তুলকালামকান্ডের প্রভাব বরিশাল নগর ভবনে

Spread the love

নাগরিক রিপোর্ট : বরিশাল সিটি মেয়র ও মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লহর অনুসারী নেতাকর্মীদের সঙ্গে প্রশাসনের তুলাকালামকান্ডের প্রভাব নগর পরিচালনার প্রধান কেন্দ্রবিন্দু ‘নগর ভবনে’ও পড়েছে। ঘটনার পর গত ১৫ দিন যাবত বরিশালে নেই মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ এবং প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও জনসংযোগ কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা স্বপন কুমার রোহান। তাদের অনুপস্থিতিত নগর ভবনের প্রশাসনিক কার্যক্রম চলছে ঢিলেঢালাভাবে। প্রশাসনিক অনেক ফাইল সিদ্ধান্তহীনতায় আটকে আছে।
তুলাকালামকান্ডের ঘটনায় সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মুনিবুর রহমান ও পুলিশের উপ পরিদর্শক মো. শাহ জালালের দায়ের করা পৃথক দুটি মামলার আসামী মেয়র সেরনিযাবাত সাদিক আবদুল্লাহ ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা স্বপন কুমার রোহান। মেয়র সাদিক গত ২৭ আগষ্ট বরিশাল থেকে ঢাকার বাসায় যান। একইদিন থেকে প্রশাসনিক কর্মকর্তা স্বপন কুমারও বরিশালে নেই বলে জানিয়েছেন নগর ভবনের দায়িত্বশীল সুত্র। তাদের দেয়া তথ্যমতে, মেয়রের সঙ্গেই বরিশাল ছেড়েছেন স্বপন কুমার।
বৃহস্পতিবার বেলা ১২টায় নগর ভবনে গিয়ে দেখা গেছে, করপোরেশনের বিভিন্ন শাখাগুলোতে তেমন কর্মব্যস্ততা নেই। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে ঢিলেঢালা ভাব। বেশীরভাগই নিজ নিজ চেয়ারে থাকলেও গল্প করে সময় কাটাচ্ছেন। দোতালায় মেয়র দপ্তর ২০১ নম্বর কক্ষ এবং সংলগ্ন ব্যক্তিগত কর্মকর্তার কক্ষটি বন্ধ। শুনসান নিরবতা কাউন্সিলদের বসার জন্য নির্ধারিত মিলনায়তনটিতে। খোলা জায়গায় বসে কিছু কর্মচারী বসে খোসগল্প করে সময় কাটাচ্ছেন।
কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ১৮ আগষ্ট প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে তুলকালামকান্ডের পর মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ চাপের মুখে পড়লে কিছুটা স্বস্তির মধ্যে আছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। গত তিন বছরে প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও দুজন নির্বাহী প্রকৌশলীসহ ২০ জনকে মেয়র চাকুরীচ্যুত করায় এবং অর্ধশতাধিক জনের বেতন স্থগিতসহ নানামুখী চাপে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সব সময় ভীতসভ্রন্ত থাকতেন।
সংশ্লিষ্ট সুত্রগুলো জানিয়েছে, ২০১৮ সালের ২৩ অক্টোবর দায়িত্ব নেয়ার পর সর্বোচ্চ ৭দিন নগর ভবনে গিয়েছিলেন মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ। তিনি মাঝে মাঝে আধা কিলোমিটার দুরে এনেক্স ভবন নামে পরিচিত দপ্তরে বসতেন। সুত্রগুলোর দেয়া তথ্যমতে, মেয়র সর্বশেষ নগর ভবনে গিয়েছিলেন প্রায় ৬ মাস আগে বর্তমান প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) কর্মকর্তা সৈয়দ ফারুক আহমেদ দায়িত্ব গ্রহনের পরদিন। তখনও নিজ দপ্তরে না গিয়ে তিনি সিইও’র দপ্তরেই কিছু সময় কাটান।
এসব বিষয়ে জানতে প্রশাসনিক ও জনসংযোগের দয়িত্বরত কর্মকর্তা স্বপন কুমার রোহানের মুঠোফোনে একাধিবার কল দেয়া হলে তিনি সারা দেননি। অভিযোগ রয়েছে, স্বপন কুমার নগর ভবনের কর্মকর্তাদের ফোনেও ধরেন না।
নগর ভবনের কর্মকান্ডে ঢিলেঢালা ভাব ও স্থবিরতা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো, ফারুক আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, সিটি করপোরেশনে সচিব, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, প্রধান প্রকৌশলীসহ গুরুত্বপূর্ন কিছু শুন্য রয়েছে। এসব পদে পদায়ন দিতে মন্ত্রনালয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে। গুরুত্বপূর্ন পদগুলো শুন্য থাকায় নগর ভবনের স্বাভাবিক কার্যক্রম কিছুটা বিঘœ হচ্ছে স্বীকার করেন সিইও। তবে মেয়র ও প্রশাসনিক কর্মকর্র্তার অনুপস্থিতি প্রসঙ্গে তিনি কিছু বলেননি।
সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র গাজী নঈমুল ইসলাম লিটু বলেন, শুন্যপদগুলোতে বিকল্প লোক দিযে কার্যক্রম কাজ চালানো হচ্ছে। তবে এ পদগুলোতে পদায়নের প্রক্রিয়া চলছে। তিনি (মেয়র) শিগগিরই বরিশালে আসবেন। মেয়রের অনুপস্থিতিতে নগর ভবনে কোন প্রশাসনিক জটিলতা নেই বলে জানান প্যানেল মেয়র লিটু।
উল্লেখ্য, সদর উপজেলা পরিষদ চত্বরে স্থানীয় সাংসদ পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীমের পক্ষে জাতীয় শোক দিবসের ব্যানার-ফেষ্টুন গত ১৮ আগষ্ট রাতে সিটি করপোরেশনের কর্মী পরিচয়ে অপসারন করতে যান মেয়র সাদিক আবদুল্লাহর অনুসারী ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীরা। এসময় প্রথমে নিরপত্তাপ্রহরী আনসার সদস্যরা ও পরে ইউএনও মো. মুনিবুর রহমানের বাধা দেয়াকে কেন্দ্র করে আইনশ্ঙ্খৃলা বাহিনীর সঙ্গে মেয়র অনুসারীদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়।##

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *