বরিশাল বিভাগে বাড়ছে করোনা চিকিৎসার হাসপাতাল-শয্যা

Spread the love

নাগরিক রিপোর্ট : সংক্রমন ও মৃত্যুর উধ্বগতির প্রেক্ষাপটে বরিশাল বিভাগে করোনা চিকিৎসায় পরিধি বাড়ানো হচ্ছে। বিভাগের ৬ জেলার ৩৪টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রত্যেকটিতে ২০ শয্যার করোনা ইউনিট চালু হচ্ছে ২-১ দিনের মধ্যে। এছাড়া বরিশাল মহানগরের একটি বেসরকারী হাসপাতালকেও করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল হিসাবে চালুর উদ্যেগ নেয়া হয়েছে। মঙ্গলবার (৩ আগষ্ট) দুপুরে বরিশালের জেলা প্রশাসক মো. জসীম উদ্দীন হায়দারের সভাপতিত্বে স্বাস্থ্য বিভাগের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় এ তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক ডা. বাসুদেব কুমার দাস মঙ্গলবার বিকালে বলেন, বরিশাল জেলা সদর হাসপাতালে ৭০ শয্যা, ভোলা জেলা সদর হাসপাতালে ১০০, পিরোজপুর জেলা সদর হাসপাতালে ৫০, ঝালকাঠী জেলা সদর হাসপাতালে ৪০, বরগুনা জেলা সদর হাসপাতালে ৫০ এবং পটুয়াখালী জেলা সদর হাসপাতালে ৮০ শয্যা নিয়ে মোট ৩৯০ শয্যার পৃথক করোনা ইউনিট চালু আছে। ওই জেলা সদর হাসপাতালগুলোতে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সেবা পাচেছন রোগীরা। এদিকে স্বাস্থ্য মহাপরিচালকের দপ্তর থেকে প্রত্যেক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে ২০ শয্যার করোনা ইউনিট চালুর নির্দেশনা এসেছে। বুধ-বৃহস্পতিবারের মধ্যে বিভাগের ৬ জেলার ৩৪টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২০ শয্যা করে মোট ৬৮০ শয্যার করোনা চিকিৎসা শুরু হবে।
ডা. বাসুদেব কুমার দাস বলেন, বরিশাল মহানগরের কালিবাড়ি সড়কে অবস্থিত পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের মা ও শিশু কল্যান কেন্দ্রেও ২০ শয্যার নারী করোনা ইউনিট আজ-কালের মধ্যে চালু করা হবে। সেখানে গর্ভবতী মায়েদের পাশাপাশি নারী কোভিড রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেয়া শুরু হবে।
ডা. বাসুদেব বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে করোনা চিকিৎসা চালু এবং জেলা সদর হাসপাতালগুলোর করোনা ইউনিটের সক্ষমতা আরও বাড়ানো হলে বরিশাল শেরেবাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালে রোগীর চাপ কমবে।
শেবাচিম হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ৩০০ শয্যার গত প্রায় একমাস ধরে ৩১৫-৩২০ জন রোগীকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। গত ১১ জুলাই বরিশাল জেলা সদর হাসপাতালে ২২ শয্যার করোনা ইউনিট চালু করা হযেছিল। সেটি এখন ৭০ শয্যায় উন্নীত হয়েছে।
সভায় অংশ নেয়া শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচ এম সাইফুল ইসলাম বলেন, রোগীর চাপে শেবাচিম করোনা ইউনিটের বেসামাল অবস্থা। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে প্রাথমিক পর্যায়ে রোগীদের ভর্তি করা হলে শেবাচিমের চাপ কমবে। অপরদিকে প্রান্তিক পর্যায়ের রোগীরা দ্রুত চিকিৎসা সেবা পাবেন। গ্রামগঞ্জ থেকে রোগীদের শেবাচিম হাসপতালের নিয়ে আসতে পথেই অনেক রোগীর অবস্থা শোচনীয় পর্যায়ে চলে যায়।
ডা. এইচ এম সাইফুল ইসলাম বলেন, পরিবার পরিকল্পনা বিভাগে চিকিৎসক নার্সসহ পর্যাপ্ত জনবল রয়েছে। তাদেরও করোনা চিকিৎসায় সম্পৃক্ত করতে বরিশাল নগরের মা ও শিশু কল্যান কেন্দ্রে ২০ শয্যার নারী করোনা ইউনিট চালু করা হচ্ছে। আমরা পরিস্থিতি সামাল দিতে সর্বশক্তি নিয়ে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাব।
সভার একাধিক দায়িত্বশীল সুত্র জানায়, নগরীর বেসরকারী সাউথ অ্যাপোলো মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও আম্বিয়া মেমোরিয়াল হাসপাতালসহ আরও কয়েকটি বেসরকারী হাসপাতাল প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা পরিদর্শন করবেন। যে বেসরকারি হাসপাতালটিতে করোনা চিকিৎসা দেওয়ার জন্য উপযুক্ত মনে হবে সেই প্রতিষ্ঠানটিতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে করোনা চিকিৎসা শুরু করা হবে। এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় চিকিৎসক-নার্সসহ সরকারি জনবল ওই হাসপাতালে নিয়োজিত করে চিকিৎসা সেবা চালু করা হবে বলে ওই সুত্রগুলো নিশ্চিত করেছে। সুত্রমতে, চলতি সপ্তাহেই নগরীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চালু করা হবে করোনা চিকিৎসা।
সভার সভাপতি জেলা প্রশাসক মো. জসীম উদ্দীন হায়দার বলেন, বরিশাল মহানগরসহ জেলায় করোনা পরিস্থিতি এখন উদ্বেগজনক। তাই চিকিৎসা সেবার পরিধি বাড়াতে স্বাস্থ্য বিভাগের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসক বলেন, স্বাস্থ্য বিধি প্রতিপালনের পাশাপাশি করোনায় আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে যখন যে রকম পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন তা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেয়া হবে।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের বিভাগীয় পরিচালক ডা. মো. আব্দুস সালাম, শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. মো. মনিরুজ্জামান, জেলা সিভিল সার্জন ডা. মনোয়ার হোসেন, পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের উপ পরিচালক ডা. তৈয়বুর রহমান, শেবাচিম হাসপাতালের উপ পরিচালক ডা. জসিম উদ্দিন, সাউথ অ্যাপলো মেডিকেল কলেজ ও হাসপতালের চেয়ারম্যান ডা. মো. জহিরুল হক, আরিফ মেমোরিয়াল হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. নজরুল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) গৌতম বাড়ৈ প্রমুখ।##

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *