বরিশাল বিভাগে সংক্রামন কমতে শুরু করলেও থামছেনা মৃত্যু

Spread the love

নাগরিক রিপোর্ট : বরিশাল বিভাগে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা কমতে শুরু করেছে। তবে মৃত্যুর সংখ্যা আশানুরূপ কমছেনা। গত ৩ আগষ্টের পর থেকে করোনায় আক্রান্ত ও উপসর্গে প্রতিদিন ২০ জনের অধিক মারা যাচ্ছেন বরিশাল বিভাগের ছয় জেলায়। করোনার রোগী কমতে থাকায় দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান চিকিৎসা কেন্দ্র শেরেবাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় হাসপাতালেও ভর্তি রোগীর সংখ্যা কমে আসছে। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে বিভাগীয় কার্যালয় জানিয়েছে, সংক্রামন কমার বিষয়টি নিশ্চিত হতে চলতি সপ্তাহ তারা পর্যবেক্ষন করবেন।
গতকাল সোমবার সকাল ৮টা থেকে আগের ২৪ ঘন্টায় বিভাগে করোনায় আক্রান্ত ও উপসর্গে মারা গেছেন ২১ জন। এর আগে ৪ আগষ্ট ১৩ জনের মৃত্যু ছিল চলতি আগষ্টে একদিনে সর্বনিম্ন মৃত্যুর সংখ্যা। পরদিন ৫ আগষ্ট ৩২ জনের মৃত্যু হলে বরিশাল বিভাগে করোনায় আক্রান্ত ও উপসর্গে একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যৃর রেকর্ড হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিভাগীয় কার্যালয়ের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘন্টায় বিভাগের ছয় জেলায় নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ছিল ২৪ দশমিক ৭৬ ভাগ। চলতি আগষ্টে এটাই একদিনে সর্বনিম্ন শনাক্তের হার। মাসের প্রথম দিন ১ আগষ্ট শনাক্তের হার ছিল সর্বোচ্চ ৩৭ দশমিক ৩১ ভাগ। এ মাসে একদিনে সর্বাধিক নমুনা পরীক্ষা ও শনাক্তের সংখ্যা ছিল গত ৫ আগষ্ট। ওইদিন দুই হাজার ৩৬৩ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৮৫৮ জন পজিটিভ শনাক্ত হন। গত শনিবার (৬ আগষ্ট) সর্বনিম্ন ৭২৩ জনের নমুনা পরীক্ষায় হওয়ায় পজিটিভ শনাক্ত হন সর্বনিম্ন ১৯৫ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিভাগীয় পরিচালক ডা. বাসুদেব কুমার দাস জানান, সোমবার সকাল ৮টা থেকে আগের ২৪ ঘন্টায় করোনায়া আক্রান্ত হয়ে পটুয়াখালী ও বরগুনায় ২ জন করে এবং বরিশাল ও ভোলায় ১ জন করে মারা গেছেন। একই সময়ে বিভাগের ছয় জেলায় মোট এক হাজার ৫৬৭ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৩৮৮ জন পজিটিভ শনাক্ত হন।
শেবাচিম হাসপাতালের করোনা সংক্রান্ত তথ্য প্রদানকারী কর্মকর্তা জাকারিয়া খান স্বপন জানান, গত ২৪ ঘন্টায় করোনা ইউনিটে মোট ১৫ জন মারা যান। তারা সকলে উপসর্গ নিযে চিকিৎসাধীন ছিলেন। হাসপাতালের আরটি পিসিআর ল্যাবে ১৮৮ জনের নমুনা পরীক্ষায় ২৩ জন পজিটিভ শনাক্ত হন। শনাক্তের ১২ দশমিক ২৩। সোমবারের শনাক্তের সংখ্যা ও হার দুটিই গত ১ জুলাইয়ের পর সর্বনিম্ন বলে জানিয়েছেন খান স্বপন।
গত জুনের মধ্যভাগে করোনার তৃতীয় ঢেউ শুরুর প্রায় আক্রান্ত ও শনাক্তের হারে প্রতিদিনই শীর্ষে ছিল বিভাগীয় শহর বরিশাল। এখানে নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে সর্বশেষ সর্বনিম্ন শনাক্তের হার ছিল গত ১ জুলাই ২৩ দশমিক ১৬ ভাগ। এরপরে শনাক্তের হার কখনই ৪০ ভাগের নিচে নামেনি। টানা ৩৯ দিন পর সোমবার শনাক্তের হার কমে হয়েছে ২২ দশমিক ৯৩ ভাগ। ৩৬২ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৮৩ জন পজিটিভ শনাক্ত হন।
গত ২৪ ঘন্টায় সর্বাধিক পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে ভোলায় ১৩৭ জন। ৪১৩ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। শনাক্তের হার ৩৩ দশমিক ১৭ ভাগ। তবে পটুয়াখালী জেলায় ২৪ ঘন্টায় সর্বাধিক ৪৩২ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হলে ৮৯ জন পজিটিভ শনাক্ত হন। শনাক্তের হার ২০ দশমিক ৬০ ভাগ।
এছাড়া পিরোজপুরে ১৩৪ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৩১ জন এবং বরগুনায় ১১৮ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৩২ জন পজিটিভ শনাক্ত হন। দুই জেলাতে শনাক্তের হার যথাক্রমে ২৩ দশমিক ১৩ এবং ২৭ দশমিক ১২ ভাগ। ঝালকাঠী জেলায় ১০৮ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১৬ জন পজিটিভ শনাক্ত হন। নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ১৪ দশমিক ৮১ ভাগ।
শেবাচিম হাসপাতাল সুত্রে জানা গেছে, ৩০০ শয্যার করোনা ইউনিটে গত ১ আগষ্ট সর্বাধিক ৩৫৩ রোগী চিকিৎসাধীন ছিলেন। এরপরে ক্রমাম্বয়ে রোগীর সংখ্যা কমতে থাকে ৬ আগষ্ট ২৮০ জনের নেমে আসে। সোমবার সকাল ৮টা করোনা ইউনিটে চিকিৎসাধীন রোগী ছিল ২২৭ জন। তারমধ্যে পজিটিভ শনাক্ত ছিল ৭৩ জন।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র ও সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) ডা. শ্যামল কৃঞ্চ মন্ডল বলেন, গত ২-৩ দিন যাবত পজিটিভ শনাক্তের সংখ্যা কিছু কম হলেও সেটা সন্তোষজনক নয়। করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন প্রদানে প্রশাসন বেশী মনোযোগী হওয়ায় নমুনা পরীক্ষাও কম হয়েছে। তবে চলতি সপ্তাহে রোগী শনাক্ত ও মৃত্যুর সংখ্যার বিষয়টি পর্যবেক্ষনের পর স্বাস্থ্য অধিদপ্তর নিশ্চিত হতে পারবেন সংক্রামন আসলেই কমেছে কি-না।##

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *