মমতার ঐতিহাসিক জয়

Spread the love

নাগরিক ডেস্ক:
নন্দীগ্রামে চূড়ান্ত রাউন্ডের গণনা শেষে শেষ হাসি হেসেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের প্রধান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ১৬ রাউন্ড ভোট গণনার শেষে মাত্র ৬ ভোটে শুভেন্দু অধিকারীর চেয়ে পিছিয়ে পড়েন তিনি। চূড়ান্ত রাউন্ড গণনার শেষে পশ্চিমবঙ্গের হট সিট হিসেবে খ্যাত এই আসন জিতে নেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী।

সংবাদ সংস্থা এএনআই জানিয়েছে, ১২০১ ভোটে নন্দীগ্রামে জিতেছেন মমতা। এর আগে ১৬তম রাউন্ডের গণনা শেষে ৬ ভোটে এগিয়ে তৃণমূল শিবিরে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছিলেন বিজেপি প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারী।

রবিবার (২ মে) সকালে ভোট গণনার পর থেকেই নিজ আসনে মমতার হেরে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছিল। তাও আবার দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহচর শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে।

এই দুই প্রার্থীর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছে। এক রাউন্ডে শুভেন্দু এগিয়ে গেলে পরে রাউন্ডে আবার মমতা এগিয়ে যাচ্ছেন। এভাবে চলেছে ভোট গণনা।

পশ্চিমবঙ্গে তৃতীয়বারের মতো সরকার গড়তে যাচ্ছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেস। পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার ২৯২টি আসনের ভোট গণনায় দেখা গেছে ২০৭ টিতে এগিয়ে আছে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী।

নন্দীগ্রামে যেন সাপ-লুডোর খেলা চলছিল। একবার মমতা এগোচ্ছেন, তো একবার শুভেন্দু। সবশেষ পঞ্চদশ রাউন্ডের ভোট গণনা শেষে সাড়ে ৪ হাজার ভোটে এগিয়ে যান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

১১ রাউন্ডের শেষে ৩৩২৭ ভোটে এগিয়ে যান ছিলেন মমতা। ১২ রাউন্ডের শেষে ফের এগিয়ে যান শুভেন্দু। ১২ রাউন্ড শেষে শুভেন্দুর প্রাপ্ত ভোট ৭৯ হাজার ৯০। অন্য দিকে মমতা পেয়েছেন ৭৪ হাজার ৬৯১ ভোট।

প্রতিটি রাউন্ডে রীতিমতো ওঠানামা চলছে। হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে টানটান উত্তেজনা নন্দীগ্রামে। গণনায় বিজেপি প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারী এগিয়ে থেকেই শুরু করেছিলেন। তবে সার্ভারে সমস্যা দেখা দেওয়ায় সেখানে ফল ঘোষণায় দেরি হচ্ছে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

স্থানীয় সময় রোববার সকাল ৮টা থেকে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার ২৯২ আসনের ভোট গণনা শুরু হয়েছে। গত ২৭ মার্চ থেকে ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত আট দফায় রাজ্য বিধানসভার ২৯২ আসনে ভোট হয়। সেই নির্বাচনের ফলাফল আজ গণনা করা হয়।

গোটা রাজ্যে ভোট গণনা চললেও বাড়তি নজর ছিল নন্দীগ্রামের দিকে। গোটা দেশই তাকিয়ে ছিল তৃণমূলের আন্দোলন ভূমির দিকে।

হিন্দুস্তান টাইমস জানায়, সকাল ৯ টা ২০ মিনিটে প্রথম রাউন্ডে ১ হাজার ৪শ ৯৭ ভোটে এগিয়ে ছিলেন বিজেপি প্রার্থী শুভেন্দু। সকাল ৯ টা ৪৫ মিনিট দ্বিতীয় রাউন্ডের গণনা শেষে লিড বাড়িয়ে ৪,৫০০-এর বেশি ভোটে এগিয়ে যান শুভেন্দু।

তৃতীয় রাউন্ড শেষে মমতার সঙ্গে তার ভোটের ব্যবধান দাঁড়ায় ৭ হাজার ২৬২।

তবে হিন্দুস্তান টাইমস জানিয়েছে, পঞ্চম রাউন্ডের শেষে ৩,৬৮৬ ভোটে এগিয়ে রয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী। কমেছে তার লিড। ব্যবধান কমিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

মুখ্যমন্ত্রী মমতার প্রতিদ্বন্দ্বী শুভেন্দু তারই একসময়ের ডান হাত, মন্ত্রিসভার সাবেক সদস্য। তিনি গত ডিসেম্বরে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন। গত ১ এপ্রিল নন্দীগ্রামে ভোট হয়। এই দফার ভোটে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও আকর্ষণের কেন্দ্রে ছিল নন্দীগ্রাম।

নির্বাচনের পর বিপুল ভোটে জয়ী হওয়ার ব্যাপারে আশা প্রকাশ করেছিলেন মমতা ও শুভেন্দু। মমতা বলেছিলেন, তিনি নিশ্চিত, এই আসনে ৯০ শতাংশ ভোট পেয়ে তিনিই জিতবেন। অন্যদিকে, শুভেন্দু বলেছিলেন, তিনি মমতাকে অর্ধলক্ষ ভোটের ব্যবধানে মমতাকে হারাবেন।

এক সময় মমতার ‘লেফটেনেন্ট’ হিসেবে পরিচিত শুভেন্দু এবারই প্রথম পদ্মফুল নিয়ে লড়েন। ২০১৬ সালে এ আসনে ঘাসফুলের প্রার্থী হিসেবে জয়ী হওয়া শুভেন্দু গতবছর ডিসেম্বরে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন।

মমতার সরকারে পরিবহন ও পরিবেশ মন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি লোকসভায় তৃণমূলের প্রতিনিধিত্ব করা শুভেন্দু ১৯৯৫ সালে কংগ্রেসের হয়ে কাউন্সিলর নির্বাচনে জেতেন। নন্দীগ্রামে তার ও তার পরিবারের সদস্যদের প্রভাব সুবিদিত ছিল।

এবার ভোটের আগে মমতাকে হারানোর ‘চ্যালেঞ্জ’ দিয়েছিলেন শুভেন্দু। তৃণমূলনেত্রী কলকাতায় নিজের আসন ছেড়ে নন্দীগ্রামে দাঁড়িয়ে সে চ্যালেঞ্জ গ্রহণও করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *