বিলুপ্তির পথে নিয়ামতির মৃতশিল্প, পাশে থাকবে পুনাক

Spread the love

নাগরিক রিপোর্ট:
বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার নিয়ামতি মৃতশিল্পের জন্য বরাবরই ঐতিহ্যবাহী। এখনও সেখানকার ৩টি গ্রামে প্রায় ৩০০ পরিবার বসবাস করে। মাটির নানা পন্য তৈরি করে সারাদেশে সরবরাহও হচ্ছে। কিন্তু প্লাস্টিকের পন্যের চাপে হুমকির মুখে পড়েছে স্বাস্থ্যসম্মত এবং পরিবেশের জন্য নিরাপদ এসব পন্য।

যেকারনে নিয়ামতির বর্তমান প্রজন্ম এ পেশা ছাড়ায় ধীরে ধীরে মৃতশিল্প বিলুপ্তির পথে পৌছাচ্ছে। এদিকে শনিবার বিকেলে ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প এলাকা পরিদর্শন করে এর সার্বিক উন্নয়নে পাশে থাকার প্রতিশ্রæতি দিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ নারী কল্যান সমিতি (পুনাক) বরিশাল জেলার নেতৃবৃন্দ।


জেলার বাকেরগঞ্জে মৃতশিল্পের পাইকারী ব্যবসায়ী মো: নওরোজ আলম হিরু। তিনি বলেন, উপজেলার নিয়ামতি ইউনিয়নের ৩টি গ্রামে ৩০০ পরিবার মৃতশিল্পের সাথে জড়িত। এ ৩টি গ্রাম হচ্ছে মহেষপুর, রামনগর ও ঢালমারা। তারা ৮ ব্যবসায়ী চৈত্রমাসে মৃতশিল্পের পন্য কিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিশেষ করে ঢাকা, ব্রাক্ষèনবাড়িয়া, কুমিল্লা, সাভার, চাঁদপুর, নারায়নগঞ্জের লাঙ্গলগঞ্জে নৌকা করে বিক্রি করেন।


কিন্তু শংকার বিষয় হলো পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর অবৈধ প্লাস্টিকের দৌরতেœ মাটির মালামাল মার খাচ্ছে। অথচ এগুলো স্বাস্থ্যসম্মত এবং পরিবেশের জন্য নিরাপদ। তিনি বলেন, মৃতশিল্পিরা গরিব। ওদের পুজি কম। সহায়তা দরকার। সরকারী সহায্য পেলে এ শিল্প ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করা যাবে। ব্যবসায়ী হিরু বলেন, পাল বাড়ির অনেকেই এখন লেখাপড়া ও চাকরি করেন। অন্যপেশায় চলে গেছেন তারা। এর অর্থ বিলুপ্তির পথে মৃতশিল্প। এই শিল্পট ধরে রাখার জন্য প্লাস্টিকের উপর চাপ কমিয়ে মাটির শিল্প ব্যবহারে আগ্রহ বাড়াতে হবে।


তিনি বলেন, আশার কথা হলো শনিবার বাংলাদেশ পুলিশ নারী কল্যান সমিতি (পুনাক) বরিশাল জেলার নেতৃবৃন্দ নিয়ামতির পাল পাড়া ঘুরে তাদের সার্বিক উন্নয়নে পাশে থাকার প্রতিশ্রæতি দিয়েছেন। এভাবে বিভিন্ন সেক্টর থেকে এগিয়ে এলে নিয়ামতির মৃতশিল্পর জৌলস ফিরতে পারে।
নিয়ামতির মহেষপুর গ্রামের মৃতশিল্প মধুসুধন পাল বলেন, মাটির পাত্র তৈরিতে যে পরিমান পুজি এবং শ্রম দরকার সে অনুযায়ী তারা দাম পান না। বাজার প্রসার না হওয়ায় এবং প্লাস্টিকের অবাধ ব্যবহারে এ শিল্পের প্রতি মানুষের আগ্রহ কম। ঢাল মারা গ্রামের মনির কৃষ্ণ পাল এবং রামনগর গ্রামের স্বপন চন্দ্র পাল বলেন, মৃতশিল্পের জৌলস না থাকায় এ পেশা ছেড়ে দিচ্ছেন অনেকেই।


এদিকে গত শনিবার বিকেলে বরিশালের বাকেরগঞ্জের নিয়ামতি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের মৃৎশিল্পীদের হাতে গড়া ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্পের কাজ পরিদর্শন করেন পুলিশ নারী কল্যান সমিতি (পুনাক) বরিশাল জেলার নেতৃবৃন্দ। জেলা পুনাকের সভানেত্রী সৈয়দা তৌফিকা রফিক এর নেতৃত্বে নেতৃবৃন্দ এসময় মৃৎশিল্পদের সার্বিক উন্নয়নে পাশে থাকার প্রতিশ্রæতি দেন।


এ উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পুনাক সভানেত্রী সৈয়দা তৌফিকা রফিক। উপস্থিত ছিলেন পুনাকের সহ-সভানেত্রী সূচী সুদীপ্ত, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বাকেরগঞ্জ সার্কেল) সুদীপ্ত সরকার, সহকারী পুলিশ সুপার অনন্যা চক্রবর্তী, বাকেরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আলাউদ্দিন হাওলাদারসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং ও পাল সম্প্রদায়ের সদস্যগন।


অনুষ্ঠানে উপস্থিত পুনাক সভানেত্রী সৈয়দা তৌফিকা রফিক ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বাকেরগঞ্জ সার্কেল) সুদীপ্ত সরকার মৃৎশিল্পের নানাদিক, ঐতিহ্য, বর্তমান অবস্থা এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা সম্পর্কে আলোকপাত করেন।


এসময় অতিথিগণ মৃৎশিল্পীদের কয়েকজন প্রতিনিধির কাছ থেকে তাদের সুবিধা-অসুবিধা, কাজের অন্তরায় কি রয়েছে, উন্নয়ন পরিকল্পনা বিষয়ে জানতে চান। পুনাক নেতৃবৃন্দ এসময় মৃৎশিল্পীদের উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে বরিশাল জেলা পুনাক কাজ করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *