জান্তার বিরুদ্ধে মিয়ানমারের ‘বিউটি কুইন’

Spread the love

নাগরিক রিপোর্ট:
গণমাধ্যমে সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীদের বক্তব্য হেডলাইন হওয়ার ঘটনা বিরল। কিন্তু গত সপ্তাহে যখন ‘মিস গ্রান্ড মিয়ানমার’ হ্যান লে মিয়ানমারে সেনাবাহিনী কর্তৃক সংগঠিত গণহত্যার বিরুদ্ধে কথা বলেন; তার বক্তব্য গণমাধ্যমের হেডলাইন হয়।

মিয়ানমারের সুন্দরী হ্যান লেই থাইল্যান্ডে ‘মিস গ্রান্ড ইন্টারন্যাশনাল ২০২০’ এর ইভেন্টে বলেন, আজ আমার দেশে অনেক লোক মারা যাচ্ছে। প্লিজ, মিয়ানমারকে সহায়তা করুন। এই মুহূর্তে মিয়ানমারে আন্তর্জাতিক সহায়তা প্রয়োজন।

এর এক মাস আগে মিয়ানমারের ২২ বছর বয়সী এই সুন্দরী হ্যান লেই দেশটির সর্ববৃহৎ শহর ইয়াঙ্গুনের রাস্তায় সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে রাজপথে প্রতিবাদে নামেন।

দুই মাস আগে মিয়ানমারে অস্থিরতা শুরু হয়। গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত নেতৃবৃন্দকে ক্ষমতাচ্যুত করে ক্ষমতা দখল করে সেনাবাহিনী। এর আগে গত বছর নভেম্বরে সাধারণ নির্বাচনে ‘ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি’ পার্টি বিপুল ব্যবধানে জয়লাভ করে। কিন্তু সেনাবাহিনী দলটির বিরুদ্ধে নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ এনে নেত্রী অং সান সু চিসহ অন্তত ২৪ জন শীর্ষ নেতাকে আটক করে।

এর বিরুদ্ধে যখন মিয়ানমারজুড়ে হাজার হাজার মানুষ রাজপথে নেমে এসে বিক্ষোভ শুরু করেন, সেনাবাহিনী বিক্ষোভ থামাতে শুরুতে জলকামান এবং টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এর এক সপ্তাহ পর সেনাবাহিনী সহিংসভাবে বিক্ষোভ দমন শুরু করে।

গত সপ্তাহের শনিবার ছিল মিয়ানমারের বিক্ষোভকারীদের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ দিন। এদিন নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে শতাধিক বিক্ষোভকারী নিহত হয়। স্থানীয় একটি মনিটরিং গ্রুপ জানিয়েছে, গত ১ ফেব্রুয়ারি থেকে অন্তত ৫৫০ জন বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছে। এরমধ্যে কমপক্ষে ৪৩ জন শিশু রয়েছেন। জান্তার হাতে নিহত সবচেয়ে কম বয়সী শিশুর বয়স সাত বছর। হ্যান লে ‘ইউনিভার্সিটি অব ইয়াঙ্গুন’র মনোবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশের অবস্থা তুলে ধরার জন্য তিনি সৌন্দর্য প্রতিযোগিতার প্লাটফর্ম বেছে নেন।

এ প্রসঙ্গে ব্যংকক থেকে বিবিসির সঙ্গে ফোনে এক সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, মিয়ানমারে সাংবাদিকদের আটক করা হয়েছে। এ কারণে আমি কথা বলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তার দুই মিনিটের ওই বক্তব্যের কারণে সেনাবাহিনী এখন তাকে টার্গেট করবে বলেও আশঙ্কা করেন তিনি। এ কারণে কমপক্ষে আগামী তিন মাস তিনি থাইল্যান্ডে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানান।

হ্যান লে জানান, তার বন্ধুরা তাকে মিয়ানমার ফিরতে না করেছেন। থাইল্যান্ড ত্যাগের পূর্বে তিনি নিজেকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলার বিষয়টি বুঝতে পারেন। এ কারণে থাইল্যান্ডে তিনি কিছু সময় বসবাসের সিদ্ধান্ত নেন। তিনি বলেন, আমি আমার নিরাপত্তা এবং আমার পরিবার নিয়ে চিন্তিত। কারণ, আমি মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এবং পরিস্থিতির বিরুদ্ধে প্রচুর কথা বলেছি। মিয়ানমারে যা ঘটছে তার বিরুদ্ধে কথা বলার সীমাবদ্ধতা আছে এটা সবাই জানে।

মিয়ানমারের এই সুন্দরীর ভয় ভিত্তিহীন নয়। গত সপ্তাহে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী সামাজিক মাধ্যমে লেখার কারণে ১৮ জন সেলিব্রেটির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *