প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে হতাশা: কেন্দ্রীয় সভাপতির এলাকায় নেতৃত্বহীন ছাত্রলীগ

Spread the love

নাগরিক রিপোর্ট:
প্রায় ১১ বছর পর আট মাস আগে কেলেংকারীর অভিযোগে বরিশাল নগর ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষনা করা হয়। অপরদিকে ৩ সদস্যের জেলা ছাত্রলীগের কমিটির মেয়াদও এক যুগ ছুইছুই। এরই মধ্যে জেলা সভাপতি নগর আ’লীগের দপ্তর সম্পাদক হওয়ায় এদিকে চোখ পড়ছে না তার। মেয়াদ উত্তীর্ন এই বরিশাল জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগ এখন চলছে অনেকটা নেতৃত্বহীন। এ অবস্থা নিয়ে আগামীকাল মঙ্গলবার নানা কর্মসুচীতে ৭৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করতে যাচ্ছে ছাত্রলীগ।

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতির এলাকা বরিশালে সংগঠনে এভাবে নেতৃত্ব সংকট থাকায় নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা দানা বাধছে। এদিকে দীর্ঘ বছরে বরিশালে ছাত্রলীগের নতুন নেতৃত্ব সৃস্টি না হওয়ার ব্যার্থতা স্বীকার করে অচিরেই কমিটি গঠনের আশ্বাস দিয়েছেন সিটি মেয়র ও নগর আ’লীগের সাধারন সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ।

গত শুক্রবার ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর প্রস্তুতি সভায় মেয়র সাদিক বলেন, প্রতিবারই আমরা বলি এই শেষ তোমাদের নেতৃত্ব। তারপরও তোমরা ধরে রাখছো অনেদিন। আমার ব্যর্থতা যে ছাত্রলীগের কমিটি করতে পারিনি। এই দায় আমার উপরই পরে। তিনি এজন্য করোনা প্রাদুর্ভাবের কথা উল্লেখ করেন।

জানা গেছে, ২০১১ সালের জুলাইয়ে বরিশাল জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের ৩ সদস্য বিশিস্ট কমিটি করা হয়। মহানগর ছাত্রলীগ গত ১১ বছরে আর পূর্নাঙ্গ হয়নি। এরই মধ্যে গত ২৫ মে মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষনা করে কেন্দ্রীয় কমিটি। অভিযোগ রয়েছে নগর ছাত্রলীগের সভাপতি জসীম উদ্দীনের বিরুদ্ধে নারী কেলেংকারীর অভিযোগ ওঠার পরপরই কমিটি বিলুপ্ত করা হয়।

জানতে চাইলে বিলুপ্ত নগর ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক অসীম দেওয়ান বলেন, বরিশালে ছাত্রলীগে এখন আর চেইন অব কমান্ড নেই। স্থানীয় রাজনীতির স্বার্থ ও গ্রুপিং এর কারনে তারা কমিটি পূর্নাঙ্গ করতে পারেননি।

তবে নগর ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত মাইনুল ইসলাম বলেন, সম্প্রতি প্রস্তুতি সভায় মেয়র সাদিক বলেছেন যে, ছাত্রলীগের কমিটি না করতে না পাড়ার ব্যার্থতা তার। নতুন নেতৃত্ব গঠনে তিনি উদ্যোগী হবেন। মাইনুল বলেন, এমন নেতৃত্ব চাই না যে অসীম-জসীমের মত নানা ধরনের কেলেংকারীতে জড়িয়ে ১১ বছরেও পূর্নাঙ্গ কমিটি না করুক। ছাত্রলীগ কর্মী মোস্তাফিজুর রহমান অনিক বলেন, আমাদের তো কমিটিই নেই। তাই সবাই মিলে মহানগর ছাত্রলীগ করছি। আমাদের অভিভাবক সাদিক ভাই, উনি যেটা করবেন সেটাই হবে।

এদিকে ২ বছর মেয়াদী বরিশাল জেলা ছাত্রলীগেরও মেয়াদ হয়েছে ১১বছর। সংগঠনটির সভাপতি সুমন সেরনিয়াবাত এখন নগর আ’লীগের দপ্তর সম্পাদক। ছাত্রলীগের একাধীক কর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, নগর কমিটিই বিলুপ্ত। জেলার সভাপতি সময় দিতে পারছেন না। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান জয় এর বাড়ি বরিশালের বাবুগঞ্জে। তার নিজের এলাকায় এভাবে ছাত্রলীগে নেতৃত্ব সংকটে থাকায় দলের প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সুমন সেরনিয়াবাতকে এ বিষয়ে জানতে ফোন দেয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে জেলা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে তারা বর্নাঢ্য র‌্যালীসহ নানা কর্মসুচী নিয়েছেন। নগর বিলুপ্ত হলেও যৌথই কর্মসুচী হবে। ছাত্রলীগ নেতা রাজ্জাক বলেন, নগরের দুইটি কলেজের এখনও সভাপতি তারা দুই জনেই (সভাপতি-সম্পাদক)। কেন নগর কমিটি কেন্দ্র দিচ্ছে না তা তার জানা নেই। তবে জেলা কমিটির সম্মেলন করে তারা নতুন নেতৃত্ব সৃস্টি করতে চান।

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান জয়কে এ বিষয়ে জানতে একাধিকবার ফোন দেয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে বরিশাল মহানগর ছাত্রলীগের সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় উপ সমাজসেবা সম্পাদক তানভির হাসান সৈকত  বলেন, বরিশাল ছাত্রলীগ সভাপতি আল নাহিয়ান জয়ের এলাকা। সেখানকার নগর কমিটি কিভাবে গতিশীল করা যায় তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তিনি (জয়) ইতোমধ্যে স্থানীয় নেতৃবৃন্দের সাথে কথাও বলেছেন। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা সৈকত বলেন, এটা দু:খজনক যে দীর্ঘবছর বরিশাল নগরে নেতৃত্ব নেই। তারা এখানে দ্রুত নেতৃত্ব সৃস্টি করে শৃংখলা ফিরিয়ে আনতে চান।

বরিশাল জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সহ সম্পাদক ফারুকুল ইসলাম  বলেন, নতুন কমিটি না হওয়ায় বরিশাল জেলায় নতুন নেতৃত্ব সৃস্টি হচ্ছে না। তারা শনিবারও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটি দিয়েছেন। বরিশাল ছাত্রলীগ সভাপতির নিজ এলাকা হওয়ায় তিনি এ বিষয়ে আলোচনা করে যাচ্ছেন। তারা সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি করতে চান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *