আন্দোলনে যেকোন ত্যাগ স্বীকারের অঙ্গীকার অঙ্গ-সংগঠন নেতাদের

Spread the love

নাগরিক ডেস্ক : নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনের বিকল্প নেই বলে জানিয়েছেন বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতারা। তারা বলেছেন, দল যখনই আন্দোলনের ডাক দেবে, তখনই তারা ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছেন। বৃহস্পতিবার বিএনপির ধারাবাহিক বৈঠকের তৃতীয় দিনে অঙ্গ সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে তারা এসব কথা বলেন। এ সময় ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীরা যে কোনো ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত রয়েছেন বলে শীর্ষ নেতাদের জানান। বৈঠক সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে।

ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মহিলা দল, তাঁতী দল, ওলামা দল, মৎস্যজীবী দলের সভাপতি ও সম্পাদকদের সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বিভিন্ন বিষয়ে তাদের মতামত নেন। বৈঠকে বিএনপি কেন্দ্রীয় নেতাসহ ৯২ জন অংশ নেন। তবে বিএনপির অন্যতম অঙ্গ সংগঠন কৃষক দল ও জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন-জাসাসের কমিটি না থাকায় এই দুই সংগঠনের দায়িত্বশীল কেউ উপস্থিত ছিলেন না।

বৈঠকে খালেদা জিয়ার মুক্তি, দল পুনর্গঠন, রাজপথের আন্দোলন, জোটের রাজনীতি, নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা-হামলা নিয়ে আলোচনা করেন নেতারা। বৈঠক সূত্র জানায়, নেতারা বলেছেন, আন্দোলনের জন্য তৃতীয় সারি পর্যন্ত বিকল্প নেতৃত্ব তৈরি করতে হবে। মূল দল বিএনপিকে আন্দোলনের সামনে নেতৃত্ব দিতে হবে।

রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বিকেল ৪টায় বৈঠক শুরু হয়। অনলাইনে তাতে যুক্ত হন তারেক রহমান। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক কর্মকৌশল ঠিক করার লক্ষ্যে নেতাদের মতামত জানতে মঙ্গলবার থেকে এ বৈঠক শুরু হয়। প্রথম দিন দলটির ভাইস চেয়ারম্যান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টারা এবং দ্বিতীয় দিন দলটির যুগ্ম মহাসচিব, সাংগঠনিক সম্পাদক, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যদের মতামত নেন তারেক রহমান।

বৈঠক সূত্র জানায়, বিএনপির অঙ্গসংগঠনের নেতারা যেমন নিজেদের সীমাবদ্ধতার কথা বলেছেন, তেমনি হাইকমান্ডও তাদের বিভিন্ন বিষয়ে সতর্ক করেছেন। আন্দোলনকে এগিয়ে নিতে অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের ওপর নির্ভরতার কথাও তুলে ধরেছেন দলের শীর্ষ নেতা।

কয়েকটি অঙ্গসংগঠনের নেতা বিভিন্ন জেলা-উপজেলা কমিটি গঠনে স্থানীয় বিএনপিসহ দলের শীর্ষ নেতাদের তদবিরকে দোষারোপ করেছেন। তারা অভিযোগ করেন, প্রভাবশালী নেতাদের পছন্দের লোককে নেতা বানানো না হলেই তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দেন। কমিটি গঠনে এসব প্রভাব থেকে রক্ষা করতে না পারলে অনেক ত্যাগী ও যোগ্যরা বাদ যেতে পারেন।

কয়েকজন নেতা কৃষক দলের কমিটি নিয়ে লেজেগোবরে অবস্থার চিত্র তুলে ধরেন। তারা বলেন, গুরুত্বপূর্ণ এই সংগঠনের কাউন্সিল হয়েছে ছয় মাস আগে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কমিটি ঘোষণা করা হয়নি। কমিটি গঠনে এ রকম সিদ্ধান্তহীনতা ও সময়ক্ষেপণ দলের জন্য ক্ষতি হচ্ছে। একইভাবে যেসব অঙ্গসংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটি ভেঙে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে, সেসব কমিটিকে নজরদারিতে আনতে না পারলে বছরের পর বছর মেয়াদোত্তীর্ণ অবস্থায় থাকবে। বৈঠকে রাজপথের আন্দোলনের বিষয়ে নেতারা জোরালো অবস্থানে ছিলেন বলে সূত্র জানিয়েছে। তাদের প্রত্যেকের বক্তব্যেই খালেদা জিয়ার মুক্তি ও দেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলনে যাওয়ার পক্ষে মত তুলে ধরেন।

সূত্র জানায়, ওলামা দলের আহ্বায়ক মাওলানা শাহ নেসারুল হক বলেন, ভোটাধিকার, মানবাধিকার পুনরুদ্ধার করতে বিএনপিকেই নেতৃত্ব দিতে হবে। আন্দোলনে তার মতো বয়োজ্যেষ্ঠরাও সাধ্যমতো ভূমিকা পালন করবেন। তিনি বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির মতো বিভিন্ন জায়গায় ধর্মীয় নেতৃত্বকে স্থান দেওয়ার আবেদন করেন।

আরেকজন নেতা বলেন, আন্দোলনের সময় মূল নেতৃত্ব দেবে বিএনপি। কিন্তু সংকটকালে এমপি মনোনয়নপ্রত্যাশী, সাবেক এমপি, মন্ত্রীদের অনেককেই পাওয়া যায় না। তারা মোবাইল ফোন পর্যন্ত বন্ধ করে নিরুদ্দেশ থাকেন, আর ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীরা রাজপথে মার খান। এ অবস্থার পরিবর্তন করতে হবে। তারেক রহমানের সভাপতিত্বে বৈঠকে অন্যদের মধ্যে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে যুবদলের সভাপতি সাইফুল ইসলাম নীরব, সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ, তাঁতী দলের আবুল কালাম আজাদ, মৎস্যজীবী দলের আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম মাহতাব, ছাত্রদলের সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন, সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল, ওলামা দলের আহ্বায়ক শাহ নেসারুল হক, নজরুল ইসলাম তালুকদার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাবন্দি হওয়ার পরে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে এটিই তারেক রহমানের প্রথম আনুষ্ঠানিক বৈঠক।

সংবাদটি সমকাল থেকে সংগৃহীত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *