আবরার হত্যার রায় ও নষ্ট রাজনীতি

Spread the love

সৈয়দ জুয়েল:
বুয়েটের তড়িৎ ও ইলেক্ট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যা রায়ে বিশজনের ফাঁসি ও পাঁচজনের যাবজ্জীবন কারাদন্ডের আদেশে স্বস্তির নিঃশ্বাস সাধারনের মাঝে। কিন্তু একজন মায়ের স্বস্তি কি মিলবে এই জনমে! রায় ঘোষনার পরে তার প্রতিক্রিয়া বর্ননা করছিলেন এভাবে-” আমার সন্তানকে যখন ওরা পিটিয়ে মারছিলো ও তখন হয়তো মা বলে চিৎকার দিচ্ছিলো,মুখে কাপড় বেঁধে রাখায় সে শব্দটাও বের হয়নি।শরীরের যে সব স্থানে ওরা পিটিয়েছে-হাত বেঁধে রাখায় ব্যাথার যন্ত্রনার সে সব স্থানে হাতও দিতে পারেনি আমার ছেলেটা।’

আহ! একজন মা তার ছেলের সে সময়ের করুন মুখটি স্নরন করে এখনও বেঁচে আছেন, থাকবেন। এটিকে কি বেঁচে থাকা বলে!

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে যারাই পড়ালেখা করেন, তারা সবাই মেধাবী। যারা কয়েক দফা পিটিয়ে হত্যা করলো তারাও মেধাবী। কথা হলো মেধাবী হলেই কি মনুষ্যত্ব বোধ জন্মে! মেধাবীর সংজ্ঞা কি! রাষ্ট্র, পরিবারের এখানে ভুমিকা কি!
যারা হত্যাকারী তাদের পরিবারকেও হত্যাকারীর পরিবার হিসেবেই চিহ্নিত করে গেলো সমাজে।

আবরারের বাবা, মাও যেভাবে চেয়েছিলো তার ছেলে পড়ালেখা শেষে দেশ সহ পরিবারের দায়িত্ব নিবে, তেমনি হত্যাকারীদের বাবা, মায়েরও ঐ একই চাওয়া ছিলো। একটি জাতি গঠনে মেধাবীদের যেমন জরুরী,তার চেয়েও বেশি জরুরী মানবিক মানুষ হওয়া। অন্ততঃ আবরার হত্যার মধ্য দিয়ে এটি আরো স্পষ্ট হলো।

বুয়েটের শের-ই বাংলা হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে যেখানে আবরার ফাহাদ নিহত হলেন সেই কক্ষে শুধু আবরারেই স্বপ্ন নিহত হলনা,হলো হত্যাকারী পঁচিশ জন ছাত্রের স্বপ্নও। সাথে তাদের পরিবার ও রাষ্ট্রেরও ক্ষতি হলো।

কথা হলো নষ্ট রাজনীতির বাতাস শিক্ষা প্রতিস্ঠানে কেন! এই রাজনীতির জন্য কত মায়ের বুক খালি হলো বিদ্যাপীঠে। এরপরও কেন এই হলি খেলা! কোন বাবা মা-ই তাদের সন্তানদের রাজনীতি করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় পাঠাননা। তাহলে কারা এদের উদ্বুদ্ধ করেন?

একজন মেধাবী আরেকজন মেধাবীকে পিটিয়ে মারার আগে কেন ভাবেনা, তার পরিবরের কথা, রাষ্ট্রের কথা! যে কান্না বইছে আবরারের পরিবারে, সে কান্না আজ বইছে হত্যাকারী পরিবারের মাঝেও।

আবরার ফাহাদের মায়ের আঁচলে চোখের জলের যে দাগ পরেছে,সে দাগ কখনই শুকায়না। নষ্ট রাজনীতির বলি আবরারের মায়েদের এ চোখের জলের কোন রং প্রকাশ্যে দেখা না গেলেও,অন্তরে বিঁষের বাঁশির অভিশপ্ততা। এ অভিশাপ থেকে রাষ্ট্র, রাজনীতি, দায় এড়াতে পারেনা।

যে মায়েদের হাতে যত্নে ভরা আদর,ভালবাসা নিয়ে বড় করেন তাদের সন্তানদের,সে হাতে সন্তানদের লাশ গ্রহনে আর যেন ভাড়ী না হয় অভিশাপের খাতা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *