অবশেষে ব্রিজ হচ্ছে না দুর্গাসাগরের বুক চিরে

Spread the love

নাগরিক রিপোর্ট: দেড়শ বছরের ঐতিহ্যবাহী দুর্গাসাগর দীঘির বুক চিরে ঝুলান্ত ব্রিজ হচ্ছে না। দীঘির টিলার মাঝেও কোন গোলঘর করা হবে না। দুর্গাসাগরের উন্নয়ন পরিবেশসম্মতভাবে চলমান থাকবে। বুধবার রাতে বরিশাল জেলা প্রশাসক এস এম অজিয়র রহমানের সাথে পরিবশেবাদীদের এক বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে।


যদিও গত ৬ নভেম্বর বরিশাল জেলা প্রশাসক এস এম অজিয়র রহমান বলেছিলেন, “দর্শনার্থী টানতেই দীঘির দ্বীপের সাথে সংযোগ করার জন্য কাঠের ব্রিজ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। যারা সাতাঁর জানে না তাদের জন্য দীঘির দ্বীপের সাথে সংযোগ সৃস্টি করে কাঠের ব্রিজ করা হবে। দ্বীপে একটি গোলঘরও হবে। জেলাপ্রশাসনের প্রচেস্টায় এলজিইডি এর ডিজাইন করছে। তবে ইদানিং লক্ষ্য করেছেন এই ব্রিজ করা নিয়ে প্রতিক্রিয়া হচ্ছে। তবে মানুষ না চাইলে ব্রিজ করা হবে না।”


বুধবার রাতের সভায় উপস্থিত অ্যাসোসিয়েশন অব এনজিও ডেভলেপমেন্ট অফ বাংলাদেশ (এডাব) এর সভাপতি কাজী জাহাঙ্গির কবির বলেন, “সরকার দুর্গাসাগর ঘিরে প্রায় ১৬ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে। সভায় আমরা স্থানীয়রা এ বিষয়ে পরামর্শ রাখি। আমাদের দাবী ছিল দীঘির মাঝ দিয়ে টিলার সাথে যুক্ত হয় এমন কোন ব্রিজ করা যাবে না। দীঘির মাঝখানের টিলা কিংবা দ্বীপে গোলঘর, রেস্টুরেন্ট কিছুই করা যাবে না।’ উন্নয়ন সংগঠক জাহাঙ্গির বলেন, ‘তবে জেলাপ্রশাসক এস এম অজিয়র রহমান সভায় বলেছেন, দুর্গাসাগরে ব্রিজ হবে কি হবে না এখন পর্যন্ত এর চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। টিলায় গোল ঘরের পরিকল্পনাও নেই।’


তিনি বলেন, পরিবেশবাদীদের দাবী অনুযায়ী ভবিষ্যতে দুর্গাসাগরে মেহেগুনী, রেইনট্রি, ইউক্লিপ ধরনের লাগানো যাবে না। জেলা প্রশাসক তাতে সম্মত হয়েছেন। জাহাঙ্গির বলেন, দীঘির চারপাশ ঘিরে মাছ ধরার টোং, ভাসমান ঘর, মঞ্চ, স্টেইজ এ লাল রঙ ব্যবহার করা হয়েছে, যা পশুপাখির জন্য ক্ষতিকর। জেলা প্রশাসক প্রতিশ্রæতি দিয়েছেন পরিবেশ বান্ধব রঙ ব্যবহার করা হবে।


আমাদের দাবীর প্রেক্ষিতে চিড়িয়াখানা করার জন্য জমি অধিগ্রহন করার কথা ভাববে জেলা প্রশাসন। তিনি বলেন, সভায় সর্বস্মতভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছে উন্নয়ন কাজ চলবে। তবে পরিবেশ ও জীববৈচিত্রের জন্য ক্ষতির যেসব কারন রয়েছে তা সংশোধন করে পরিবেশ সম্মতভাবে করা হবে।


পরিবেশবাদী সংগঠন গ্রীন মুভমেন্টের জেলা সমন্বয়ক কাজী মিজানুর রহমান ফিরোজ বলেন, দুর্গাসাগর দীঘিতে কোন ধরেন ব্রিজ হচ্ছে না এটি নিশ্চিত। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এর জেলা সভাপতি রনজিৎ দত্ত বলেন, দুর্গাসাগরে ‘সেতু হবে না, যেটি নিয়ে বেশি অবজেকশন ছিল।’


নদী খাল বাচাঁও আন্দোলন কমিটির সদস্য সচিব কাজী এনায়েত হোসেন শিবলু বলেন, সভায় জেলা প্রশাসক তাদের অবহিত করেছেন যে দুর্গাসাগরের উন্নয়ন প্রকল্পে ব্রিজ নেই। এলজিডি এমন একটি প্রস্তাব দিয়েছিল। সেটি পড়ে দেখা হবে। তিনি বলেন, জেলা প্রশাসক তাদের প্রতিশ্রæতি দিয়েছেন যে দুর্গাসাগরের উন্নয়ন হবে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র বজায় রেখে।


প্রসঙ্গত, সম্প্রতি ঐতিহ্যবাহী দুর্গাসাগর দীঘিতে ঝুলান্ত ব্রিজ এবং এর মাঝখানের টিলায় গোলঘর করা হবে এমন খবরে ক্ষুব্ধ ও বিস্মিত হন পরিবেশবাদীরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। এ নিয়ে গত ৭ নভেম্বর ‘দুর্গাসাগর দীঘির বুক চিরে ঝুলান্ত সেতু!’ শিরোনামে ডেইলি নাগরিকে সংবাদ প্রকাশ হলে হৈচৈ পড়ে পরিবেশবাদীসহ বরিশালবাসীর মধ্যে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *