সৈয়দ জুয়েল:
সাধ, সাধ্য, আর যথাযথ বন্টন যে কোন দূর্যোগের মূল অস্ত্র। যে দেশে এখনো নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্তের মাঝে বিস্তর ফারাক, সেখানে অনেক অনিয়মই নিয়ম হয়ে হাজির হবে, এটা অস্বাভাবিক নয়।
কবি শুকান্ত যথার্থই বলেছিলেন- “ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়,পূর্নিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি”। ক্ষুধা যখন একটি পরিবারের মাঝে প্রবেশ করে, সেখান গনতন্ত্র, রাজতন্ত্র আর ফ্যাসিবাদের নীতি সব একই রকম মনে হয়। বেঁচে থাকাটাই তখন তাদের কাছে মূখ্য। করোনায় মৃত্যু আর আক্রান্তের যে অবনতি হচ্ছে, তাতে লকডাউন যৌক্তিক, কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এটা বেমানান।
যদিও সরকার নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে অসহায় মানুষদের জন্য। কিন্তু প্রতিটি ঘরে সে সহায়তা পৌছানোর মত আলোকিত নেতৃত্ব আমাদের কি তৈরি হয়েছে! যদি তাই হত, আমাদের রাজনীতিবিদদের মাঝে অনেক গরীব মন্ত্রী, এমপি, মেয়র, চেয়ারম্যান, মেম্বার থাকতো। অপ্রিয় হলেও এটাই সত্যি আমাদের বন্টন ব্যাবস্থার সাথে যারা জড়িত,তাদের অধিকাংশই দূর্নীতিবাজ। সর্ষের ভেতরই এক কঠিন ভূত!
যেহেতু এ ভূত তাড়াতে এখনো আমরা শুধু চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছি, তাই লকডাউন না দিয়ে কঠিন বিধি নিষেধ দিয়ে করোনা নিয়ন্ত্রনে রাখার চেষ্টাই হবে সর্বোত্তম পন্থা। প্রতিটি দোকান, অফিস সহ প্রতিটি জায়গায় হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যাবস্থা, মাস্ক ব্যাবহার না করলে স্বাস্তির মেয়াদ বাড়ানো, যাত্রী নিরাপত্তায় প্রতিটি বাসে স্বাস্থ্য সুরক্ষার সরঞ্জামাদি রাখা বাধ্যতামূলক, অন্যথায় জেল, জরিমানার ব্যাবস্থা। বিয়ে বাড়ী, ঘরোয়া পার্টি, জানাজা, জনসভা, মাহফিল, কীর্তন বা যে কোন ধর্মীয় উৎসবে বাহিরে একসাথে অনেক নয়, তবে অবশ্যই স্বাস্থ্য বিধি মেনে।
আর যে কোন ধরনের মিছিল, মিটিং সম্পূর্ন রুপে নিষিদ্ধ। এরকম কঠোর কিছু নিয়ম করলে সংক্রমন অনেকটাই কমে যাবে। তাই লকডাউন নয়, দরকার কঠিন বিধি নিষেধ। করোনার মৃত্যু রোধে কঠোর হতে গিয়ে কোন মানুষ যেন না খেয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে না পরে। রাষ্ট্রের নীতি নির্ধারকে যারা রয়েছেন, তাদের এ পরিস্থিতি বেশ সতর্ক হয়েই সামাল দিতে হবে।
করোনার পরিস্থিতির আরো অবনতি হলে,তার জন্য কতটা প্রস্তুত আমাদের হাসপাতালগুলো! এ নিয়ে দ্রুত একটি টিম গঠনে সমস্যা সমাধানে কাজ করতে হবে এখনই। পরিশেষে করোনা নিয়ে কোন নোংরা রাজনীতি যেন কোন দলই না করে। করোনা কিন্তু সরকারী দল, বিরোধী দল চিনেনা। বনে আগুন লাগলে সেখানে কিন্তু পাখি আর থাকেনা। তাই দল মত নির্বিশেষে এ দূর্যোগে সবার এক হয়ে কাজ করতে হবে। সমালোচনা নয়,সাহায্যের হাত বাড়াতে হবে সবার।