বরিশালে বিদ্রোহীদের দাপটে চ্যালেঞ্জে আ’লীগ, বহিস্কার-১৯

Spread the love

নাগরিক রিপোর্ট:
বরিশালে তৃনমুল পর্যায়ের দোড় গোরায় নির্বাচনীয় ডামাঢোল শনিবার শেষ দিনের মত বেজেছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জেলার ৫০টি ইউপির গ্রামগঞ্জ এ প্রচারনা ছিল তুঙ্গে। এর মধ্যে ভোটের এক দিন আগে বিদ্রোহীদের দমনে গন বহিস্কার করেছে আওয়ামী লীগ। দলের শীর্ষ নেতারা তৃনমুল চষে বেড়িয়ে হুশিয়ারী দিলেও নির্বাচনী মাঠ থেকে সরাতে না পাড়ায় অধিকাংশ বিদ্রোহী প্রার্থী ও নেতাদের বহিস্কার করা হলো। তবে স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, বিদ্রোহীদের কোন কোন প্রার্থী এতোটা জনপ্রিয় যে দলের একটি বড় অংশ নিরবে সমর্থন দিচ্ছে। বিশেষ করে মেঘনা পাড়ের হিজলা, নগর ঘেরা সদর উপজেলায় শক্ত অবস্থানে বিদ্রোহীরা। এ অবস্থায় জেলার ১৮টি ইউনিয়নে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।

বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক অ্যাড. তালুকদার মো: ইউনুস এ প্রসঙ্গে বলেছেন, সংগঠনের শৃংখলাবিরোধী কর্মকান্ড করায় জেলার ৬টি উপজেলা থেকে ১৯জন প্রার্থী ও নেতাকে সাময়িক বহিস্কার করা হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলার ২জন, হিজলায় ৪জন, বাকেরগঞ্জে ৪জন, মুলাদীতে ৩জন, বাবুগঞ্জে ৪জন এভং বানারীপাড়ায় ১জন রয়েছেন। তিনি বলেন, এদের সাথে কেউ যোগাযোগ কিংবা নৌকা বিরোধী কার্যক্রমে লিপ্ত থাকলেও ব্যবস্থা নেয়া হবে। শেষ মুহুর্তে যেসব ইউনিয়নে বহিস্কার সেখানে নির্বাচনী পরিবেশ এবং দলের অবস্থান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নির্বাচনী পরিবেশ সুষ্ঠ রয়েছে।

তবে খোজ নিয়ে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহ ধরে বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক অ্যাড. তালুকদার মো: ইউনুস এর নেতৃত্বে আ’লীগ নেতৃবৃন্দ জেলার হিজলা, বাকেরগঞ্জ, বাবুগঞ্জ ও সদর এর দুটি ইউনিয়ন সফর করেছেন। তারা ওইসব ইউনিয়নে বিদ্রোহী প্রার্থীদের ৪৮ ঘন্টার আল্টিমেটাম দিয়ে নির্বাচনী মাঠ থেকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তবে দলের এমন হুশিয়ারী পাত্তাই দেননি বরিশালের বিদ্রোহী প্রার্থীরা।

বরিশাল নগরী ঘেষা সদর উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী কামাল হোসেন লিটন মোল্লা। বরারবই নানা কারনে লিটন এ ইউনিয়নে বিতর্কিত। নগরীর নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের চাঁদাবাজী মামলায় তিনি কয়েক মাস কারাভোগও করেন। তার বিরুদ্ধে ভুমি দস্যুতা ও নারী কেলেংকারীর অভিযোগ রয়েছে। তার প্রতিদ্বন্দী প্রার্থী হিসেবে মাঠে শক্ত অবস্থানে রয়েছেন কাশিপুর ইউনিয়ন আ’লীগের সদ্য বহিস্কার হওয়ায় সভাপতি মো: নুরুল ইসলাম। তিনি এ ইউনিয়নের ব্যাপক জনপ্রিয় বলে স্থানীয় ভোটাররা দাবী করেছেন। বিদ্রোহী প্রার্থী নুরুল ইসলাম এর প্রতি নিরব সমর্থনও রয়েছে বরিশালের এক সাংসদের। সদরের চড়বাড়িয়া ইউনিয়নে বিদ্রোহী প্রার্থী ও আ’লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মো: শহিদুল ইসলাম মাঠ না ছাড়ায় চাপের মুখে পড়েছে আ’লীগের হেবিওয়েট প্রার্থী জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক) মহাতাব হোসেন শুরুজ।

জানতে চাইলে কাশিপুরের চেয়ারম্যান প্রার্থী মো: নুরুল ইসলাম বলেন, ইউনিয়নে দলের জন্য গত ১৮ বছর যাবত কাজ করে যাচ্ছি। আমাকে বহিস্কার করে দল আমার প্রতি অবিচার করেছে। একদিন তারা এ ভুল বুঝতে পারবেন। নুরুল ইসলাম অভিযোগ করেন, নৌকার প্রার্থী লিটন মোল্লার সন্ত্রাসীরা গতকাল শনিবার সকাল থেকে তাকে বাড়ি থেকে বের হতে দেয়নি। তার প্রচার মাইক ভাংচুর করে নর্দমায় ফেলে দেয়া হয়েছে। বিকালে তিনি প্রশাসনের সহযোগীতায় বাড়ি থেকে বের হয়ে শেষ গণসংযোগ করেন।

মেঘনা ঘেরা হিজলার ৫টি ইউনিয়নেই বিদ্রোহীদের সাথে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন আ’লীগের প্রার্থীরা। উপজেলার গুয়াবাড়িয়া ইউনিয়নের আ’লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী অধ্যাপক শাজাহান তালুকদার। এখানে আ’লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী সাবেক কৃষক লীগ আহবায়ক মুন্সী মো: এসহাক আমিন শক্ত অবস্থানে রয়েছেন। এ ইউপির ৯টি ওয়ার্ডের অর্ধেকেরও বেশি আ’লীগ নেতা নৌকার পক্ষে প্রচারনায় নামেনি। মেমানিয়া উপজেলা আ’লীগের বহিস্কৃত সাংগঠনিক সম্পাদক মাস্টার নাসির উদ্দিনর কারনে কঠিন চ্যালেঞ্জে পড়েছেন নৌকার প্রার্থী অলি উদ্দিন তালুকদার। বড়জালিয়া ইউনিয়নে সদ্য বহিস্কৃত আ’লীগের যুগ্ন সাধারন সম্পাদক পন্ডিত সাহাব উদ্দিন আহমেদের কারনে নৌকার প্রার্থী এনায়েত হোসেন হাওলাদার রয়েছেন বিপাকে।

হরিনাথাপুর ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী আ: লতিফ খানও অনেকটা চাপের মুখে পড়েছেন উপজেলা আ’লীগের সদ্য বহিস্কৃত যুগ্ন সম্পাদক এবং চেয়ারম্যান প্রার্থী ফারুক সরদারের কাছে। তবে এ উপজেলায় সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রার্থী হিসেবে লড়াইয়ে মাঠে রয়েছেন বহিস্কৃত ইউনিয়ন আ’লীগের সাধারন সম্পাদক তৌফিকুর রহমান।

জানা গেছে, এই ৫টি ইউনিয়নের বিদ্রোহী প্রার্থীদের নিরবে সমর্থন করছেন হিজলা-মেহেন্দীগঞ্জের শীর্ষ এক জনপ্রতিনিধি। ওই নেতা ভেতরে ভেতরে বিদ্রোহীদের বিজয়ী করতে নেতাকর্মীদের নিয়ে কলকাঠী নাড়ছেন বলে জানা গেছে। হিজলার বহিস্কার হওয়ায় বড়জালিয়া ইউনিয়নে আ’লীগের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ন সাধারন সম্পাদক পন্ডিত শাহাবুদ্দিন বলেন, দল থেকে বহিস্কার হয়েছেন এ খবর তিনি লোকমুখে শুনেছেন। তাকে কেউ নোটিশ করেননি কিম্বা মৌখিকভাবেও কিছু জানানো হয়নি। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, শুরু থেকে তার প্রচারে বাঁধা দিচ্ছে নৌকার লোকজন। প্রশাসন তাকে বিন্দুমাত্র সহযোগীতা করছেন না। এমনভাবে নির্বাচন করার ইচ্ছা থাকলে প্রশসন কেন তাদের মনোনয়নপত্র জমা নিয়েছে এমনটাই প্রশ্ন রাখেন তিনি।

একইভাবে বাকেরগঞ্জের দাড়িয়াল, গারুরিয়া, কলসকাঠী ইউপিতে এবং বাবুগঞ্জ, মুলাদীতে একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় বিপত্তি দেখা দিয়েছে আওয়ামীলীগের চেয়ারম্যান প্রার্থীর মধ্যে। যেকারনে জেলার বিভিন্ন উপজেলার তৃনমুল পর্যায়ে সহিংসতাও ছড়িয়ে পড়েছে। এদিকে নির্বাচনী পরিবেশ সুষ্ঠ করতে শনিবার বিকেলে আইনশৃংখলাবাহিনী বৈঠক করেছে। বরিশালের সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো: নুরুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, সংঘাতময় এলাকায় আইনশৃংখলাবাহিনী সতর্ক রয়েছে। নির্বাচনী এলাকাগুলোতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমান আদালতও কাজ করছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *