পুলিশের একটি নক্ষত্রকে হত্যা, বিচার দাবী বিএমপির

Spread the love

নাগরিক রিপোর্ট: বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের (বিএমপি) ট্রাফিক বিভাগের সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ আনিসুল করিমের মৃত্যুকে নির্মম খুন দাবী করে এর বিচার চেয়েছেন তার সহকর্মীরা। এমন হত্যাকান্ডের ঘটনায় ক্ষুব্ধ, শোকাহত এবং মর্মাহত এখানকার পুলিশ সদস্যরা। বিএমপির মাঠপর্যায় থেকে শুরু করে উর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও আনিসুলকে সম্ভাবনাময় মেধাবী পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে অবহিত করেছেন। মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে মঙ্গলবার জানা গেছে, এ হত্যাকান্ডের আইনী দিক, ফুটফুটে শিশু সন্তাসসহ পরিবারের রুটিরুজির ব্যবস্থার সার্বিক বিষয় মনিটরিং করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।

মঙ্গলবার সকালে নগরীর চৌমাথায় দায়িত্বরত কয়েকজন ট্রাফিক পুলিশকে দেখা গেল বিমর্ষ। সিনিয়র কর্মকর্তা মোহাম্মদ আনিসুল করিমের মৃত্যু নিয়েই সেখানে আলোচনা। নগরীর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তাদেরও আনিসুল এর মৃত্যুতে হতাশা প্রকাশ করতে দেখা গেছে। জানা গেছে, গোটা মেট্রোপলিটন পুলিশই মেধাবী একজন কর্মকর্তাকে হারিয়ে বিস্মিত।

জানতে চাইলে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ কমিশনার (ট্রাফিক) মোহাম্মদ জাকির হোসেন মজুমদার (পিপিএম সেবা) মঙ্গলবার বলেন, সহকর্মী আনিসুল করিম একজন মেধাবী ও সৎ কর্মকর্তা ছিলেন। মাত্র দেড় মাস এখানে কর্মরত থেকে কর্মঠ অফিসার হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ তার এমন মৃত্যু মেনে নিতে পারছে না। তিনি বলেন, এটি একটি হত্যাকান্ড। বিএমপির সকল সদস্য এর বিচার ও অপরাধীদের শাস্তি চান। বাংলাদেশ পুলিশ একজন সম্ভাবনাময় অফিসার কে অকালে হারালেন। কর্মস্থলে সবার সাথে তার ভাল সম্পর্ক ছিল। তিনি মানোসিক অস্থিরতার মধ্যে ছিলেন।

হত্যাকান্ডের আইনগত পদক্ষেপ কি হতে পারে, আনিসুল এর পরিবারকে সাপর্ট দেয়াসহ সব ধরনের বিষয়ে মনিটরিং করছে বিএমপি। তার ৩ বছরের একটি ফুটফুটে ছেলে রয়েছে। পরিবারের পক্ষ থেকে দাবী উঠেছে আনিসুলের স্ত্রীকে চাকরির ব্যবস্থা করা। বিএমপিও এ বিষয়ে আশ্বস্ত করেছে। তিনি বলেন, এমন নির্মম হত্যাকান্ডে ট্রাফিক পুলিশের সবাই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তারা সকলে সহকর্মী আনিসুল করিমের এই হত্যাকান্ডের বিচার চেয়েছেন।

মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের পরিদর্শক (শহর ও জানযাবাহন) মো: আব্দুর রহিম বলেন, আনিচুল স্যার তাদের সাথে প্রায় দেড় মাস কর্মরত ছিলেন। তাকে মাঠপর্যায়ে অত্যন্ত দক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করতে দেখেছেন। ৩১তম বিসিএস পুলিশ ক্যাডারে প্রথম স্থান করেছিলেন তিনি। অত্যন্ত মেধাবী এ পুলিশ কর্মকর্তার মৃত্যুতে তারা মর্মাহত। তিনি বলেন, স্যার ক’দিন ধরে মানোসিক অস্থিরতায় ছিলেন। বেশি কথা বলতেন। ৮ নভেম্বর তাকে তার বাবা ঢাকা নিয়ে যান। পরদিনই তার মৃত্যুর খবর আসে। এটি মানতে পাড়ছে না মেট্রোপলিটিন পুলিশের সদস্যরা।

এদিকে বরিশাল জেলা পুলিশেও হতাশা বিরাজ করছে। জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার নাইমুল হক মঙ্গলবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উল্লেখ করেন, ‘উজ্জ্বল সম্ভাবনময়ী একজন অফিসারের এরকম মৃত্যুকে কিছুতেই মেনে নেয়া যায়না। চোখ বন্ধ করতেই তারা ও সন্তানের হাস্যোজ্জ্বল চেহারা ভেসে উঠে। বরিশালে তার সাথে অনেক অপারেশন করেছি। করোনাকালীন তার সাহসী ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়। তার প্রতি অন্যায় অবিচার করা হলে অবশ্যই শাস্তি আশা করছি।’

এব্যাপারে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো: শাহাবুদ্দিন খান বলেন, ‘সহকর্মী মোহাম্মদ আনিসুল করিমের এমন মৃত্যুতে আমরা সকলেই মর্মাহত এবং বিষ্মিত। আমাদের প্রিয় এই সহকর্মী একজন প্রতিশ্রæতিশীল ও মেধাবী কর্মকর্তা ছিলেন। এখানে যে ক’দিন ছিলেন সততা নিয়ে কাজ করেছেন। মানোসিক একটু সমস্যা ছিল। কিন্তু এরকমভাবে চলে যাবে সেজন্য প্রস্তুত ছিলাম না। এটি পুলিশ বিভাগের জন্য অপরনীয় ক্ষতি। বিএমপি তার পরিবারের পাশে থেকে যা যা দরকার দায়িত্ব পালন করবে।’

পুলিশ কমিশনার শাহাবুদ্দিন খান বলেন, ‘আমরা এর সুষ্ঠ, ন্যাসংগত বিচার চাই। যারা জড়িত তাদের শাস্তির আওতায় আনার দাবী জানাই। তিনি বলেন, পুলিশ কর্মকর্তা আনিসুলের মাগফিরত কামনায় বুধবার দোয়ার আয়োজন করা হয়েছে।’


প্রসঙ্গত, মোহাম্মদ আনিসুল করিম ৩১তম বিসিএস এ পুলিশ ক্যাডারে প্রথম স্থান অধিকার করেছিলেন। তিনি র‌্যাব-৪ এর সাবেক স্কোয়াড কমান্ডার ছিলেন। এছাড়া জেলা পুলিশের মুলাদী সার্কেলের দায়িত্বে ছিলেন। সর্বশেষ বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের (বিএমপি) ট্রাফিক বিভাগের সহকারী কমিশনার কর্মরত ছিলেন। তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের ৩৩ ব্যাচের ছাত্র ছিলেন। তাঁর গ্রামের বাড়ি গাজীপুরের কাপাসিয়ায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *