চরমোনাইতে হাতপাখা হটাতে নৌকার নির্বাচন সমম্বয়কারী হলেন বিএনপির আহ্বায়ক

Spread the love

নাগরিক রিপোর্ট : বরিশাল সদর উপজেলার চরমোনাই ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে পীর পরিবার হঠাতে আওয়ামীলীগের সঙ্গে বিএনপির একট্রা চুড়ান্ত হয়েছে। নৌকা প্রতীকের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সমম্বয়কারী হিসাবে জেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি সৈয়দ আনিছের সঙ্গে ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক সালাম রাঢ়ীর নামও রাখা হয়েছে। স্থানীয় আওয়ামীলীগ ও বিএনপির নেতাদের মধ্যে দফায় দফায় বৈঠক শেষে গত বৃহস্পতিবার এ সিদ্ধান্ত চুড়ান্ত হয়।
তবে ইউপি নির্বাচন নিয়ে বিএনপির সঙ্গে ঐক্যমতের কথা স্বীকার করলেও বিএনপি নেতা সালাম রাঢ়ীর সঙ্গে বৈঠক করার কথা অস্বীকার করেছেন জেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি সৈয়দ আনিছ। অপরদিকে সালাম রাঢ়ী এর আগে নির্বাচনে নৌকার পাশে থাকার কথা সমকালকে বললেও গতকাল মঙ্গলবার আওয়ামীলীগের সঙ্গে সভা কিম্বা নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সমম্বয়কারী হওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন।
বরিশাল সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি কাজী এনায়েত হোসেন বাচ্চু বলেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস আক্তার জাহান শিরিনের নির্দেশে আব্দুস সালাম রাঢ়ীকে ২৪ ঘণ্টার সময় দিয়ে কারন দর্শাতে বলা হয়েছে। তিনি সোমবার রাত ৮টায় নোটিশ গ্রহন করেছেন। মঙ্গলবার রাত ৮টার মধ্যে জবাব দিতে না পারলে তার বিরুদ্ধে সাগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তবে সালাম রাঢ়ী মঙ্গলবার দুপুরে  বলেন, তিনি দল থেকে কোন ধরনের নোটিশ পাননি।
সালাম রাঢ়ীকে দেয়া কারন দর্শানোর নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে, “গত ১৮ অক্টোবর চরমোনাইর রাজারচর ক্লাবে আওয়ামীলীগ নেতাদের সঙ্গে সভা করে নৌকা প্রতীকের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সম্বয়কারী নিযুক্ত হয়েছেন। ২১ অক্টোবর বুখাইনগর মাদ্রাসা মাঠে আরেকটি সভায় আনুষ্ঠানিকভাবে আপনাকে সমম্বয়কারী হিসাবে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়। যা সম্পুর্ন দলীয় শৃঙ্খলা ও স্বার্থবিরোধী। এর প্রমান হিসাবে ভিডিও ও স্থিরচিত্র সংরক্ষিত রয়েছে”।
চরমোনাই ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি অমল সরকার বলেন, রাজারচর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে জেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি সৈয়দ আনিছ ও ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক সালাম রাঢ়ীর উপস্থিতিতে নৌকা প্রতীকের সমর্থনে সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ওই দুই নেতাকে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সমম্বয়কারী করার সিদ্ধান্ত হয়। তারা নিজ নিজ দলের অবস্থানে থেকে নৌকা প্রতীকের পক্ষে কাজ করবেন।
চরমোনাই ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ন আহ্বায়ক আমিনুল ইসলাম মাসুম বলেন, তার দল বর্তমান সরকারের অধীনে সকল নির্বাচন বর্জন করেছে। সালাম রাঢ়ী নিজ স্বার্থ হাসিলের জন্য আওয়ামীলীগের সঙ্গে ঐক্য করে নৌকার পক্ষে নির্বাচন করছেন। তার বহিস্কারের দাবীতে গত ২২ অক্টোবর বিশ্বাসেরহাটে ইউনিয়ন বিএনপি নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ করেছেন।
বিএনপির সঙ্গে ঐক্য ও সালাম রাঢ়ীকে সমম্বয়কারী করা হয়েছে কি-না জানতে চাইলে জেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি সৈয়দ আনিছ বলেন, পীর পরিবারের অত্যাচার নির্যাতনে চরমোনাই ইউনিয়নবাসী অতিষ্ঠ। আওয়ামীলীগ-বিএনপি কোন দলের নেতাকর্মীরা পীর পরিবারের নির্যাতন থেকে রেহাই পাচ্ছেন না। প্রায় দুইদশক চেয়ারম্যান পদে থেকেও পীর পরিবার চরমোনাইতে কোন উন্নয়ন করেনি, লুটপাট করেছে। তাই আসন্ন নির্বাচনে পীর পরিবার হঠাতে চরমোনাইতে বিএনপি আওয়ামীলীগের সঙ্গে ঐক্যমত হয়েছে। তবে দলের আদর্শে বিরুদ্ধে গিয়ে সালাম রাঢ়ীর সঙ্গে বৈঠক বা তাকে সমম্বয়কারী করার কথা অস্বীকার করেছেন প্রবীন এ আওয়ামীলীগ নেতা।
নৌকার প্রার্থী চরমোনাই ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের আহ্বায়ক মাষ্টার নুরুল ইসলাম বলেন, গত ১৮ ও ২১ আগষ্টের সভায় তিনি উপস্থিত ছিলেন না। সেখানে সালাম রাঢ়ী ছিলেন কিনা বা তাকে সমম্বয়কারী করা হয়েছে এসব বিষয় তার জানা নেই।
উল্লেখ্য, আগামী ১১ নভেম্বর অনুষ্ঠব্য চরমোনাই ইউপির নির্বাচনে হাতপাখা প্রতীকের প্রার্থী হয়েছেন চরমোনাই পীরের ছোট ভাই সৈয়দ জিয়াউল করীম। এ ইউনিয়নে ২০০২ সাল থেকে চেয়ারম্যান পদে পীর পরিবারের সদস্যরা বিজয়ী হয়ে আসছেন। চলতি মাসের মধ্যভাগে রাজারচর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বিএনপির এক সভায় এবারের নির্বাচনে হাতপাখা প্রতীক ঠেকাতে নৌকার পক্ষে থাকার ঘোষণা দেয়া হয়। জেলা বিএনপির সভাপতি এবায়দুল হক চাঁন ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন। এনিয়ে গত ১৮ আগষ্ট প্রকাশিত সংবাদে চান বলেছিলেন, পীর পরিবারের অত্যাচার থেকে বাঁচতে স্থানীয় বিএনপি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

প্রসংঙ্গত, ২০০১ সালের ১ অক্টোবর জাতীয় নির্বাচনের দিন চরমোনাইতে তৎকালীন বিএনপি দলীয় প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ারের ওপর হামলার ঘটনার পর থেকে পীর পরিবারের সঙ্গে স্থানীয় বিএনপির নিরব বিরোধ চলছে।##

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *