বরিশাল সদর গার্লস স্কুল জালিয়াতি, ৫ বছর পর ছাত্রীকে ভর্তির নির্দেশ

Spread the love

নাগরিক রিপোর্ট: বরিশাল সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ২০১৫ সালের ভর্তি পরীক্ষায় এক ছাত্রীকে অনুত্তীর্ন দেখানোকে চ্যালেঞ্জ করে আদালতে মামলা দায়ের করেছিলেন ছাত্রীর বাবা অ্যাডভোকেট এস এম আবদুল্লাহ। ওই মামলা দায়েরের ৫ বছর পর আদালত ভর্তিচ্ছু ছাত্রী সৈয়দা তাসনিয়া বিনতে আবদুল্লাহ কে বর্তমানে যে শ্রেনীতে অধ্যয়নরত সেই শ্রেনীতে ভর্তির আদেশ প্রদান করেন। তাসনিয়া নগরীর মডেল স্কুল এন্ড কলেজে ৮ম শ্রেনীতে অধ্যয়নরত। বরিশাল সিনিয়র সহকারী জজ আদালতের বিচারক কাজী কামরুল ইসলাম গত ২ নভেম্বর এই আদেশ দেন। যদিও গত ১৫ নভেম্বর আদালতের এ আদেশ প্রকাশিত হয়েছে।


মামলার ৫ বিবাদী ছিলেন- বরিশাল সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভর্তি কমিটির সভাপতি এবং জেলা প্রশাসক, ভর্তি কমিটির সদস্য সচিব এবং বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, বিএম কলেজের অধ্যক্ষ, বরিশাল সিভিল সার্জন এবং শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী।


এই মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাড. মো: আজাদ রহমান বলেন, ২০১৫ সালে সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ৩য় শ্রেনীর প্রভাতী শাখায় ভর্তির জন্য পরীক্ষায় অংশগ্রহন করে মামলার বাদী অ্যাড. এস এম আবদুল্লাহর কন্যা সৈয়দা তাসনিয়া বিনতে আবদুল্লাহ। পরীক্ষায় তার রোল ছিল ১০৪৪। ওই পরীক্ষার ফলাফলে তাসনিয়াকে অনুত্তীর্ন দেখায় ভর্তি কমিটি। তবে ফলাফল চ্যালেঞ্জ করে ২০১৫ সালের ৯ সেপ্টেম্বর সিনিয়র সহকারী জেলা জজ আদালতে মামলা দায়ের করেন ছাত্রীর বাবা অ্যাড. এস এম আবদুল্লাহ।


এর প্রেক্ষিতে আদালত সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৩য় শ্রেনী প্রভাতী শাখার উত্তীর্ন ১২০টি ও অনুত্তীর্ন তাসনিয়ার খাতা তলব করেন। আদালত ১২১টি খাতার মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা কোটার ৬টি বাদ দিয়ে বাকি ১১৪টি খাতা নিরিক্ষা করেন।


টানা ৫ বছর পর গত ১৫ নভেম্বর প্রকাশিত রায়ে আদালত উল্লেখ করেছেন- একই প্রশ্নপত্রে প্রভাতী ও দিবা শাখায় পরীক্ষা হয়। ভর্তি পরীক্ষায় বাদীর কন্যার প্রাপ্ত নম্বর দেখানো হয়েছে ৩৮.৭৫। পরীক্ষায় উত্তীর্ন ৮জন পরীক্ষার্থীর খাতা পর্যালোচনা করে দেখা যায় ১৯ নং প্রশ্নের উত্তর ওই ৮ ছাত্রীই ভুল করলেও তাদের ৪ নম্বর করে দেয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী ওই ৮জন ছাত্রীর প্রাপ্ত নম্বর বাদীর কন্যা পরীক্ষার্থী সৈয়দা তাসনিয়া বিনতে আবদুল্লাহর চেয়ে কম। অথচ বাদীর কন্যাকে অনুত্তীর্ন দেখানো হলেও কম পাওয়া ওই ৮ ছাত্রীকে উত্তীর্ন দেখানো হয়েছে।


আদালত আদেশে উল্লেখ করেন- এর প্রেক্ষিতে বাদীর কন্যা পরীক্ষার্থী সৈয়দা তাসনিয়া বিনতে আবদুল্লাহ ২০১৫ সালের ৩য় শ্রেনীর প্রভাতি শাখার ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ন হয়েছে বলে ঘোষিত হল। পাশাপাশি ১ থেকে ৫ নং বিবাদীকে সৈয়দা তাসনিয়া বিনতে আবদুল্লাহ কে বর্তমানে যে শ্রেনীতে অধ্যয়নরত (অস্টম শ্রেসী) আছে তাকে সেই শ্রেনীতে ভর্তির নির্দেশ প্রদান করা হল। বাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাড. মো: আজাদ রহমান বলেন, এর মাধ্যমে প্রমানিত হল যে সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অনিয়ম ও জালিয়াতি হয়েছিল।


বরিশাল সরকারী বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এবং মামলার ২ নম্বার বিবাদী মাহবুবা হোসেন বলেছেন, তিনি আদালতের আদেশ পেয়েছেন। তবে এটি এক তরফা রায় হয়েছে। তিনি বিদ্যালয়ের সভাপতি জেলা প্রশাসককে অবহিত করেছেন। তারা আদালতের এই আদেশের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ করতে পারেন।


এব্যাপারে মামলার বাদী অ্যাডভোকেট এস এম আবদুল্লাহ বলেন, ৫ বছর আগে তার কন্যা তৃতীয় শ্রেনীতে ভর্তি হতে চেয়েছিল। এখন সে অস্টম শ্রেনীর ছাত্রী। তিনি আইনী লড়াই করে প্রমান করেছেন বরিশাল সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার ফলাফলে অনিয়ম ও জালিয়াতি হয়েছে। এই আদেশে তার কন্যা বরিশালের একটি নামীদামী সরকারী বিদ্যালয়ে পাঠদানের সুযোগ পেতে পারে। কিন্তু ৫ বছর আগে এই সুযোগ পেলে তার কন্যার হয়তো লেখাপড়ার মান আরও ভাল হতো। কেননা তার কন্য মানোসিকভাবে বিপর্যস্ত। তিনি বলেন, এই আদেশের পর আর কোন শিক্ষার্থীকে যেন উত্তীর্ন হয়েও চোখের পানি ফেলতে না হয় এবং কোন বাবা-মাকে এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে না হয় এটাই তার কামনা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *