সিনেটর হয়ে বাংলাদেশে মায়ের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের মুজাহিদ

Spread the love

নাগরিক ডেস্ক : দুজন থাকেন দুই দেশে। ইচ্ছা করলেও যখন-তখন কেউ কারও কাছে আসতে পারেন না। তাই বলে কি মা-ছেলের ভালোবাসায় ভৌগোলিক সীমারেখা বাধা হতে পারে? মূলত সন্তানের ভালোবাসার কাছে কোনো বাধাই টিকে না।

সন্তান যত বড়ই হোক মায়ের কাছে সবসময় ছোট; খোকা হয়ে আজীবন মায়ের হৃদয়ে থাকে। যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক চন্দন দীর্ঘদিন ধরে ডেমোক্র্যাট দলের শীর্ষ নেতা। ভাই-বোনদের বেশিরভাগই দেশের বাইরে। এবার যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর নির্বাচিত হয়ে মায়ের কাছে বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জে ছুটে এলেন তিনি। নেননি কোনো সরকারি প্রটোকল।

যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের সিনেটর ছেলেকে কাছে পেয়ে আবেগ ধরে রাখতে পারেননি মমতাময়ী মা সৈয়দা হাজেরা খাতুনের বয়স ১০০ ছুঁই ছুঁই। অনেক দিন পর সন্তানকে কাছে পেয়ে জড়িয়ে ধরে বারবার চুমু খাচ্ছিলেন মা। মায়ের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে সিনেটর ছেলের দু’চোখ দিয়ে ঝরছিল আনন্দ অশ্রু।

গত বুধবার সন্ধ্যায় কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলার সরারচর গ্রামে বৃদ্ধা মা আর সিনেটর ছেলের এমন ভালোবাসার দৃশ্য দেখে সবার চোখে জল নামে।

জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের ডেমোক্র্যাট পার্টির সিনেটর শেখ মুজাহিদুর রহমান চন্দনের গ্রামের বাড়ি বাজিতপুর উপজেলার সরারচর গ্রামে। গত নভেম্বর মাসে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের সিনেটর নির্বাচিত হন।

গ্রামের বাড়ি সরারচরে মা সৈয়দা হাজেরা খাতুন বসবাস করেন। মূলত মাকে দেখার জন্যই গ্রামের বাড়িতে ছুটে আসেন মুজাহিদুর। অনেক দিন পর ছেলেকে কাছে পেয়ে কেঁদে ফেলেন মা হাজেরা। ছেলে-মেয়ে বড় হয়ে একদিন দেশ-বিদেশে সুনাম কুড়াবে- এমন স্বপ্ন ছিল তার। আজ ছেলে সিনেটর হওয়ায় আনন্দের শেষ নেই তার।

হাজেরা খাতুন বলেন, অনেক দিন পর ছেলেকে কাছে পেয়েছি। এ আনন্দ কেমন করে ধরে রাখি। আমার বিশ্বাস ছিল ছেলে-মেয়েরা একদিন দেশ-বিদেশে সুনাম কুড়াবে। বড় ছেলে সিনেটর নির্বাচিত হওয়ায় আমি সবচেয়ে আনন্দিত।

পরিবারের সঙ্গে

তিনি বলেন, আমার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। আমি মনে করি আমার ছেলে একদিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হবে। হয়তো সেদিন আমি থাকব না। তবে দেখে যেতে পারলে অনেক খুশি হবো।

মুজাহিদুর রহমান চন্দন বলেন, মূলত মাকে দেখার জন্যই এখানে ছুটে আসা। ছয় বছর আগে একবার দেশে এসেছিলাম। এবারের আসাটা একেবারেই ভিন্ন। ৩৯ বছর পর এই প্রথমবারের মতো বাড়িতে এসে সব ভাই-বোনের দেখা পেয়েছি। একসঙ্গে সবার সময় কাটানোর সুযোগ হয়েছে। আজ আমাদের খুশির দিন।

বাড়িতে মুজাহিদুরের সঙ্গে আরও উপস্থিত রয়েছেন- বড় বোন তাহেরা হক, ছোট ভাই ব্যবসায়ী শেখ মুজিবুর রহমান ইকবাল, ছোট বোন ডা. তাহমিনা আক্তার সামিয়া, ছোট বোন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ী নাদিরা রহমান ও নাহিদা আক্তার, ভাগনি জামাই যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ওয়েস্টিন সাসম্যান ও ভাগনি মিশাসহ পরিবারের সদস্যরা।

যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর নির্বাচিত হওয়ায় এলাকাবাসী মুজাহিদুরকে সংবর্ধনা দেন। সিনেটর নির্বাচিত হওয়ায় বুধবার সন্ধ্যায় বাজিতপুরের সরারচর এলাকার বাড়িতে এ সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়।

মুজাহিদুর রহমান চন্দন বলেন, এলাকাবাসীর এ ঋণ কোনো দিন শোধ করতে পারব না। বাংলাদেশ দ্রুতগতিতে উন্নতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ এখন আর আগের বাংলাদেশ নেই। মানুষের ভাগ্যের উন্নতি হয়েছে। মাথাপিছু আয় বেড়েছে। এ যেন বদলে যাওয়া এক বাংলাদেশ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, স্ত্রী, এক কন্যা ও এক ছেলের বাবা শেখ মুজাহিদুর রহমান চন্দন আটলান্টায় বসবাস করেন। বাবার চাকরির সুবাদে তার ছোটবেলা কাটে ঢাকায়।

বাবা শেখ নজিবর রহমান ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা ও আগরতলা জয়বাংলা যুব শিবিরের সুপারভাইজার। আশির দশকে মুজাহিদুর যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। এরপর তিনি নর্থ ক্যারোলিনায় ইউনিভার্সিটি অব জর্জিয়া থেকে এমবিএ করেন।

মুজাহিদুর রহমান চন্দন গত বছর ডেমোক্র্যাট পার্টির সম্মেলনে জাতীয় কমিটিতে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে কার্যকরী সদস্য নির্বাচিত হন। গত বছরের নভেম্বরে তিনি জর্জিয়া অঙ্গরাজ্য থেকে সিনেটর নির্বাচিত হন। ২০১২ সালে জর্জিয়া রাজ্যের সাধারণ প্রতিনিধি পরিষদের প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আলোচনায় আসেন মুজাহিদুর রহমান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *