বরিশালের ১৪ ইউপি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বি রাখেনি আ’লীগ

Spread the love

নাগরিক ডেস্ক : ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপের তফসিল ঘোষণার পর বরিশালের গৌরনদী উপজেলায় নির্বাচনী আমেজ ছিল অন্য উপজেলার চেয়ে বেশী। সেখানকার ৭টি ইউনিয়নের সবকটিতে ১১ এপ্রিল ভোট গ্রহনের দিন ধার্য হলে পুরো উপজেলাতেই ছিল নির্বাচনী আমেজ। মনোনয়নপত্র দাখিল ও প্রত্যাহার শেষে এ আমেজ ম্লান হয়ে গেছে। সাতটি ইউনিয়নের মধ্যে ৬টিতে আওয়ামীলীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় গুরুত্ব হারিয়েছে তৃনমূলের সর্ববৃহৎ এ ভোট উৎসবটির। প্রায় একই অবস্থা বানারীপাড়া উপজেলায়। সেখানে ৭টি ইউনিয়নের মধ্যে ৫টিতে চেয়ারম্যান প্রার্থীরা জিতেছেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। এ দুই উপজেলাসহ জেলার মোট ১৪ ইউনিয়নে আওয়ামীলীগ দলীয় প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। ১৪ ইউনিয়নে আওয়ামীলীগেরই বিদ্রোহী প্রার্থী ছিল অর্ধশতাধিক।
অভিযোগ রয়েছে, নানামুখী চাপ, হুমকি-ধামকি ও মনোনয়পত্র ছিনতাই করে নেয়ায় গৌরনদীর বাটাজোর, খাঞ্জাপুর, চাঁদশী, মাহিলাড়া নলচিড়া এবং বাকেরগঞ্জের দুধল ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ছাড়া অন্য প্রার্থীরা মনোনয়পত্র দাখিল করতে পারেননি। অবশিষ্ঠ ৮টি ইউনিয়ন যথাক্রমে গৌরনদীর বার্থী, উজিরপুর উপজেলার শোলক, মুলাদী উপজেলার সদর, বানারীপাড়া উপজেলার সদর, বিশারকান্দি, সলিয়াবাকপুর, উদয়কাঠী, ইলুহার ও আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী ও অন্য দলের প্রার্র্থীদের প্রত্যাহার করতে বাধ্য করা হয়েছে। শুধুমাত্র যে ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী শক্ত অবস্থানে সেখানে কিছুটা ভোটের আমেজ আছে।

মুলাদী উপজেলার ছবিপুর ইউপিতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের হাতপাখা প্রতীকের পোষ্টার ছিড়ে ফেলেছে নৌকা প্রতীকের কমীরা


জোরপূর্বক প্রার্থীতা প্রত্যাহার করায় ক্ষোভ থাকলেও নিজভূমিতে টিকে থাকার জন্য প্রতিবাদ করছেন না প্রতিদ্বন্দ্বিতা বঞ্চিত প্রার্থীরা। চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ তাদের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র দাখিল করতে না দেয়া এবং দাখিলকারী প্রার্থীদের জোর করে প্রত্যাহারে বাধ্য করার অভিযোগ জানিয়ে জেলা পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের বরিশাল জেলা সেক্রেটারী উপাধ্যক্ষ সিরাজুল ইসলাম বলেন, ১১ এপ্রিল জেলায় অনুষ্ঠব্য ৫০ইউপি’র নির্বাচনের মধ্যে সবকটিতে তার দল চেয়ারম্যান প্রার্থী দিয়েছিল। আওয়ামীলীগের সন্ত্রাসীরা ভয়ভীতি, বিভিন্নভাবে বাঁধা এবং শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করায় ১২ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করতে পারেননি। মনোনয়নপত্র দাখিল করা ৩৪ জনের মধ্যে ৫ জন পরে প্রার্থীতা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়েছেন। গৌরনদী উপজেলাতে ইসলামী আন্দোলনের একজন প্রার্থীও টিকে থাকতে পারেননি।
উপাধ্যক্ষ সিরাজুল ইসলাম বলেন, গৌরনদীর বার্থী ইউনিয়ন প্রার্থী ওহাব খানকে বাড়িতে আটকে রেখে তার মনোনয়নপ্রত্যাহার ছিনিয়ে নেয়া হয়। শরিকল ইউনিয়নের প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন, উজিরপুর উপজেলার শোলক ইউনিয়নের প্রার্থীকে ভয়ভীতি দেখিয়ে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করতে বাধ্য করা হয়েছে। বাকেরগঞ্জ উপজেলার চরাদী ইউনিয়নের প্রার্থী মো. ইউনুস আহমেদ ও মুলাদীর ছবিপুর ইউনিয়নের আবুল কাশেম প্রত্যাহার না করায় আওয়ামীলীগের সন্ত্রাসীদের হুমকিতে তারা এলাকায় যেতে পারছেন না। অন্যান্য ইউনিয়নেও একই অবস্থা।
জাতীয় পার্টির (জাপা) গৌরনদী উপজেলার সাবেক যুগ্ন সম্পাদক আব্দুল আজিজ মনু শরিকল ইউনিয়ন চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছিলেন। তিনি বলেন, আওয়ামীলীগ ক্যাডারদের হুমকি-ধমকি ও চাপের মুখে শেষ পর্যন্ত মান-সম্মান রক্ষা ও জীবনের ভয়ে প্রার্থীতা প্রত্যাহার করেছি। আব্দুল আজিজ অভিযোগ করেন, ‘নিজের দল জাপা নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেও সহযোগীতা পাইনি’।
এ অভিযোগ অস্বীকার করে জাপার কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি ও জেলা সভাপতি অধ্যক্ষ মহসিন উল ইসলাম হাবুল বলেন, ‘যারা নৌকা প্রতীক পেয়েছেন তারা এক প্রকার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে গেছেন, এটাই এখন ভোটের নিয়ম। তারপরও পার্টির কিছু কিছু নেতা প্রার্থী হয়ে দু:সাহস দেখিয়েছেন। জাপা তাদের পাশে আছে’।
বানারীপাড়া সদর ইউনিয়নের সাবেক চেয়াম্যান আওয়ামীলীগ নেতা মো. আবুল কালাম আজাদ গত নির্বাচনে (২০১৬ সালে) দলের মনোনয়বঞ্চিত হয়ে স্বতন্ত্র নির্বাচন করে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলেছিলেন। নির্বাচনের দুইদিন আগে তার বসতবাড়িসহ আশপাশে ব্যাপক হামলা হলে তিনি নির্বাচনী মাঠ থেকে গুটিয়ে নেন। এবারও স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে শেষ পর্যন্ত প্রার্থীতা প্রত্যাহার করেছেন তিনি। এর কারন জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার ব্যাপক জনপ্রিয়তা থাকলেও মনোনয়বঞ্চিত হচ্ছি। দলের সিদ্ধান্তে এবারের নির্বাচন থেকে সরে দাড়িয়েছি’।
বানারীপাড়া উপজেলার ৮ ইউনিয়নের মধ্যে ৭টিতে ১১ এপ্রিল নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তারমধ্যে ৫টিতে আওয়ামীলীগ দলীয় চেয়ারম্যান প্রার্থীরা বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এ ৫ ইউনিয়নে আওয়ামীলীগেরই বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন ১৫ জন।
প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীদের জোরপূর্বক প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুস। তিনি সমকালকে বলেন, জোর করে প্রার্থীতা প্রত্যাহার করার বিষয়ে কেউ তার কাছে কেউ অভিযোগ করেননি। বিদ্রোহী প্রার্থীরা দলের প্রতি আনুগত্য জানিয়ে এবং অন্যদলগুলো স্থানীয়ভাবে আলোচনা করে সমঝোতার মাধ্যমে প্রার্থীতা প্রত্যাহার করেছেন বলে তিনি শুনেছেন।##

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *