ফরম ফিলাপে অতিরিক্ত টাকা নেয়ার বরিশালে সড়ক অবরোধ

Spread the love

নাগরিক রিপোর্ট : সম্মান দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষার ফরম ফিলাপে বরিশাল নগরীর কলেজগুলোতে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগ তুলেছে শিক্ষার্থীরা। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্ধারিত ফি’র চেয়ে অনেক বেশী টাকা ধার্য করা হয়েছে বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। এর বিরুদ্ধে ব্রজমোহন (বিএম) কলেজের শিক্ষার্থীরা বুধবার কলেজ সংলগ্ন সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন। ৩ ঘন্টা সড়ক অবরোধ করে রাখার পর কলেজ অধ্যক্ষ ৬০০ টাকা কমানোর ঘোষণা দিয়ে শিক্ষার্থীদের শান্ত করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিএম কলেজসহ নগরীর সরকারি সৈয়দ হাতেম আলী কলেজ, সরকারি বরিশাল কলেজ, সরকারি মহিলা কলেজেও সম্মান দ্বিতীয় বর্ষের ফরম ফিলাপে ৫ হাজার টাকার অধিক ধার্য্য করা হয়েছে। শিক্ষার্থীররা অভিযোগ করেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ফি কমাতে হবে এমনটা হিসাব কষেই টাকা ধার্য্য করেছেন শিক্ষকরা, যাতে কমানোর পরেও তাদের বানিজ্যে ঘাটতি না হয়।
বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় বিএম কলেজে গিয়ে দেখা গেছে, কয়েকশ শিক্ষার্থী সংলগ্ন প্রধান সড়কের ওপর অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন। তারা শিক্ষা নিয়ে শিক্ষকদের বানিজ্যে বন্ধের দাবী জানিয়ে শ্লোগান দিচ্ছেন। প্রধান সড়ক অবরোধ করায় নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে মুল শহরে প্রবেশের কলেজ রোড সড়কে যানবহন চলাচল বন্ধ ছিল।
ইংরেজী বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শরিয়তুল্লাহ আদিব বলেন, করোনায় সকল শিক্ষার্থীর পরিবার সংকটে রয়েছে। কলেজ বন্ধ থাকা সত্বেও তার বিভাগে ফরমপুরনের জন্য প্রায় ৫ হাজার টাকা ধার্য করেছে। সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে গত কয়েকদিনে সমালোচনা হলে বুধবার শিক্ষার্থীরা সংগঠিত হয়ে আন্দোলনে নেমেছেন। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনার পরে বেলা ১টার দিকে অধ্যক্ষ ড. মো. গোলাম কিবরিয়া প্রতি বিভাগের শিক্ষার্থীদের কেবল ফরম ফিলাপ বাবদ ৬০০ টাকা কম রাখার আশ্বাস দেন।
ইসলামির ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী মিরাজুল ইসলাম, মো: সুজন বলেন, কলেজ কর্তৃপক্ষ করোনায়ও দয়া দেখাননি। ৬০০ টাকা কম নেয়ার আশ্বাসে শিক্ষার্থীরা সনুÍুুষ্ট না হলেও পরিস্থিতির কারনে তারা মেনে নিতে বাধ্য হয়েছেন।
বিএম কলেজের হিসাব শাখার তথ্যে জানা গেছে, ইংরেজী বিভাগে কেবল ফরফিলাপ বাবদ ৪,৭৯০ টাকা, বিএসএস, বিবিএ বিভাগে ৫,০৪০ টাকা, গনিতে ৫,৬১০ টাকা, উদ্ভিদ বিদ্যা-প্রানীবিদ্যা-মৃত্তিকায় ৫,৫৬০ করে, পরিসংখ্যান বিভাগের জন্য ৫,৮৬০ টাকা ধার্য্য করা হয়েছিল। এছাড়াও বিভাগ ভিত্তিক সেমিনার ফিসহ নানা খাতে আরও ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা ধার্য্য করা হয়েছে।
বিএম কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড: গোলাম কিবরিয়া বলেন, শিক্ষার্থীরা করোনাকালে ফি কমানোর দাবী তুললে ৬০০ টাকা কমানো হয়েছে। তিনি দাবী করেন, ওই ৬০০ টাকাও পরবর্তী সময়ে সমন্বয় করে নেয়া হবে। অধ্যক্ষ বলেন, এর বাইরে সেমিনার ফি দিতে হবে শিক্ষার্থীদের। তার কলেজে সম্মান দ্বিতীয় বর্ষে নিয়মিত প্রায় ৪ হাজার শিক্ষার্থী ফরমপুরন করবেন বলে জানান অধ্যক্ষ।
সরকারী বরিশাল কলেজেও সম্মান দ্বিতীয় বর্ষের ফরম ফিলাপে ৫১০০ থেকে ৫৫০০ টাকা করে ধার্য্য করা হয়েছে। বুধবার কলেজের মার্কেটিং বিভাগের ছাত্র সুব্রত বিশ্বাস বলেন, তাদের কাছ থেকে ৫১০০ টাকা নেয়া হচ্ছে। এ নিয়ে কিছু বলার সুযোগ নেই জানান একাধিক শিক্ষার্থী। তবে কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর আব্বাস উদ্দিন বলেন,‘আমরা পরিপত্র অনুযায়ী ফরপুরন ফি এবং সেশন চার্জ নিচ্ছি। এছাড়া সেমিনার ফি নেয়া হচ্ছে’।
সরকারি সৈয়দ হাতেম আলী কলেজের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মো: আল জুবায়ের জিম বলেন, ফরমপুরন বাবদ ৫ হাজার এবং অন্যন্যখাতে ৩০০ সহ মোট ৫৫০০ টাকা নেয়া হচ্ছে। করোনাকালীন সময়ে এটা অনেক বেশি নিচ্ছেন শিক্ষকরা।
এ প্রসঙ্গে হাতেম আলী কলেজ অধ্যক্ষ মোস্তফা কামাল বলেন, কোন কোন কলেজে সেশন ফি ও পরীক্ষার ফি আলাদা নেয়। আমরা একত্রে নেই। করোনাকালে আমাদেরও পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। বিএম কলেজের মতোই ফি ধার্য্য করা হয়েছে। তবে এখন আর কমানোর সুযোগ নেই। তবে মন্ত্রনালয় চাইলে কিছু কিছু খাত বাদ দিতে পারতো।
হামলার শিকার আন্দোলনকারীরা:
বিএম কলেজে বুধবার আন্দোলন শেষে বাড়ি ফেরার পথে কলেজের মসজিদ গেটের সামনে আন্দোলনের নেতৃত্ব দেয়া বাংলা বিভাগের মো: আসাদ এবং হিসাববিজ্ঞান বিভাগের বিজন সিকদারকে বেদম মারধর করেছে একদল যুবক। পরে তারা ফেসবুক লাইভে এসে জানান, প্রস্তাব পেয়েছিলেন শুধুমাত্র তাদের টাকা হ্রাস করে আন্দোলন থেকে সরে যাবার। কিন্তু সবার স্বার্থে আন্দোলন করেছেন। এখন হামলার পর আর বিচার চাই না’। একাধিক শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ২ ছাত্রের উপর অতর্কিত হামলা করেছে।##

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *