ফোর লেন প্রকল্প: নগরীর শতশত ভবন গুড়িয়ে দেয়ার আশংকা

Spread the love

নাগরিক রিপোর্ট ॥ বরিশাল নগরীতে কয়েকশত বহুতল ভবন ভেঙ্গে চারলেন মহাসড়ক করার উদ্যেগ নিতে যাচ্ছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ)। “ফরিদপুর-ভাঙ্গা-বরিশাল-পটুয়খালী-কুয়াকাটা জাতীয় মহাসড়ক চারলেনে উন্নীতকরন” প্রকল্পের আওতায় এ কাজ করবে তারা। এনিয়ে ক্ষোভ-হতাশা দেখা দিয়েছে শত শত পরিবারে। তারা কয়েক বছর আগে নেয়া সিদ্ধান্তনুযায়ী নগরীর একপাশ দিয়ে চারলেন বাইপাস সড়ক নির্মানের দাবী জানিয়ছেন। এ দাবীতে সোমবার প্রকল্প পরিচালক ও বরিশাল সওজের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সুশীল কুমার সাহার কাছে স্মারকলিপি দেয়া হয়েছে।
ঢাকা-কুয়াকাটা মহাড়কের ১২ কিলোমিটার অংশ নগরীর বুক চিরে বয়ে গেছে। তারমধ্যে নগরীর গুরুত্বপূর্ন ও দৃষ্টিনন্দন আবাসিক এলাকা হলো সিঅ্যান্ডবি সড়ক। ব্যস্ততম বানিজ্যিক এলাকা সাগরদী বাজার। সর্বোচ্চ ১০তলাসহ অগনিত সুদৃশ্য বহুতল অট্রালিকা আছে এসব এলাকায় মহাসড়কের পাশে। এসব অট্রালিকা তথা জনপদ মাটিতে মিশিয়ে চারলেন মহাসড়ক করার পরিকল্পনা নিয়েছে সওজ। এজন্য নগরীর মধ্যে মহাসড়কের দুপাশে ২০ একর জমি অধিগ্রহনের চুড়ান্ত প্রক্রিয়া প্রায় সম্পন্নের পথে।
এ উদ্যেগ বাস্তবায়ন হলে নগরীতে হাজার হাজার পরিবার শুধু ভিটেমাটি হারা হবেন না, বরিশাল পরিনত হবে একটি বিপদজনক নগরীতে। কারন পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে মালবাহি বড় বড় লড়ি ও কন্টেইনারগুলো চলাচল করবে নগরীর বুক চিরে।
সওজের এমন সিদ্ধান্তে ক্ষুদ্ধ নগরীতে সম্ভাব্য ভূক্তভোগী হাজার হাজার পরিবার। তারা এর বিরুদ্ধে জীবনপন আন্দোলনে নামার ঘোষনা দিয়ে গঠন করেছেন ‘শহর বাইপাস সড়ক বাস্তবায়ন কমিটি’।
তাদের বক্তব্য, দুই বছর আগে গড়িয়ারপাড় থেকে চহঠা-বারুজ্জারহাট-রুইয়ার পুল-টিয়াখালী-দপদপিয়া এলাকা দিয়ে বিকল্প চারলেন বাইপাস মহাসড়ক নির্মানের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সওজ। বরিশাল-ঢাকা এবং বরিশাল-কুয়াকাটা সড়কের সংযোগ করবে এ বাইপাস সড়কটি। সওজ এ সিদ্ধান্ত পাশ কাটিয়ে নগরীর মহাসড়কটি চারলেন করার উদ্যেগ একটি হটকারী সিদ্ধান্ত। এতে শত শত বহুতল ভবন গুড়িয়ে দিয়ে মানুষকে পথে বসানো হবে। আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কম জনবসতী এলাকা দিয়ে বিকল্প বাইপাস সড়ক নির্মান করা হলে বরিশাল নগরীও নিরাপদ হবে।
বরিশাল সওজ সুত্রে জানা গেছে, ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়কের বরিশাল নগরীর প্রবেশদ্বার গড়িয়ারপাড় মোড় থেকে শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত সেতু (দপদপিয়া সেতু) পর্যন্ত প্রায় ১২ কিলোমিটার বরিশাল সিটি করপোরেশনের আওতার্ভূক্ত। বিভাগের ৫ জেলার পণ্য ও যাত্রীবাহি পরিবহন নগরীর মাঝ বরাবর মহাসড়ক ব্যবহার করায় এ ১২ কিলোমিটার অতি ঝূকিপূর্ন হিসাবে চিহিৃত।
মহাসড়কের নগরীর ভেতরের অংশ চারলেন করার সত্যতা নিশ্চিত করেছে বরিশাল সওজ। নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম মোস্তফা জানান, “ফরিদপুর-ভাঙ্গা-বরিশাল-পটুয়খালী-কুয়াকাটা জাতীয় মহাসড়ক চারলেনে উন্নীতকরন” প্রকল্পের আওতায় ভূমি অধিগ্রহনের প্রশাসনিক অনুমোদন হয়েছে। বর্তমান মহাসড়কটিই চারলেন করা হবে। ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে পটুয়াখালীর কুয়াকাটা পর্যন্ত চারলেনে উন্নীত করতে প্রয়োজন হবে দেড়শ ফুট প্রসস্থ জমি। সওজের উচ্চ পর্যায়ের সার্ভে বিভাগ মহাসড়কের অধিগ্রহনকৃত বর্তমান জমির সঙ্গে প্রয়োজনীয় আরও ৩০২ একর জমি অধিগ্রহনের নকশা চুড়ান্ত করেছে। বরিশাল জেলা অংশে অধিগ্রহন করতে হবে ৯০ দশমিক ৫৮ একর জমি।
অধিগ্রহনের জন্য সওজের প্রস্তত করা তালিকায় দেখা যায়, বরিশাল নগরীর মধ্যে ১২ কিলোমিটার মহাসড়কের দুপাশে মোট ২০ একর জমি অধিগ্রহন করা হবে। এ পরিমান জমিতে থাকা শত শত বহুতল ভবনসহ অগণিত স্থাপনা গুড়িয়ে দিয়ে বসতীদের উচ্ছেদ করা হবে।
প্রকল্প পরিচালক ও সওজের বরিশাল বিভাগীয় অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সুশীল কুমার সাহা বলেন, ১৮শ ৬৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ভাঙ্গা থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত মহাসড়ক চারলেন প্রকল্পের জন্য মোট ৩০২ একর জমি অধিগ্রহনের প্রস্তাব প্রশাসনিক অনুমোদন হয়েছে। প্রকল্পের দেয়া সময়নুযায়ী ২০২০ সালের ৩০ জুনের মধ্যে জমি অধিগ্রহন সম্পন্ন হবে। সংশি¬ষ্ট জেলার জেলা প্রশাসক এ সময়ের মধ্যে অধিগ্রহন সম্পন্ন করবেন।
নগরীর মধ্যে জমি অধিগ্রহনের খবর গত সপ্তাহে জানাজানি হলে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। মহাসড়ক সংলগ্ন জমি ও ভবন মালিকরা সওজের এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার ঘোষনা দিয়েছেন। তারা বৃহস্পতিবার রাতে সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল¬াহর সঙ্গে দেখা করে এর প্রতিকার চেয়েছেন। সোমবার স্মারকলিপি দেয়া হয় প্রকল্প পরিচালককে।
সিঅন্ডবি সড়কের বাসিন্দা বিদ্যুৎ বিভাগের সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী নজরুল ইসলাম নীলু বলেন, বরিশাল ছাড়া দেশের কোথাও মূল নগরীর ভেতর দিয়ে মহাসড়ক নেই। ৫ জেলার ভারি যানবহন চলায় এমনিতেই মহাসড়কটি অত্যন্ত ঝূকিপূর্ন।
প্রকৌশলী নীলু বলেন, পদ্মা সেতু ও পায়রা সমুদ্র বন্দর চালুর পর বরিশাল নগরী নিরাপদ রাখার উদ্দেশ্যে নগরীর প্রবেশমুখ গড়িয়ারপাড়-চহঠা-বারুজ্জাহাট-রুইয়ার পুল-টিয়াখালী-দপদপিয়া পর্যন্ত একটি বিকল্প চারলেন বাইপাস মহাসড়ক নির্মান প্রকল্প বরিশাল সওজ ২০১৭ প্রনয়ন করে। প্রস্তাবিত এলাকা নগরীর বর্ধিত পশ্চিমাংশে জনবসতিও খুৃব কম। এ প্রকল্পটি বাদ দিয়ে নগরীর ভেতরর মহাসড়ক চারলেন উন্নীত করে হাজার হাজার পরিবারের জীবন অনিশ্চয়তার মুখে ঠেলে দেয়া হয়েছে।
বাইপাস সড়ক বাস্তাবায়ন কমিটির যুগ্ন আহবায়ক সিএন্ডবি সড়কের বাসিন্দা মো মুকিবুর রহমান মুকিব বলেন, নগরীর মধ্যে অধিগ্রহনের জন্য তালিকাভূক্ত জমিতে ৫ তলার ওপরে ভবন রয়েছে কমপক্ষে ২০০। আছে অসংখ্য মসজিদ, হাসপাতাল, মন্দির, শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। এগুলো গুড়িয়ে দেয়া কেউ মানবেন না।
৭ তলা ভবনের মালিক জাকির হোসেন সুলতান বলেন, “জীবনের সব আয় দিয়ে এ ভবনটি করেছি। উচ্ছেদ করলে হয়তো ক্ষতিপুরন পাবো। জীবনের শেষ বয়সে এসে নতুন করে এমন ভবন আর করতে পারবোনা”। সিঅ্যান্ডবি সড়কের বাসিন্দা মীর্জা গোলাম রাব্বানী বলেন, মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহও নগরীর মধ্যে চারলেনের মহাসড়ক করতে নারাজ। এটা হলে নিত্যদিনের দূর্ঘটনায় মুত্যুর মিছিল বাড়বে বলে তিনি শংকার কথা জানিয়েছেন।
প্রকল্প পরিচালক ও সওজের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সুশীল কুমার সাহা নগরীর মধ্য থেকে চারলেন করার বিষয়ে বলেন, অনেকে আপত্তি নিয়ে তার কাছে গিয়েছিল। নগরী এড়িয়ে বিকল্প চারলেনের বাইপাস নির্মানের পরিকল্পা আপাতত তাদের নেই।##

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *