স্মারকলিপি দিবেন।
সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) এর বরিশাল জেলা সদস্য শুভংকর চক্রবর্তী বলেন, দুর্গাসাগরকে ন্যাড়া করে কৃত্রিম উন্নয়ন চলছে। বরিশালবাসী দুর্গাসাগরের প্রকৃতিক সৌন্দর্য্যকে ধ্বংস করে পাথরের স্থাপনা চায় না। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হৈচৈ পড়ছে। সরেজমিনে দেখে মনে হয়েছে দুর্গাসাগরে ব্রিজ করা মোটেই যুক্তিযুক্ত হবে না। তারা এ বিষয়ে দ্রæত কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলবেন, স্মারকলিপিও দিবেন।
যদিও বরিশাল জেলা প্রশাসক এস এম অজিয়র রহমান অবশ্য বলেছেন, দর্শনার্থী টানতেই দীঘির দ্বীপের সাথে সংযোগ করার জন্য কাঠের ব্রিজ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। দ্বীপে একটি গোলঘরও হবে। তবে ইদানিং লক্ষ্য করেছেন এই ব্রিজ করা নিয়ে প্রতিক্রিয়া হচ্ছে। মানুষ না চাইলে ব্রিজ করা হবে না বলে জানান জেলা প্রশাসক অজিয়র।