ভেঙ্গে ফেলা হচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলের ঐতিহ্য কলসকাঠী জমিদার বাড়ি

Spread the love

নাগরিক রিপোর্ট : ৩ শতাধিক বছরের ঐতিহ্য বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার কলসকাঠী জমিদার বাড়ির অবকাঠামো ভেঙ্গে ফেলা হচ্ছে। উত্তরাধিকার সুত্রে মালিকানা দাবী করে অবকাঠামো ভাঙ্গার কাজ শুরু হয়। এনিয়ে ক্ষোভ বিরাজ করছে সমাজসচেতন মানুষের মধ্যে। তারা ইতিহাস ও ঐতিহ্যের স্বাক্ষ্য জমিদার বাড়িটি রক্ষার দাবী জানিয়েছেন।

রোববার সকালে ভবন ভাঙ্গার কাজ শুরু করে মালিকপক্ষ দাবীদারদের নিযুক্ত শ্রমিকরা। খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইএনও) সজল চন্দ্র শীল ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়ে বিকাল ৩টায় শ্রমিকদের কাজ বন্ধ করে দেন।

জানা গেছে, কলসকাঠী ইউনিয়নে মোট ১৩জন জমিদার ছিলেন। তাদের বাড়িগুলো শত শত বছরের ইতিহাসের স্বাক্ষ্য বহন করে। সংস্কার, রক্ষণাবেক্ষন ও ভূমিদস্যুদের জালিয়াতিতে বেশীরভাগ বাড়ি প্রায় বিলুপ্তির পথে। এসব জমিদার বাড়ি দেখতে কলসকাঠীতে মাঝে কিছু পর্যটকের আনাগোনা হয়।
কলসকাঠী বাজার সংলগ্ন দুইবিঘা জমি নিয়ে জানকী বল্লভ রায় চৌধুরীর জমিদার বাড়িটি অযতœ-অবহেলায় কয়েক বছর যাবত ভুতুরে অবস্থা বিরাজ করছে। বাড়িটি ইট-সুরকী ও পোড়ামাটির কারুকার্যে ঘেরা। প্রবেশপথে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন মঠ ও সংস্কারের অভাবে বেশকিছু ভাঙ্গা মন্দির। পাশেই আছে শানবাঁধানো পুকুর। প্রতিবছর নভেম্বর এ বাড়িতে জগদ্বাত্রী পুজায় হাজার হাজার মানুষের আগমন ঘটে।

রোববার সকালে ৮জন শ্রমিক বাড়ির মুলভবন ভাঙ্গার কাজ শুরু করেন। শ্রমিকরা জানান, জমিদারের উত্তারাধিকরা তাদের ভবন ভাঙ্গার কাজে নিযুক্ত করেছেন।

জানা গেছে, ওই বাড়ির সর্বশেষ জমিদার রাজেস্বর রায় চৌধুরী মৃত্যুর পর উত্তারাধিকার সুত্রে মালিক হন তার বোন দেবী চৌধুরী। তিনি মারা যাওয়ার পর তার পুত্র বাবু চৌধুরী মালিক হন। তার মৃত্যুর পর স্ত্রী ববিতা মুখার্জী ও তিন পুত্র প্রীতম মুখার্জী, অপু মুখার্জী ও তপু মুখাজী মালিক দাবী করেন। এনিয়ে রাষ্ট্রপক্ষের সঙ্গে মামলা-মোকাদ্দমাও হয়।

প্রীতম মুখার্জী জানান, জমিদার বাড়িটি তাদের পূর্ব পুরুষের। রাষ্ট্রপক্ষের সঙ্গে মামলায় তাদের পক্ষে রায় হয়েছে। জরাজীর্ন বাড়িটি ভেঙ্গে পরবর্তীতে নতুন ভবন নির্মান করবেন। তাই পুরান ভবনটি ভাঙ্গার জন্য তারাই শ্রমিক নিয়োগ করেছেন।

কলসকাঠী ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ফয়সাল আহমেদ মুন্না বলেন, জমিদার রাজেস্বর রায় চৌধুরীর উত্তরাধীকার দাবী করে প্রীতম মুখার্জীর পরিবার কলসকাঠী, পটুয়াখালী ও কুয়াকাটা পর্যন্ত মোট ৩৯৬ একর জমির মালিকানা দাবী করে আসছেন। তারা মামলায় জিতেছেন কি-না তাও কেউ জানেন না। রোববার এলাকার ঐতিহ্য জমিদার ভবন ভাঙ্গার কাজ শুরু করলে স্থানীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। তিনি বিষয়টি তাৎক্ষনিক ইউএনকে জানান।
কলসকাঠী ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মো. বাদশা কলসকাঠী জমিদর বাড়ি দক্ষিণাঞ্চলের ইতিহাস। এলাকাবাসীর গৌরব। এই ইতিহাসটুকু যাতে বিলুপ্ত না হয়, তাই বাড়িটি রক্ষা করে পর্যটকদের জন্য সংরক্ষন করার জন্য সরকারের প্রতি দাবী জানাচ্ছি।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সজল চন্দ্র শীল বলেন, জমিদার বাড়ির ভবন ভাঙ্গার খবর পেয়ে তিনি কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। বাড়ির মালিকানা দাবীদারদের কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত দেয়া হবে।##

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *