বিএম কলেজের ৮ পুকুর বহিরাগতদের দখলে

Spread the love

নাগরিক রিপোর্ট:
ঐতিহ্যবাহী বরিশাল সরকারি বিএম কলেজ ক্যাম্পাসে বিশাল আকারের ৮টি পুকুর রয়েছে। মনমুগ্ধকর এ পুকুরগুলো ছাত্র, শিক্ষক থেকে শুরু করে দর্শনার্থীদেরও মনের খোড়াক যোগায় এক সময় ছাত্রবাসের শিক্ষার্থীদের মাছের জোগানও মেটাতো এ পুকুরগুলো। কিন্তু এখন রাজনৈতিক প্রভাবে বহিরাগতদের মাছ চাষের কারনে বেহাত হয়ে গেছে এগুলো। সম্প্রতি ৮টি পুকুর দখল চলে গেছে মহানগর আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এক নেতা কাছে, যিনি একজন মাছ ব্যবসায়ী। তার সাথে রয়েছেন জেলা ছাত্রলীগের এক প্রভাবশালী নেতা।

তাদের লোকজন নেটের বেড়া দিয়ে ঘিরে রেখেছে পুকুরগুলো। এতে একদিকে যেমন পুকুর কলেজের শিক্ষার্থীরা ব্যবহার করতে পাড়ছে না, তেমনি এর সৌন্দর্য্যহানীও ঘটছে। তাছাড়া বড় ধরনের রাজস্ব হারাছে বিএম কলেজ। পুকুরগুলো ইজারা দেয়া হয়েছে কিনা এ বিষয়ে মুখ না খুললেও কলেজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, নেটের বেড়া দ্রুত সরিয়ে ফেলা হচ্ছে।

কলেজের একাধিক বিভাগীয় প্রধান জানান, গত জুনে একাডেমিক কাউন্সিলের এক সভায় পুকুরগুলো নিয়মতান্ত্রিক উপায় ইজারা দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এজন্য প্রফেসর মো: শাহ আলম হাওলাদারকে আহবায়ক করে একটি কমিটি করে হয়। কিন্তু সেই কমিটি রহস্যজনক কারনে আর আলোর মুখ দেখেনি।

কলেজ সুত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি এ পুকুরগুলো মহানগর আ’লীগের এক প্রভাবশালী নেতার হাতে ছেড়া দেয়া হয়েছে বলে। মাছ ব্যবসায়ী ওই নেতা তার লোকজন দিয়ে ৮টি পুকুরেই বেড়া দিয়েছে নেটের। পুকুরগুলোর দেখবালের দায়িত্বে থাকা ছাত্রলীগ কর্মী কবির হোসেন বলেন, তিনি কলেজে এক বছরেও ঢোকেননি। তিনি নেটের বেড়া দেননি। এ বিষয়ে তার কিছুই জানা নেই।

সরেজমিনে কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সম্মুখের, অশ্বিনী কুমার শিশু নিকেতনের সামনের, বিএনসিসি’র সামনের, জীবনানন্দ হলে সামনের, ফ্লাইট সার্জেন্ট ফজলুল হক হলের সামনের একটি করে এবং অশ্বিনী কুমার ছাত্রবাসের সামনের ৩টি পুকুর দেখা গেছে নেটের বেড়া দিয়ে আটকে রাখতে। বিশাল পুকুরগুলোর কোনাটাই ব্যবহারের সুযোগ নেই। এমনভাবে বেড়া দেয়া হয়েছে যে পুকুরগুলোর সৌন্দর্য্য ঢেকে গেছে। ছাত্রমৈত্রী বিএম কলেজ শাখার সভাপতি আরাফাত হোসেন শাওন বলেন, তারা কলেজ কর্তৃপক্ষকে পুকুরগুলো বহিরাগতদের দখল মুক্ত করার দাবী জানিয়েছেন। পুকরের মাধ্যমে কলেজের সৌন্দর্য রক্ষা এবং ছাত্রদের ব্যবহারের সুযোগ না দিলে তারা আন্দোলনে নামবেন।

জানতে চাইলে বিএম কলেজের পুকুর ইজারা সংক্রান্ত কমিটির আহবায়ক এবং কলেজের অশ্বিনী কুমার ছাত্রবাসের তত্বাবধায়ক প্রফেসর মো: শাহ আলম হাওলাদার বলেন, পুকুরের দায়িত্ব অধ্যক্ষের হাতে। তার দায়িত্বকালীন এ পুকুরের এক পিস মাছ কোন ছাত্রের ভাগ্যে জোটেনি। এ পুকুরের উপর ছাত্রদের অধিকার আছে, তারা তাদের মত উদ্যোগ নিতে পারে। পুকুর ইজারা সংক্রান্ত কমিটির কাজের প্রক্রিয়া কোন পর্যায়ে আছে এ বিষয়ে অধ্যাপক শাহ আলম বলেন, ‘এই প্রশ্নের জবাব দিবেন অধ্যক্ষ, তাকে প্রশ্ন করুন।’

তবে কমিটির সদস্য সহকারী অধ্যাপক মো: মনিরুল আহসান হিরু বলেন, কলেজের পুকুরগুলো নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ইজারা দেয়ার জন্য যে কমিটি করা হয়েছিল তিনি তার একটা চিঠি পেয়েছিলেন। নিয়ম হলো আহবায়ক সভা ডাকবেন। কিন্তু সভা না হওয়ায় সেই প্রক্রিয়া আর এগোয়নি।

কলেজের কবি জীবনানন্দ দাশ ছাত্রাবাসের তত্বাবধায়ক বিলাশ মন্ডল বলেন, পুকুরের দায়িত্ব যাকে দিয়েছে তিনিই হয়তো মাছ চাষের জন্য নেটের বেড়ে দিয়েছেন। হোস্টেলের আওতায় নাই পুকুর।

বিএম কলেজের প্রাক্তন ছাত্র এবং শিক্ষক নেতা অধ্যাপক মহসিন উল ইসলাম হাবুল বলেন, এই পুকুরগুলোতে তারা গোসল করেছেন, পুকরের মাছ হোস্টেলের ছাত্ররা খেতেন, পুকুরগুলো এলাকার রিজার্ভ ট্যাংক হিসেবে ব্যাবহৃত হতো। সেই পুকুর বহিরাগতের দখলে থাকা লজ্জাজনক ঘটনা। বিএম কলেজের সাবেক উপাধ্যক্ষ ও সচেতন নাগরিক কমিটির জেলা সভাপতি অধ্যাপক শাহ শাজেদা সাংবাদিকদের বলেন, পুরো বিএম কলেজ এখন একটি মাছের ঘের মনে হচ্ছে। ক্যাম্পাসে গিয়ে কলেজ টিকে চিনতেই পারিনি। আমরা সব সময়ই পুকুরগুলো ছাত্রাবাস কর্তৃপক্ষের কাছে ছেড়ে দিতাম। তারা মাছ চাষ করত যা শিক্ষার্থীরা খেত।

এব্যপারে বিএম কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. মোঃ গোলাম কিবরিয়া বলেন, পুকুনগুলো ঘিরে যে নেটের বেড়া দেয়া হয়েছে তা সরিয়ে ফেলতে বলা হবে। কে বা কারা বেড়া দিয়েছে তা তাদের জানা নেই। পুকুরগুলো ইজারা দেয়া হয়েছে কিনা কিংবা এগুলো থেকে রাজস্ব আয় হচ্ছে কিনা এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এখনই এসব বিষয় কিছু তিনি বলবেন না। কলেজের পুকুর কেন ছাত্ররা ব্যবহার করতে পাড়ছে না এ বিষয়েও অধ্যক্ষ কোন জবাব দেননি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *