পরিবহন ধর্মঘটের নেপথ্যে প্রভাবশালী আওয়ামীলীগ নেতারা

Spread the love

নাগরিক রিপোর্ট : নগরী সংলগ্ন রায়পাশা-কড়াপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আহমেদ শাহরিয়ার বাবু ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক। বরিশাল জেলা টেম্পু মালিক সমিতি ও নগরের রূপাতলী বাস টার্মিনাল কেন্দ্রীক বাস শ্রমিকদের সংগঠন জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারন সম্পাদকও তিনি। একই টার্মিনাল কেন্দ্রীক বাস মালিকদের সংগঠন বরিশাল-পটুয়াখালী বাস মালিক সমিতির সম্পাদক কাওছার হোসেন শিপন মহানগর আওয়ামীলীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক। দুইজনেই বরিশাল নগর আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ও সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর অস্থাভজনদের অন্যতম।

চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও খুলনার ধারাবাহিকতায় বিএনপির বরিশালের গণসমাবেশেকে কেন্দ্র করে ৪ ও ৫ নভেম্বর বিভাগের ছয় জেলায় পরিবহন ধর্মঘট আহ্বানকরীদের অন্যতম হলেন এই দুই আওয়ামীলীগ নেতা। আবার বাস মালিকরা যে দাবীতে ধর্মঘট ডেকেছেন তার পাল্টা দাবীতে ৪ ও ৫ নভেম্বর তিন চাকার যানবহন বন্ধ ঘোষণা করেছেন বরিশাল জেলা টেম্পু শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারন সম্পাদক কামাল হোসেন লিটন মোল্লা। তিনি নগরঘেষা কাশীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক।

অর্থাৎ বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে দুইদিনের পরিবহন ধর্মঘট আহ্বানকারীদের নেপথ্যে রয়েছেন আওয়ামীলীগ নেতারা। তারা স্থানীয় বাস মালিক-শ্রমিক সংগঠনগুলোর নিয়ন্ত্রক। বিভাগের ৬ জেলার বাস মালিকদের নিয়ে গঠিত সমম্বয় পরিষদের নামে দুইদিন ধর্মঘট আহ্বান করা হয়েছে। যদিও ধর্মঘট আহ্বানকারীদের দাবী, পরিবহন ধর্মঘটের সঙ্গে রাজনৈতিক কোন সম্পর্ক নেই। তারা নিজ দাবীতে ধর্মঘট ডেকেছেন।

জানা গেছে, বরিশালের পরিবহন সেক্টর অদৃশ্যভাবে নিয়ন্ত্রন করেন সিটি মেয়র ও মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। তিনি পরিবহন সেক্টরে বরিশাল বিভাগ জুড়ে দুটি সংগঠনের সভাপতি। সংগঠন দুটি হচ্ছে- বরিশাল বিভাগীয় আঞ্চলিক সড়ক পরিবহন মালিক ফেডারেশন এবং বরিশাল বিভাগীয় আঞ্চলিক সড়ক পরিবহন মালিক ও শ্রমিক ঐক্য ফেডারেশন।

বরিশাল জেলা বাস মালিক গ্রুপের সভাপতি গোলাম মাশরেক বাবলু জানিয়েছেন, মহাসড়কে তিন চাকার যানবহনসহ অনুমোদনহীন যানবহন চলাচল বন্ধের দাবীতে বরিশাল বিভাগীয় বাস মালিক সমম্বয় পরিষদ দুইদিনের ধর্মঘট আহ্বান করেছেন। বিভাগের ৬ জেলায় দুুইদিন বাস চলাচল বন্ধ থাকবে। বিএনপির গণসমাবেশের সময়ে ধর্মঘটের তারিখ নির্ধারন হলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, অন্যন্য জেলা সংগঠনের সঙ্গে আলোচনা করতে তাদের কিছুটা সময় লেগেছে।

গোলাম মাশরেক বাবলুর বক্তব্য যে সত্য নয় তার সত্যতা মিলেছে ভোলা জেলা বাস মালিক সামিতির সাধারন সম্পাদক আবুল কালামের বক্তব্যে। আবুল কালাম বলেন, দ্বীপ জেলা ভোলার সঙ্গে বরিশালসহ দেশের কোন জেলার সরাসরি সড়ক যোগাযোগ নেই। জেলা শহরের সঙ্গে উপজেলা শহরের যোগাযোগেই তাদের একমাত্র সড়কপথ। যে কারনে তারা কোন ধর্মঘটেও নেই। তবে অভ্যন্তরীন সড়কেও থ্রি-হুইলার চলাচল করায় তারাও ভূক্তভোগী। তাহলে থ্রি হুইলার চলাচল বন্ধের দাবীর ধর্মঘটে কেন যুক্ত হবেন না জানতে চাইলে জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ন সাধারন সম্পাদক এই বাস মালিক নেতা বলেন, বিষয়টি নিয়ে নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনা করবেন।

একই প্রশ্নে আটকে যান পিরোজপুর জেলা বাস মালিক সমিতির সাধারন সম্পাদক সরদার শহিদুল ইসলাম। এ জেলাটি খুলনা বিভাগের বাগেরহাট জেলাঘেষা। ২দিনের ধর্মঘটে বরিশালমুখী বাসের সঙ্গে বাগেরহাট-খুলনামুখী বাসও বন্ধ রাখা হবে কি-না জানতে চাইলে সরদার শহীদুল ইসলাম বলেন, এজন্য তাদের বাগেরহাট বাস মালিক সমিতির সঙ্গে আলোচনা করতে হবে।

ঝালকাঠী জেলা বাস মালিক সমিতির যুগ্ন সম্পাদক ও ভৈরবপাশা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি মো. নাসির উদ্দিন জানান, তাদের সমিতিভুক্ত সব রুটের বাস দুইদিন বন্ধ রাখবেন।

উল্লেখিত ৩ জেলার সংগঠকই জানিয়েছেন, ধর্মঘটের বিষয়ে তারা আগে জানতে না। ধর্মঘট চুড়ান্ত হওয়ার পর সমম্বয় পরিষদ চিঠি দিয়ে তাদের অবহিত করেছে।

অপরদিকে টেম্পু শ্রমিক ইউনিয়ন ৫ দফা দাবীতে ৪ ও ৫ নভেম্বর জেলায় তিন চাকার চলাচল বন্ধের ঘোষনা দিয়েছে রোববার রাত ৯টায়। তাদের প্রধান দাবী হচ্ছে- মহাসড়কে বাস মালিক-চালকদের তিন চাকার যানবহন চলাচলে বাঁধা ও চালকের হয়রানি বন্ধ। তিন চাকার যান চলাচল বন্ধের দাবীতে বিএনপির গনসমাবেশের সময়ে দুইদিনের বাস ধর্মঘটের মধ্যে একই সময়ে টেম্পু শ্রমিক ইউনিয়নের পাল্টা ধর্মঘট পুরো বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। এবিষয়ে জানতে সংগঠনের সাধারন সম্পাদক লিটন মোল্লার দুটি মোবাইল ফোন নম্বরে বার বার কল দেয়া হলে বন্ধ পাওয়া গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুধু বরিশাল নয়, বিভাগের অপর ৫ জেলায়ও বাস মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের শীর্ষ পদগুলো স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতাদের দখলে। সিটি মেয়র ও মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুলাহর শ্বশুর আনোয়ার হোসেন সিকদার জেলা ট্রাক মালিক সমিতির সভাপতি। মেয়রের প্রধান আস্থাভাজন হিসাবে পরিচিত মহানগর আওয়ামীলীগের শিল্প ও বানিজ্য বিষয়ক সম্পাদক নিরব হোসেন টুটুল বিভাগীয় ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি।

বরিশাল কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল (নথুল্লাবাদ) কেন্দ্রীক সংগঠন বরিশাল বাস মালিক গ্রুপের সভাপতি গোলাম মাশরেক বাবলু ও সাধারন সম্পাদক কিমোর কুমার দে প্রত্যক্ষভাবে রাজনীতিতে নেই। তবে টার্মিনাল সুত্রে জানা গেছে, এই টার্মিনালের মুল নিয়ন্ত্রক হলেন, মালিক সমিতির সদস্য মহানগর ছাত্রলীগের আহ্বায়ক রইছ আহমেদ মান্না। নগরের রূপাতলিতে আরেকটি বাস টার্মিনাল কেন্দ্রীক বরিশাল-পটুয়াখালী বাস মালিক সমিতির সভাপতি মোমিন উদ্দিন কালু পদহীন আওযামীলীগ নেতা এবং সাধারন সম্পাদক কাওছার হোসেন শিপন মহানগর আওয়ামীলীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক। ঝালকাঠী জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি সরদার শাহ আলম বাস মালিক সমিতিরও সভাপতি। সাধারন সম্পাদক মিলন মাহমুদ বাচ্চু রাজাপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ সভাপতি। পটুয়াখালী জেলা আওয়ামীলীগের শিল্প ও বানিজ্য বিষয়ক সম্পাদক মো. রিয়াজ উদ্দিন মৃধা জেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি এবং সাধারন সম্পাদক আরিফুজ্জামান রণি জেলা যুবলীগের সহ সভাপতি। ভোলা জেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি আখতার হোসেন লালমোহন উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি। সাধারন সম্পাদক আওয়ামীলীগ ঘরনার হলেও তার দলীয় পদ নেই। বরগুনা জেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা কিসলু দলীয় পদে নেই। সাধারন সম্পাদক সগীর হোসেন জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য। পিরোজপুর জেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি জসিম উদ্দীন জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সদস্য ও সাধারন সম্পাদক সরদার শহীদুল ইসলাম স্থানীয় আওয়ামীলীগের পদহীন নেতা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *