নাগরিক রিপোর্ট:
নিষিদ্ধ ঘোষনা হলেও তোয়াক্কাই করছে না বরিশালে কোচিংসেন্টারগুলোর কর্তৃপক্ষ। নগরীর এক ডজন স্পটে ভোর হলেই বসছে কোচিং এর হাট। তাতে দলে দলে শিক্ষার্থী যোগ দিচ্ছে মডেল টেস্ট, ক্লাস, টিউটেরিয়ালসহ নানা বিষয়ে অংশ নিতে। কেবল একটি গলিতেই ১৫ থেকে ২০টি কোচিং সেন্টার রয়েছে। বন্ধ ঘোষনার কারনে অনেকটা লুকোচুরি করে অব্যাহত রেখেছে কোচিং বানিজ্য। অভিযোগ রয়েছে, এসব কোচিংসেন্টারের নেপথ্যে বরিশালের নামীদামী স্কুলের শিক্ষকরা জড়িত। প্রসঙ্গত, গত ২৩ নভেম্বর পর্যন্ত বরিশালে কোচিং সেন্টার বন্ধের ঘোষনা দিয়ে গনবিজ্ঞপ্তি জারি করেছে জেলাপ্রশাসন।
গত ১২ নভেম্বর এক গনবিজ্ঞপ্তিতে বরিশাল জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার বরিশাল নগরীসহ গোটা জেলার সকল কোচিংসেন্টার বন্ধ ঘোষনা দেন। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে- এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা সুষ্ঠ, সুন্দর ও নকলমুক্ত নকলমুক্তভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে জেলার সকল কোচিং সেন্টার ১৪ নভেম্বর থেকে ২৩ নভেম্বর পর্যন্ত বন্ধ ঘোষনা করা হলো।
কিন্তু এই নিষেধাজ্ঞার ধার ধারছে না বরিশাল নগরীর কোচিংসেন্টার মালিকরা। সরেজমিনে শুক্রবার সকাল থেকে নগরীর বিভিন্ন অলিগলি ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। যদিও কোচিং সেন্টারের মালিকরা একে অপরের দোষ দিচ্ছেন। খোজ নিয়ে জানা গেছে, নগরীর সরকারি বালিকা বিদ্যালয় সংলগ্ন সালাম স্টোর্স এর পাশের গলিতে ভোর হলেই কোচিংসেন্টারের হাট বসে। সেখান প্রায় ১৫-২০টি কোচি সেন্টার রয়েছে। জেলা প্রশাসনের গনবিজ্ঞপ্তির কারনে গলির প্রধান গেট আটকে ভেতরে কোচিং সচল রাখা হচ্ছে।
এজন্য শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের একজন একজন করে ভেতরে প্রবেশ করানো হয়। এ গলির সাইন্স একাডেমি, জালাল একাডেমি, সৈকত একাডেমিতে শুক্রবার দিনভর ছুটির সুযোগে কোচিং কার্যক্রম চলেছে দেদারছে। এখানকার কয়েকটি কোচিং সেন্টার নেপথ্যে পরিচালনা করছেন বরিশাল জিলা স্কুল ও সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।
একইভাবে নগরীর পুলিশ ক্লাবের সম্মুখে সবুজ একাডেমি কেয়ার, একই স্থানের বড় ম্যাডামের কোচিং সেন্টার, পেস্কার বাড়ি, শাহিন কোচিং, শিক্ষন কোচিং, আদম আলী হাজির গলি, গোরস্থান রোড, বগুড়া রোডে কোচিংসেন্টারগুলো তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে।
শুক্রবার সকালে শতাধিক শিক্ষার্থীদের মডেল টেস্টা নেয়া পুলিশ ক্লাবের সবুজ একাডেমি কেয়ারের শিক্ষকদের দেখা গেছে সতর্কভাবে একজন একজন করে ছাত্র-ছাত্রী ভেতরে প্রবেশ করাচ্ছেন। এ বিষয়ে সবুজ একাডেমির কেউ কথা বলতে চাননি।
বটতলা আদম আলী হাজীর গলিতে বেসিক কোচিংসেন্টার এ একাধিক ব্যাচের শিক্ষার্থীদের শুক্রবার দেখা গেছে। নগরীর অক্সফোর্ড মিশন এলাকার শহীদ কোচিং সেন্টারেও একই দিন শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা ছিল। তবে এসব কোচিং সেন্টারের কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলার চেস্টা করলেও তারা দ্রুত সটকে পড়ছেন।
স্বাধীনতা প্রধান শিক্ষক পরিষদের বরিশাল জেলা সাধারন সম্পাদক গোলাম মোস্তফা এ তথ্য স্বীকার করে বলেন, তার জানামতে কেবল নগরীতেই ৫০টির অধিক কোচিং সেন্টার রয়েছে। এর মধ্যে ২/৩ টা বন্ধ থাকতে পারে। তবে অধিকাংশই নানা কৌশলে খোলা রাখছে। যদি তাই না হয়, তাহলে ভোর হলেই কোমলমতি ছাত্রছাত্রীরা কোথায় যায়? তিনি আক্ষেপ করে বলেন, কোচিং সেন্টাগুলো কেবল সিট দেয়ার নামে ফ্যাশনে পরিনত হয়েছে। এর সাথে নগরীর সরকারী ও বেসরকারী স্কুলের শিক্ষকরা নেপথ্যে জড়িত। তারা কোচিং সেন্টারের মালিক হলেও স্টুডেন্ট দিয়ে পাঠদান করায়। তিনি এজন্য কোচিং সেন্টারকে নীতিমালার আওতায় আনার আহবান জানান।
বরিশাল জেলা শিক্ষা অফিসার মো: জাহাঙ্গির হোসেন বলেন, জেলা প্রশাসনের গনবিজ্ঞপ্তি মানতে বাধ্য। যেসব কোচিংসেন্টার এটি মানছে না সেগুলোর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। নগরীর নামী দামী সরকারি ও বেসরকারি স্কুলের শিক্ষকদের কোচিং বানিজ্যে জড়িত থাকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য মনিটরিং করা হবে।
এব্যাপারে বরিশাল জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) সোহেল মারুফ বলেন, গনবিজ্ঞপ্তি মানতে কোচিং সেন্টারগুলোকে কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। নির্দিস্ট এ সময়ের মধ্যে বরিশাল নগরীসহ গোটা জেলায় কোচিং কার্যক্রম করা যাবে না। কিন্তু অভিযোগ আসায় যে কোন সময়ে জেলা প্রশাসন থেকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রে পাঠিয়ে অভিযানের মাধ্যমে খোলা রাখা কোচিংসেন্টারগুলোকে আইনের আওতায় আনা হবে। তিনি বলেন, কোচিং এর সাথে শিক্ষকরা জড়িত রয়েছে কিনা তাও যাচাই করে দেখা হচ্ছে।