জলবায়ু পরিবর্তনে বরিশালে বাড়ছে অভিবাসনের স্রোত

Spread the love

নাগরিক রিপোর্ট:
উপকূলীয় এলাকা রাঙ্গাবালির নারী জোহরা রেখা (৪৬) নদী ভাঙ্গনে সব হারিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন বরিশালের রসুলপুর বস্তিতে। কিন্তু সেখানে তার পায়ের তলে মাটি নেই। রোজ উচ্ছেদ আতংকে ভোগেন জোহরা। একই অবস্থা কুমিল্লার লাকসাম থেকে ৮৮’র বন্যায় বরিশালে আসা মামুন হোসেনের (৪০)। বরিশালের এমন শত শত মানুষ বন্যা, নদী ভাঙ্গন, ঘুর্নিঝর এর মত ভয়াল প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পরে জলবায়ু পরির্বতনের শিকার হয়েছেন। যারা সব হারিয়ে বরিশালের বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিচ্ছেন।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বরিশালে ক্রমশই বাড়ছে অভিবাসনের সংখ্যা। এসব মানুষের অনেকেই সরকারের ১৪৬টি সামাজিক নিরাপত্তা প্রকল্পের সহায়তা থেকে বঞ্চিত। জলবায়ু পরিবর্তনে বরাদ্ধকৃত লাখ লাখ টাকা ব্যায় হচ্ছে পার্ক, রাস্তা-ঘাট কালবার্ট নির্মানে। বুধবার এক মতবিনিময় সভায় বক্তরা এসব কথা বলেন।

নগরীর আভাস ট্রেনিং সেন্টারের অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় মুল বিষয়বস্তু ছিল ‘জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিবাসন: প্রেক্ষিত বরিশাল।’ সভায় সভাপতিত্ব করেন আভাসের বরিশাল নির্বাহী পরিচালক রহিমা সুলতানা কাজল। বেসরকারি সংস্থা আভাস, কানসাস এবং অ্যাকশন এইড এ সভার আয়োজন করেছে। দেশের ৬টি জেলা গবেষনা করে বরিশালে অভিবাসনের সংখ্যা বাড়ছে বলে আয়োজকরা মত দিয়েছেন। তাদের মধ্যে রাজধানী কেন্দ্রীক উন্নয়নে অভিবাসনের স্রোত বাড়ছে।

সভায় প্রধান অতিথি বরিশাল জেলা প্রশাসনের উপ পরিচালক ( স্থানীয় সরকার) মো: শহীদুল ইসলাম বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনে নদী ভাঙ্গন, ঘুর্নিঝড়, বজ্রপাতের মত দুর্যোগের শিকার হয়ে মানুষ অভিবাসনে ধাবিত হচ্ছে। কৃষিতে লবনাক্ততা এবং বজ্রপাত এ অঞ্চলের এখন বড় ধরনের সমস্যা। অভিবাসনের কথা মাথায় রেখে প্রকল্পে পরিবর্তন এনেছে সরকার। অভিবাসনে পড়া গৃহহীনরা ঘর পাচ্ছে। কিন্তু অভিবাসনে পড়া মানুষ মধ্যস্বত্তভোগীদের কবলে পড়ে বিপাকে পড়ছেন। তিনি বলনে, সরকার ১৪৬টি প্রকল্পের মাধ্যমে সামাজিক নিরাপত্তা দিচ্ছে। অথচ সঠিক তথ্যের অভাবে অনেকেই এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। আবার জলবায়ু ট্রাস্টের অর্থ ব্যায় হচ্ছে পার্ক, রাস্তাঘাট, কালভার্ট করে। তিনি বলেন, নিজেকে পরিবর্তন না করলে জলবায়ুর প্রভাবের ফলে অভিবাসন শংকার বিষয় হয়ে দাড়াতে পারে।

মতবিনিময় সভায় গৌরনদী থেকে আশা এক অংশগ্রহনকারী বলেন, গৌরনদীতে ৭-৮জন পান চাষী সুধের ফাঁদে পড়ে অভিবাসনের শিকার হয়েছেন। বানারীপাড়ার অংশগ্রহনকারী মিজানুর রহমান বলেন, সন্ধ্যা নদীর ভাঙ্গনে বালাম চাল উৎপাদনে জড়িত কুটিয়াল সম্প্রদায় বিলুপ্তির পথে।
বরিশালের অংশগ্রহনকারী সাংবাদিক স্বপন খন্দকার বলেন, এ অঞ্চলে লবন পানি ঢুকে পড়ায় ফসলের বিপর্যয় ঘটছে। প্লাস্টিক বর্জ্য ধ্বংস করছে পরিবেশ। তিনি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে জলবায়ুর পরিবর্তন এবং অভিবাসনের উপর গুরুত্ব দেন।

মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিবেশ অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় দায়িত্ব প্রাপ্ত পরিচালক মো: কামরুজ্জামান সরকার, জেলা ত্রান ও পূনর্বাসন কর্মকর্তা প্রশাসন্ত কুমার রায়, কৃষি কর্মকর্তা ফাহিমা হক। অনুষ্ঠানের মুল প্রবন্ধ উপস্থান করেন অ্যাকশন এইড এর প্রগ্রাম অফিসার মারিয়া আক্তার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *